ফুটবল-ইতিহাসের বিচিত্র যত তথ্য
টবলকে 'গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' ঘোষণার অগণিত কারণ বিদ্যমান। একমাত্র এই চর্মগোলককেন্দ্রিক খেলাটিই ব্রাতিসলাভার গ্রামের রাস্তায়, তেহরানের পাথুরে সড়কে, বাহিয়ার খোলা সমুদ্র্রসৈকতে, আবিদজানের কেটে ফেলা জঙ্গলের পরিষ্কার মাঠে এমনকি তিব্বতের পাহাড়ের পাদদেশে খেলা হয়ে থাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে। ফুটবলের বিভিন্ন সংস্করণ ঘাসে, সমুদ্রসৈকতে, শক্ত কেঠো জায়গা, অ্যাসফল্ট এবং এমনকি বরফেও খেলা হয়েছে।
হাতিদের ফুটবল খেলানো হয়েছে; একদিন রোবোটদেরও টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। জার্মানির এক পুলে, ২০০৬ বিশ্বকাপ উৎসব উপলক্ষে ভারসাম্যের জন্য ওজনসহ খেলেছিলেন খেলোয়াড়েরা ভারী বলে। আমাদের জানা পৃথিবীর বাইরে ফুটবল অনুষ্ঠান সময়ের ব্যাপার মাত্র। কেননা, ইতিহাস বলে ঘোড়দৌড় হচ্ছে রাজাদের খেলা এবং ফুটবল আমজনতার।
গৃহহীন মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা বলা যাক। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে আঠারোটি দল প্রথম গৃহহীন বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল। শহরের দুটি প্রধান কেন্দ্রে সাত দিনজুড়ে এই টুর্নামেন্টের উদযাপন ঘটে। তিনজন স্ট্রাইকার, একজন গোলকিপার নিয়ে দশজনের একেকটা দল গঠন করেছিলেন টিনেজার থেকে মধ্য-পঞ্চাশের ক্রীড়া আগ্রহীরা মিলে। নারী-পুরুষ সকলেই ছিলেন, মূলত বিনাঘর মানুষ তারা। মাঠ ঘেরা ছিল হকি-স্টাইলের ড্যাশার বোর্ডে, দুই পাশে দুই ছোট গোলপোস্ট। ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক অব স্ট্রিট পেপার্স ছিল পৃষ্ঠপোষক। এটি গ্রামের গৃহহীনদের পত্রিকার আয়োজন। দাতব্য সংস্থা কারিতাস তাদের এই আয়োজনে সাহায্য করে। খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং তারা যে সমাজের অংশ, এই বোধ তৈরি করাই এমন আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য।
দুনিয়াজুড়ে এই ঘরহীন মানুষদের প্রিয় পত্রিকাগুলোর সম্পাদকেরা দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে এক বৈঠকে এই প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন। এই প্লেয়ারদের নব্বই শতাংশের বেশি পরবর্তী সময়ে নানা কাজকর্মে যুক্ত হয়ে জীবন ও জীবিকার মূল স্রোতে ফিরে আসেন। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ পাঁচ শর বেশি খেলোয়াড়কে আকৃষ্ট করে। ছাপান্নটি দল অংশ নেয়, যার আটটিই সম্পূর্ণ নারী সদস্যদের নিয়ে নির্মিত। পাঁচটি বহুরঙা নুড়ি আমরা এখন ফুটবল ইতিহাসের সমুদ্র থেকে কুড়িয়ে নেব।
কারাবন্দীদের বিশ্বকাপ
থাইল্যান্ডে কারাবন্দীদের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। ফরাসীদের এক দল ৭-৬ গোলে পেনাল্টি কিকে হারায় নাইজেরিয়ানদের, থাইল্যান্ডে তেরোশ বিদেশি কারাবন্দীদের থাকবার ওই বন্দিশালায়। ইতালি, ইংল্যান্ড, জার্মানি এই আট প্রতিনিধিদলের মধ্যে অন্যতম। বিজয়ীরা নতুন সাবান আর টুথব্রাশ পেয়েছিলেন। সুইডেন-আইভরি কোস্ট খেলা অনুষ্ঠিত হয় আর্জেন্টাইন প্রিজন ফাইনালে, কূটনীতিবিদ এবং শতাধিক নিরাপত্তারক্ষীর উপস্থিতিতে, সিউদাদ দে লা প্লাতা স্টেডিয়ামে।
বুয়েনস এইরেসের বত্রিশটা কারাগারের প্রত্যেকে ২০০৬ বিশ্বকাপ ফাইনালিস্টের দলের একেক নাম গ্রহণ করে এবং তিন মাস ধরে ক্রীড়াযুদ্ধ চালিয়ে যায়। 'সুইডেন' নাম গ্রহণ করা ইউনিদাদ পেনাল দে ট্যাম্পানা কারাগার, মার দে প্লাতা কারাগারের 'আইভরিয়ান' নাম ধারণ করা খেলোয়াড়দের ২-০ গোলে হারায় এবং সুইডেন ফেয়ার প্লে প্রাইজ পায়।
বরফের মাঠ
তিনটি আইসব্রেকারের বিজ্ঞানীরা ২০০৩ সালে ফুটবল খেলার সিদ্ধান্ত নিলেন। উত্তর মেরু থেকে তিনশ মাইল দূরের মাইনাস এক তাপমাত্রার কুয়াশায় আচ্ছন্ন মেরু ভালুককবলিত এলাকায় নোঙর করা আইসব্রেকারের অধিবাসীরা নিজেদের মনোটনি কাটাতে এই সিদ্ধান্ত নেন।
বিশ মিনিটের তিনটে খেলা অনুষ্ঠিত হয় হিলি (আমেরিকা), ওডেন (সুইডেন) এবং পোলারস্টের্নের (জার্মানি) মধ্যে। একজন মিটিওরোলজিস্ট এবং সনদপ্রাপ্ত রেফারি, জার্মানির হিলগার এর্ডম্যান মাঠের বরফের পুরুত্ব পরীক্ষা করেছিলেন। পঞ্চাশ গজ বাই পঁচিশ গজ নির্ধারিত হয় বরফমাঠের আয়তন। প্রহরী নিযুক্ত হয়েছিল মেরু ভালুকদের ঠেকাতে।
জার্মান জাহাজ পোলারস্টের্ন, সুইডিশ ওডেনকে হারায়। হিলি পাত্তা পায়নি। ছয় বছর আগে রাশিয়ার আটজনের এক অ্যামেচার দল উত্তর মেরুতে এক টুর্নামেন্টের আয়োজন করে। পৃথিবীর চূড়ায় ফুটবল আয়োজনের প্রথম উদাহরণ। বিয়ুসার এক রেফ্রিজারেটর প্ল্যান্টের প্রতিনিধিদল এই প্রতিযোগিতা জেতে।
সমুদ্রে ফুটবল
সমুদ্রেও ফুটবল আয়োজিত হয়েছিল। 'দ্য সেভেন সিজ ফুটবল সিরিজ' সারা দুনিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী জাহাজের টিম একত্র করে বার্ষিক বিশ্ব নটিক্যাল চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজন করে।
মধ্য-সত্তরের এক টুর্নামেন্ট ৯৭৫টি জাহাজকে আকর্ষণ করে। ১৩৩ জাহাজের ২০০৮ জন নাবিক তিনশো খেলায় অংশ নেয়। আসলে খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হয় সমুদ্রতীরে, জাহাজের ডেকে নয়। তবে এমন এলাহি আয়োজন সংশ্লিষ্টদের সাংগঠনিক দক্ষতার প্রমাণ দেয়।
অ্যাম্পুটি ওয়ার্ল্ডকাপ
একটি হাত বা পা নেই যাদের, তাদের নিয়ে অ্যাম্পুটি ফুটবল বিশ্বকাপের শিরোপা ও পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, সম্প্রতি কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়া লাতিন আমেরিকান দেশ ব্রাজিলের। ২০০০ সালের নভেম্বরে সিয়াটল শহরে তারা বিংশতম বার্ষিক অ্যাম্পুটি শিরোপায় অভিষিক্ত হয়।
মাঠের খেলোয়াড়েরা এক পায়ে ক্রাচ ব্যবহার করে খেলেন। ক্রাচটি ফুটবল ছুঁতে পারবে না, এটিই নিয়ম। গোলকিপাররা একটি হাত ব্যবহার করেছিলেন, কৃত্রিম হাতটি নয়। সেরেব্রাল পালসি, স্ট্রোক অথবা ট্রমাটিক ব্রেইন ইনজুরিতে ভোগা খেলোয়াড়দের নিয়ে যে প্যারালিম্পিক হয়, তাতেও তারা জেতে। এথেন্সের মাঠে সেমিফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে হারায়।
মাঠের ফড়িং
ঘাসফড়িং হলো গ্রাসহপার। তেমনি একধরনের মানুষ আছেন, যারা গ্রাউন্ডহপার। তারা ফুটবল উন্মাদ। ভুবনজুড়ে মাঠে মাঠে খেলা দেখে বেড়ান। ১৯৯১-২০০৩ সময়ে জার্মানির কার্লো ফারসাং ১০৪ দেশের ৮০০ স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে ১০৩৮টি ম্যাচ দেখেন।
জার্মান সহনাগরিক ফ্রাঞ্জ জ্যাসপারনেইট একটি বছরের ১৫০ দিনে ২১০টি খেলা দেখেন। তিনি আন্তর্জাতিক বিজনেস গ্র্যাজুয়েট, ক্যারিয়ার না গড়ে খেলা দেখে বেড়ান।
২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি তালিকাভুক্ত গ্রাউন্ডহপার শনাক্ত করা গেছে। অবশ্য এখনো ফিফা সদস্যভুক্ত ২০৪ ন্যাশনের সবার খেলা দেখা মানুষ মেলেনি। স্বয়ং সেপ ব্ল্যাটার, সাবেক ফিফা বস গ্রাউন্ডহপারদের শীর্ষে আছেন ১৮০টি দেশে খেলা দেখে।
আধুনিক ফুটবলের জন্ম ইংল্যান্ডে, আমরা জানি। আমেরিকা দেশটি কখনোই তেমনভাবে ফুটবল আগ্রহী ছিল না। যদিও আমেরিকান আদিবাসীদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় ফুটবল খেলতে দেখা যায়। তারও আগের কিছু পুরোনো ইতিহাসের দিকে এবার চোখ ফেরানো যাক।
ফুটবলের প্রাচীন ইতিহাস: সু চু বনাম কেমারি
১৬২০ সালে প্লাইমাউথ রকে তীর্থযাত্রীরা নোঙর ফেলার পর তারা দেখল, স্থানীয় আদিবাসী ইন্ডিয়ানরা পুসাককোয়াককোহৌগ (আলগা অনুবাদে: ফুটবল খেলতে জড়ো হওয়া) খেলছে। ভাটার সময় দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতে এই খেলা অনুষ্ঠিত হতো। পরে জানা যায়, এই সমুদ্রতীরের নাম কেপ কর্ড, লিন এবং ম্যাসাচুসেটসের রিভেরে।
খেলার মাঠ এক মাইল লম্বা আর আধ মাইল চওড়া। গোলপোস্ট দুইপাশে। হরিণের চামড়ার ভেতর হরিণের লোম ভরে এই বল নির্মিত। অনেকটা হ্যান্ডবলের সাইজ। ত্রিশ থেকে চল্লিশজন মানুষ দিনজুড়ে একটি খেলাই খেলত। আহত হতো প্রচুর। তাই রঙের প্রলেপ আর গয়নায় নিজেদের ঢেকে রাখত। নানারকম পশুর চামড়া ছিল বিজয়ীদের পুরস্কার। নতুন আসা মানুষেরা এই খেলাটি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ব্রিটিশ এলাকায় পরাজিত ড্যানিশ যুবরাজের মাথা দিয়ে অ্যাংলো স্যাক্সনদের ফুটবলজাতীয় খেলার বিবরণ মিথ হিসেবে নথিবদ্ধ আছে।
খ্রিষ্টের জন্মের আড়াই হাজার বছর আগে চীনের শ্যানডং প্রদেশে ফুটবলজাতীয় খেলা অনুষ্ঠিত হতো। একে কেউ কেউ চুজু-ও বলে থাকেন। পরবর্তী সময়ে সিন ডাইন্যাস্টির (২৫৫-২০৬ খ্রিষ্টপূর্ব) আমলে সু চু দেখার বিবরণ পাওয়া যায়। চীনের বিখ্যাত 'হলুদ সম্রাট' হুয়ান তির জন্মোৎসবে তার সামনে সবাই সু চু খেলে তাকে সম্মান জানান।
হান ডাইন্যাস্টির (২০৬-২২০ খ্রিষ্টপূর্ব) সময় এ খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি একজন সম্রাট হান উ দি এই খেলায় অংশ নেন। তাং ডাইন্যাস্টির (৬১৮- ৯০৬খিষ্টাব্দ) সময় এই খেলার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে; কারণ, তখন বাতাসভর্তি চামড়াগোলকের আর্বিভাব ঘটে। খেলাটি আবার জেগে ওঠে সং ডাইন্যাস্টি ( ৯৬০-১২৭৯ খিষ্টাব্দ) আমলে। ধনী চৈনিকদের মধ্যে দ্রুত ছড়ায় এর প্রচলন।
খেলার উদ্দেশ্য ছিল চামড়া বা ব্রোকেড সিল্কের বলকে ত্রিশ ফুট উচ্চতার দুটি বাঁশের মধ্যবর্তী এক ফুট ফাঁকায় প্রবেশ করানো। 'সু' অর্থ লাথি মারা আর 'চু' মানে বাতাসভর্তি বল। ছয়জনের দল খেলায় পা, বুক, পেছন, কাঁধ ব্যবহার করতে পারত। চীনা সেনাবাহিনী তাদের ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে সু চু খেলত।
দীর্ঘ যাত্রার পর ঘোড়সওয়ার সৈন্যদের বিনোদনের এক উপায় এই খেলা। কনফুসিয়ান পণ্ডিত লিউ শিন (৫০ খ্রিষ্টপূর্ব-২৩ খিষ্টাব্দ) তার সাত শিক্ষার একটিতে জানান, 'তাজু বিঙগামি' (ফুটবল সৈন্যদের যুদ্ধশক্তি বাড়ায়)। রাজকীয় দরবারের সামনে ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শনের আগে সু চু খেলোয়াড়দের ট্রেনিং হতো। এ কারণে তাদের প্রথম পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে গণ্য করা যায়। সু চু প্রতিষ্ঠানপ্রধান শহরগুলোতে প্রতিষ্ঠিত হয়। কি ইয়ুন শি অথবা ইউয়ান শি প্রথম ফুটবল ক্লাবের মর্যাদা পায়। মিং ডাইন্যাস্টির (১৩৬৮-১৬৪৪) সময়ে সু চুর প্রভাব কমে আসে। ক্রমে এ খেলা বিস্মৃত হয়ে যায়।
জাপানে কেমারি নিয়ে গিয়েছিলে চীনখ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতকে। ২০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কেমারিকে অনেকে কেনাটও বলে থাকেন। আটজন খেলোয়াড়ের দল বৃত্তাকৃতি হয়ে অবস্থান নেয় হরিণের চামড়ার বল নিয়ে। ৯ থেকে ১০ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের বল কাঠের গুঁড়োভর্তি। মাঠ স্পর্শ করতে পারবে না বলটি যতক্ষণ সম্ভব- এই ছিল নিয়ম। মাঠ বর্গাকৃতি। পাইন, ম্যাপল, উইলো বা চেরিপাতায় প্রতিটি কোনা চিহ্নিত থাকত।
রঙিন কিমোনো, মাথায় আনুষ্ঠানিক শিরোস্ত্রাণ আর বিশেষ জুতো পরে নামতেন আদি সেই খেলোয়াড়েরা। পনেরো ফুট দীর্ঘ যুগ্ম বাঁশের মধ্যবর্তী ফাঁকে বল প্রবেশের নৈপুণ্য প্রদর্শনে। কেমারি আসলে প্রতিযোগিতার চেয়েও বেশি উৎসবমুখরতার সম্মিলন।
পঞ্চাশ খ্রিষ্টপূর্বে, চীনা সু চু আর জাপানি কেমারি খেলোয়াড়দের এক দ্বৈরথের কথা অনেক ঐতিহাসিকেরা বলে থাকেন। সত্যতর অর্থে, এমন ঘটে থাকলে এটি ইতিহাসের প্রথম ফুটবল যুদ্ধ। কেমারি পরে কেমারি আসোবি নামে সামুরাইদের মধ্যে জনপ্রিয় হয় এডো যুগে ( ১৬০৩-১৪৬৭)। সাধারণ মানুষ, ধনী জমিমালিক সকলেই খেলতেন চৌদ্দ মিটার প্রস্থের মাঠে, বাইশ সেন্টিমিটার ব্যাসার্ধের বল নিয়ে। অজানা কারণে, মানুষ কেমারির প্রতি আগ্রহ হারায়। যদিও সম্রাট মেইজি কেমারি সংরক্ষণ সমিতি প্রতিষ্ঠা করে খেলাটি বাঁচিয়ে রাখেন। একে জাপানি দরবারি সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার এক প্রচেষ্টাই বলতে হবে।
ইতিহাস থেকে বর্তমানে ফিরি আমরা। আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস কোয়ার্টারফাইনালে রেফারি কর্তৃক অত্যধিক কার্ড প্রদর্শন বিতর্কিত রেফারিকে চলতি বচনে 'কার্ডবাবা' বানিয়ে দিয়েছে এই দেশে। জেনে অবাক লাগতে পারে, রাস্তার ট্র্যাফিক লাইটের জ্বলা-নেভা থেকে এই কার্ডের চিন্তা আসে।
১৯৬৬ সালে লন্ডনের এক চৌরাস্তায় দীর্ঘকালের ইংরেজ রেফারি কেন অ্যাস্টন গাড়িতে বসে ট্র্যাফিক আলোর জ্বলা-নেভা থেকে লাল-হলুদ কার্ডের কথা প্রথম ভাবেন। কেনসিংটন হাই স্ট্রিটে যাওয়ার পথে আলো জ্বলা-নেভা দেখে তার মাথায় 'ইউরেকা' মোমেন্টের আবির্ভাব।
ফুটবলের ইতিহাসেএমন অনেক অভাবনীয় মুহূর্ত, উত্তেজক মুহূর্ত আছে। উত্তেজনায় অধীর কোনো সমর্থক গোলের চকিত মুহূর্তে হয়তো জড়িয়ে ধরছেন সম্পূর্ণ অচেনা এক মানুষকে, তারা দুজনেই পৃথিবীতুতো ভাই। আপাতত এই লেখাটি যখন লিখছি, আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠেছে। চল্লিশোত্তর বয়সে তাদের বলা ভালো, মেসির হাতে কাপ দেখতে চাই। তারপরের সব কাপ সবাই ভাগ করে নিক, আমার নিজস্ব আপত্তি নেই। কারণ, আমরা সবাই পৃথিবীতুতো ভাইবোন।