লড়াইয়ের ঝাঁঝ নিয়েই শুরু হচ্ছে বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ
প্রস্তুতি, আয়োজন শেষ; এবার মাঠের লড়াইয়ের অপেক্ষা। লড়াই শুরুর আগেরদিন মিরপুর স্টেডিয়ামে একটু ভিন্ন আমেজই দেখা গেল। আন্তর্জাতিক সিরিজ বা টুর্নামেন্ট নয়, কিন্তু দলগুলোর অনুশীলন বলে দিচ্ছিল ঝাঁঝালো লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত সবাই। দীর্ঘদিন পর প্রতিযোগিতার আমেজে ম্যাচ খেলার রোমাঞ্চ নিয়ে শনিবার অনুশীলন করেছে তিন দল।
রোববার মাঠে গড়াচ্ছে তিন দলের একদিনের টুর্নামেন্ট বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপ। উদ্বোধনী ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ একাদশের মুখোমুখি হচ্ছে নাজমুল একাদশ। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বেলা দেড়টায়। করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় আট মাস পর মিরপুর স্টেডিয়ামে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নিয়মিত কোনো টুর্নামেন্ট না হলেও তিন দলের এই সিরিজটিকে আকর্ষণীয় করতে সব ধরনের চেষ্টাই করেছে বিসিবি। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচ শুরুর আগে রাখা হয়েছে ছোট্ট একটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বেলুন, পায়রা উড়িয়ে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করবেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। শনিবার তিন অধিনায়কের উপস্থিতিতে ট্রফি উন্মোচন করা হয়েছে।
ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ। ফাইনাল ম্যাচটি টেলেভিশনে সম্প্রচার করা হবে। এ ছাড়া অর্থেরও ঝনঝনানি থাকছে। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ১৫ লাখ টাকা। রানার্সআপ দলকে দেওয়া হবে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এর বাইরেও বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরিতে ক্রিকেটারদের আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে।
ম্যাচ সেরা পাবেন ৫০ হাজার টাকা। প্রতি ম্যাচের সেরা ব্যাটসম্যান, বোলার ও ফিল্ডারকে দেওয়া হবে ২৫ হাজার টাকা করে। ফাইনালের ম্যাচ সেরার পুরস্কার ১ লাখ টাকা। সিরিজ সেরা পাবেন ২ লাখ টাকা। সিরিজের সেরা ব্যাটসম্যান, বোলার ও ফিল্ডার পাবেন ১ লাখ টাকা করে। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্টে ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ করবে বিসিবি।
দীর্ঘদিন পর ক্রিকেট ফেরার রোমাঞ্চে সময় কাটছে তিন দলে ডাক পাওয়া ক্রিকেটারদের। প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে একটি দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্বে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেছেন, 'ভালো লাগছে, কারণ মাঠের মানুষ আমরা মাঠে ফিরছি। এতোদিন অনুশীলন করছিলাম, এখন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট শুরু হচ্ছে। খুবই ভালো লাগছে। কারণ দিনশেষে এটা আমাদের কাজ, আমাদের ভালোবাসার জায়গা। তো সেদিক থেকে ভালো লাগছে।'
নিজেদের মধ্যে হলেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই তার দল লড়বে বলে জানান মাহমুদউল্লাহ। তিনি বলেন, 'আশা আছে তো অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন হবার। তারচেয়েও বড় কথা যে, আমাদের দেশের সবচেয়ে উদীয়মান এবং অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে যদি বলি, সব দিক দিয়ে সেরা খেলোয়াড়রাই হয়তো এখানে খেলছে। এটা নিজেদের ভেতর একটা ভালো প্রতিযোগিতা আমাদের প্রমাণের জন্য।'
দল নিয়েও সন্তুষ্টির কথা জানান অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার, 'দল মাশাআল্লাহ খুব ভালো হয়েছে। টপ অর্ডার থেকে লেট মিডল অর্ডার, স্পিনিং সাইড, পেস বোলিং ইউনিটও খুব ভালো হয়েছে। সব মিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ দল।'
দারুণ একটি টুর্নামেন্ট খেলার আশায় আরেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। তরুণ এই ক্রিকেটার বলেন, 'অবশ্যই ভালো লাগছে। কখনও তো এতদিন মাঠের বাইরে থাকিনি। মাঠে এমন একটা সিরিজ শুরু হচ্ছে। অবশ্যই অনেক রোমাঞ্চিত। আশা করছি খুব ভালো একটা সিরিজ হবে। প্রতিটা দলই ভালো। অবশ্যই প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমাদের যে দল হয়েছে, আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলব। আশা করছি আমরা যদি স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারি, তাহলে ভালো কিছু হবে।'
দল নিয়ে সন্তুষ্টির কথা নাজমুলের মুখেও, 'সব মিলিয়ে আমাদের দল ভালো হয়েছে। তিনটা দলই খুব ভালো। আমাদের যেটা ইতিবাচক দিক, ফিল্ডিং বিভাগটা খুব ভালো যেহেতু দলে অনেক তরুণ। সঙ্গে বোলিং-ব্যাটিং তো আছেই। আশা করছি তিন বিভাগেই ভালো কিছু হবে।'
মুশফিকুর রহিমকে দলে পাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটাররের কাছ থেকে বড় কিছুরই আশা নাজমুলের, 'এটা অনেক বড় বিষয়। উনি দলে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। উনার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করি। আমরা সবাই জানি খেলার প্রতি উনার কতটা নিবেদন। আশা করি ভালো কিছুই হবে।'
একদিন বিরতির পর ১৩ অক্টোবর মাহমুদউল্লাহ একাদশের মুখোমুখি হবে তামিম একাদশ। তামিমের কণ্ঠেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়, 'যেহেতু টুর্নামেন্ট আর আমরা একটা দল, তাই চ্যাম্পিয়ন হওয়াই আমাদের ইচ্ছা। যেটা বললাম, ইচ্ছা তো সবারই থাকবে, কিন্তু দিনশেষে যে মাঠে ভালো খেলবে সেই জিতবে।'
এমন আয়োজনে দর্শকদের অনুপস্থিতি পোড়াচ্ছে তামিমকে। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক বলেন, 'দর্শকদের অবশ্যই মিস করব, কারণ সাধারণত আমরা এ রকম টুর্নামেন্ট খেলতে পারি না। আমাদের জাতীয় দলের ব্যস্ত সূচি থাকে, প্রিমিয়ারি লিগ খেলি। তবে তিনটি দল ভাগ হয়ে এমন ওয়ানডে টুর্নামেন্ট খুব কম হয়। দেশের পরিস্থিতি যদি ভালো হতো, অবশ্যই দর্শকরা খুব উপভোগ করত। যা শুনছি খেলাগুলো ফেসবুক ও ইউটিউবে দেখাবে। আশা করি দর্শকরা ঘরে বসে উপভোগ করবে।'
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তিন দলের জন্য আলাদা আলাদা কোচিং স্টাফ ঠিক করে দিয়েছে বিসিবি। মাহমুদউল্লাহ একাদশের প্রধান কোচ ওটিস গিবসন। সহকারী কোচ সাইফুল ইসলাম, ফিজিও জুলিয়ান কালেফাতো ও ট্রেনার নিক লি। ম্যানেজার হিসেবে থাকবেন নাসির আহমেদ।
তামিম একাদশের প্রধান কোচ রায়ান কুক, সহকারী কোচ মিজানুর রহমান, ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম, ট্রেনার ইফতেখারুল ইসলাম ও ম্যানেজার সাব্বির খান। নাজমুল একাদশের প্রধান কোচ জাফরুল এহসান, সহকারী কোচ গোলাম মুর্তজা, ফিজিও খাদেমুল ইসলাম, ট্রেনার তুষার কান্তি হাওলাদার ও ম্যানেজার জামাল উদ্দিন। এইচপির প্রধান কোচ টবি রেডফোর্ড দেশে ফিরে কোয়ারেন্টিন শেষ করে নাজমুল একাদশের প্রধান কোচের দায়িত্ব নেবেন।
প্রতিটি দল একে অপরের বিপক্ষে ২টি করে ম্যাচ খেলবে। লিগ পর্বে ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সেরা দুই দল ফাইনাল খেলবে। ২৩ অক্টোবরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। একদিন পরপর ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে, রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে।