সুনীল ছেত্রীর কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ
ম্যাচ শুরুর পর থেকেই ভারতের অবিরত আক্রমণ। আধিপত্য বিস্তার করে বাংলাদেশের রক্ষণভাগ কাঁপিয়ে যাচ্ছিল সুনীল ছেত্রীর দল। কখনও ভাগ্যের সহায়তায়, কখনও রক্ষভাগের কৃতিত্বে নিজেদের জাল অক্ষত রাখা গেছে অনেকটা সময়। কিন্তু দারুণ ফুটবল খেলা ভারত ও সুনীল ছেত্রীকে শেষ পর্যন্ত রোখা যায়নি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে এক পয়েন্ট পেলেও ভারতের বিপক্ষে হার মেনে নিতে হলো জেমি ডের শিষ্যদের।
কাতারের জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে স্টেডিয়ামে সোমবার ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের খেলায় ভারতের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষে দুটি গোলই করেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। আগের লেগে কলকাতার সল্ট লেকে ভারতের বিপক্ষে ড্র করেছিল জামাল ভূঁইয়ার দল। বাছাই পর্বে ওটাই ছিল বাংলাদেশের প্রথম পয়েন্ট। আগামী ১৫ জুন এই মাঠেই ওমানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই বাংলাদেশের রক্ষণভাগে হানা দিতে শুরু করে ভারত। যদিও প্রথম পরিস্কার আক্রমণটি বাংলাদেশই করে। কিন্তু দারুণ এক ক্রসে ডি-বক্সের মধ্যে বল পেয়েও বাংলাদেশের কেউ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। এরপর শুরু হয় ভারতের অবিরত আক্রমণ। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা সময় ভারতের আক্রমণ ফেরাতেই ব্যস্ত থাকতে হয় বাংলাদেশকে।
১৫তম মিনিটে পিছিয়ে পড়তে পারতো বাংলাদেশ। সতীর্থর লম্বা করে বাড়ানো পাস খুঁজে নেয় ভারতের ফরোয়ার্ড মানবীর সিংকে। তার সামনে কেবল তখন বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। ডি-বক্সে ঢুকে বেশি সময় নিয়ে ফেলায় জিকোর বাধায় পিছু হটতে হয় মানবীরকে। পরে মানিক মিয়া দলকে বিপমুক্ত করেন।
তিন মিনিট পর আবারও বাংলাদেশের রক্ষণভাগে হানা দেয় সুনীল ছেত্রীর দল। বাংলাদেশের ডি-বক্সে বল পেয়ে যান ভারতের মিড ফিল্ডার সুরেশ সিং ওয়াংজাম। বল পেয়েই বা পায়ে শট নেন তিনি। কিন্তু তার শটে বেগ না থাকায় সহজেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন জিকো।
৩৫তম মিনিটে নিশ্চিত গোল হজমের মুখ থেকে ফিরে আসে বাংলাদেশ। সাজানো আক্রমণে দারুণ এক ক্রসে হেড নেন ভারতের সেন্টার ব্যাক চিনগ্লেনসানা সিং। জিকো তখন বল থেকে বেশ দূরে। সানা সিংয়েরে হেড জড়িয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের জালে। দেবদূত হয়ে হাজির হওয়া বাংলাদেশ ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান রাফি কর্নারের বিনিময়ে দলকে এ যাত্রায় রক্ষা করেন।
৩৮তম মিনিটে বাংলাদেশের আক্রমণ। ডি বক্সে ঢুকে শট নেন বাংলাদেশ উইঙ্গার মতিন মিয়া। কিন্তু সন্দেশ ঝিঙ্গান বাধায় বল ঠিকানা খুঁজে পায়নি। ভারতের এই সেন্টার ব্যাক থ্রো-ইনের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে কোনো দলই আর পরিস্কার আক্রমণ সাজাতে পারেনি।
বিরতির পরও কোনো দল সেভাবে আক্রমণ সাজাতে পারছিল না। ভারতের গতিও যেন কিছুটা ঝিমিয়ে আসে। ৫৫তম মিনিটে গিয়ে আক্রমণ করে ভারত। যদিও তাদের এই আক্রমণ সামলে নিতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি আফগানিস্তানের বিপক্ষে গোল করে বাংলাদেশকে এক পয়েন্ট এনে দেওয়া রক্ষণভাগের খেলোয়াড় তপু বর্মণ।
৬৩তম মিনিটে ফ্রি কিক পায় ভারত। লম্বা ফ্রি কিকে মাথাও ছোঁয়ান সুনীল ছেত্রী। কিন্তু ভারত ফরোয়ার্ডের হেড গোল পোস্টের অনেকটা দূর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৭১তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ভারতের অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডার ব্র্যান্ড ফার্নান্দেসের শট গোল পোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়। ৭৩তম মিনিটে কর্নার শটে হেড নেন সুবাশীষ বোস। কিন্তু ভারতের লেফট ব্যাকের হেড বার ঘেষে বেরিয়ে যায়।
৭৬ মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ। কিন্তু তাতে কোনো ফায়দা হয়নি। গোলের নূন্যতম সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। উল্টো কয়েকি মিনিট পর পিছিয়ে পড়তে হয়। অবিরত আক্রমণের ফল ৭৯তম মিনিটে পেয়ে যায় ভারত।
বিপিন সিংয়ের বাড়ানো দারুণ এক ক্রসে হেড নিয়ে বাংলাদেশের জালে বল জড়িয়ে দেন সুনীল ছেত্রী। স্বস্তির গোলে এগিয়ে যাওয়া ভারতের শেষটা আরও মধুর। যোগ করা সময়ে (৯৩তম মিনিটে) ডি-বক্সে বল পেয়ে প্লেসিং শটে দল ও নিজের দ্বিতীয় গোলটি আদায় করে নেন ভারত অধিনায়ক।