হোয়াইটওয়াশ করতে নেমে ধরাশায়ী বাংলাদেশ
দুশমন্থ হয়ে উঠলেন দুশমন। শ্রীলঙ্কার পেসার দুশমন্থ চামিরাকে সামলাতেই দিশেহারা হয়ে উঠলো বাংলাদেশ। জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দুঃস্বপ্নের শুরু করা বাংলাদেশ একবারের জন্য জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারলো না। পুরো ইনিংসে ধুঁকে ধুঁকে ব্যাটিং করে শেষ পর্যন্ত বিশাল হার। শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে মাঠে নেমে তামিম ইকবালের দলই ধরাশায়ী।
শুক্রবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে লক্ষ্যের কাছাকাছি জায়গাতেও যাওয়া হয়নি বাংলাদেশের। উল্টো অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়া বাংলাদেশই শেষ ম্যাচে হারলো ৯৭ রানের বড় ব্যবধানে। হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ নেওয়া তো হলোই না, খোয়াতে হলো ওয়ানডে সুপার লিগের ১০ পয়েন্ট। এই হারের পরও সুপার লিগের শীর্ষে আছে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে ৩৩ রানে ও দ্বিতীয় ম্যাচে ১০৩ রানে জেতা বাংলাদেশকে এদিন পাত্তাই দেয়নি শ্রীলঙ্কা। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে সফরকারীরা। মিস ফিল্ডিংয়ে আবারও ভুগতে দেখা যায় বাংলাদেশকে। তিনবার জীবন পেয়ে ১২০ রানের ইনিংস খেলেন লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরা। পরে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অপরাজিত ৫৫ রানে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান তোলে শ্রীলঙ্কা।
জবাবে শুরু থেকেই বাংলাদেশকে চেপে ধরেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা চামিরা। শুরুর তিন উইকেট নিয়ে তামিম ইকবালের দলকে দিকহারা করে দেন ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা এই পেসার। হাফ সেঞ্চুরি করা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের ইনিংস কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। ৪২.৩ ওভারেই বাংলাদেশের ইনিংস থেমে যায় ১৮৯ রানে।
২৮৬ রান পাড়ি দিতে বাংলাদেশকে রেকর্ড গড়তে হতো। লঙ্কানদের বিপক্ষে এতো রান তাড়া করে কখনই জেতেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া ২১৩, বগুড়ায় ২০০৬ সালে। দলটির বিপক্ষে এরচেয়ে কম রানও তাড়া করতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে মিরপুরে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ২২২ রানের জবাবে ১৪৩ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে মিরপুরে ১৮১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছিল ১৬৭ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমেই চামিরার আগুনে বোলিংয়ের মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। দলীয় ৯ রানের মধ্যেই নাঈম শেখ ও সাকিব আল হাসানকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই পেসার। তামিম ধীর স্থিরভাবে চেষ্টা করেও দলের ইনিংস গোছাতে পারেননি। চামিরার তৃতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৭ রান করেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
ভাঙনে আবারও মুশফিকুর রহিমের ওপর দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের নায়ক মুশফিক এদিন দলকে টানতে পারেননি। প্রথম দুই ম্যাচের ইনিংসে সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ২৮ রান করে থামেন। এরআগে মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন তিনি।
এরপর যতটুকু লড়াই, পুরোটাই মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি করা মোসাদ্দেক ৭০ বলে ৩টি চার ও এক ছক্কায় ৫১ রান করেন। ২৫তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া মাহমুদউল্লাহ ৬৩ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫৩ রান করেন। আফিফ হোসেন করেন ১৬ রান। ৯ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় ৫ উইকেট নেন চামিরা। ২টি করে উইকেট নেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ও অভিষিক্ত রমেশ মেন্ডিস।
এরআগে ২৮৬ রান তোলার পথে শ্রীলঙ্কার নেতৃত্বে ছিলেন অধিনায়ক কুশল পেরেরা। বাঁহাতি এই ওপেনার ১২২ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ১২০ রানের দারুণ একটি ইনিংস খেলেন। যদিও ৬৬ রান করেই থামতে পারতেন তিনি। কিন্তু মুস্তাফিজর রহমান তার তোলা ক্যাচ নিতে পারেননি। পরে আরও দুবার জীবন পেয়ে ১২২ বলে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় ১২০ রান করেন লঙ্কান অধিনায়ক।
দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশল পেরেরা দাপুটে শুরু করেন। ১১.২ ওভারেই উদ্বোধনী জুটিতে ৮২ রান যোগ করেন তারা। গুনাথিলাকা ৩৩ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৯ রান করে ফিরলেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যান কুশল। লঙ্কান অধিনায়কের পর শ্রীলঙ্কার ইনিংস টেনেছেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান হার না মানা ৫৫ রান করেন।
এ ছাড়া কুশল মেন্ডিস ২২ ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গা ১৮ রান করেন। ৪৬ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন তাসকিন। এই ম্যাচে ওয়ানডেতে ৫০ উইকেট পূর্ণ হয়েছে তার। তাসকিনের উইকেটসংখ্যা এখন ৫২টি। একটি উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৪৮ রান খরচায় উইকেটশূন্য থেকে গেছেন। যদিও দুটি উইকেট পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার বলে ওঠা ক্যাচ নিতে পারেননি মুস্তাফিজ ও আফিফ।