প্রিয় ফরম্যাটে জিতে সফরে প্রথম জয়ের স্বাদ
ফরম্যাটের সঙ্গে ভেন্যু বদলায়। এক শহর ছেড়ে যেতে হয় আরেক শহরে, উইকেটেও থাকে ভিন্নতা। কেবল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভাগ্যেই পরিবর্তন আসে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে হারই অমোঘ নিয়তি হয়ে ওঠে বাংলাদেশের জন্য। টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হওয়া দলটি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হারে। এরপরও খেলা ওয়ানডেতে বলে আশার কথা শোনান তামিম ইকবাল। একদিন পরে সেই আশার কথা বাস্তবে রূপ দিলো বাংলাদেশ দল।
ওয়ানডে আসতেই বদলে গেল বাংলাদেশ। প্রিয় ফরম্যাটে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম জয়ের স্বাদ নিলো সফরকারীরা। ঈদ উদযাপনের শেষ অংশটা জয়ে রাঙালো তামিম ইকবালের দল। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে রোববার রাতে গায়ানায় ক্যারিবীয়দের ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে আগামী ১৩ জুলাই গায়ানাতেই অনুষ্ঠিত হবে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজসহ বাংলাদেশের বাকি বোলারদের দারুণ বোলিংয়ে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বৃষ্টির কারণে ৪১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান তোলে তারা। জবাবে তামিমের দারুণ শুরুর পর নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে ৩১.৫ ওভারে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
৪১ ওভারে ১৫০ রানের লক্ষ্য, নিশ্চয়ই কঠিন পথ ছিল না। এরপরও বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দলীয় ৯ রানেই ফিরে যান টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজের ছায়া হয়ে থাকা লিটন কুমার দাস। শুরুতে উইকেট হারানোর চাপ অবশ্য বুঝতে হয়নি বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে তোলেন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
শান্ত ধীর স্থির থাকলেও তামিম মারকুটে ব্যাটিং করতে থাকেন। দ্রুত রান তুলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন তারা। অষ্টম ওভারে গিয়ে বাধে বিপত্তি। বল একটু দূরে ঠেলে দিয়েই রানের ডাক দেন শান্ত, সঙ্গী ডাকে সাড়া দিয়ে দৌড় শুরু করলেও নিরাপদে পৌঁছাতে পারেননি তামিম। ২৫ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রান করে রান আউট হন ওয়ানডে অধিনায়ক।
৭.৪ ওভারে ৪৯ রান করা দলকে এগিয়ে এগিয়ে নিতে শুরু করেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তৃতীয় উইকেটে ৪৯ রানের জুটি গড়ে দলকে ৯৮ রানে পৌঁছে দেন তারা। ৪৬ বলে ৫টি চারে ৩৭ রান করা শান্তর বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুব বেশি সময় টিকতে পারেননি, ৯ রান করে ফিরে যান তিনি।
নুরুল হাসান সোহানকে সঙ্গে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদউল্লাহ। ডানহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৬৯ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। সোহান অপরাজিত থাকেন ২০ রানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন, অভিষিক্ত গুডাকেশ মোটি ও নিকোলাস পুরান একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শাসন করেন বাংলাদেশের বোলাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ক্যারিবীয় ওপেনার শেই হোপকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। দ্বিতীয় উইকেটে চেষ্টা করেও জুটি বড় করতে পারেননি কাইল মেয়ার্স ও শেমার ব্রুকস।
বাংলাদেশের দারুণ বোলিংয়ের মুখে রান তোলার গতি ঝিমিয়ে পড়লেও দেখেশুনে খেলতে থাকেন তারা। কিন্তু দলীয় ৩২ রানে বিপদ বাড়ে ঘরের মাঠের দলটির। ২৭ বলে ২টি চারে ১০ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। এরপর যতো সময় গড়িয়েছে, ক্যারিবীয়দের চেপে ধরেছে বাংলাদেশ।
২১তম ওভারে গিয়ে স্বাগতিকদের দিক ভুলিয়ে দেন শরিফুল। টানা দুই বলে ব্র্যান্ডন কিং ও শেমার ব্রুকসকে ফিরিয়ে দেন তরুণ বাঁহাতি এই পেসার। কিং ৮ ও ব্রুকস ৬৬ বলে ৩টি চারে ইনিংস সেরা ৩৩ রান করেন। ২০.৫ ওভারে ক্যারিবীয়দের রান ছিল তখন মাত্র ৫৫ ছিল। এরপর রভম্যান পাওয়েল ৯ রান করেই মিরাজের শিকারে পরিণত হন।
সাবধানী শুরুর পর হাত খুলে ব্যাটিং শুরু করতেই সাজঘরে ফিরতে হয় অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ৩টি চারে ১৮ রান করে মিরাজের বলে বোল্ড হন। এরপর রোমারিও শেফার্ড ১৬ রান করেন। অ্যান্ডারসন ফিলিপ ২১ ও জেডেন সিলস ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন। শেষ উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৯ রানের জুটি গড়েন তারা।
শরিফুল ৮ ওভারে ৩৪ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। ১১তম ওয়ানডে খেলতে নামা বাঁহাতি এই পেসারের এটাই ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৯ ওভারে ৩৬ রানে ৩ উইকেট নেন মিরাজ। একটি উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। নাসুম ও তাসকিন দারুণ বোলিং করলেও কোনো উইকেট পাননি।