ভারতকে খাদের কিনারে পাঠিয়ে ফাইনালে এক পা শ্রীলঙ্কার
সামনে সহজ সমীকরণ থাকলেও কাজটা কঠিন ছিল। হারলে এশিয়া কাপ থেকে বিদায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে; তাই চাপের বোঝা মাথায় নিয়েই শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হতে হয় ভারতকে। ব্যাটিংটা মনপুত না হলেও মেলে লড়াকু পূঁজি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের দাপুটে ব্যাটিংয়েই যেন সব আশা শেষ ভারতের।
সেখান থেকে আশার আলো জ্বালেন যুজবেন্দ্র চাহাল, সুর মেলান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। খেলায় ফেরে ভারত। কিন্তু অবস্থা দ্রুতই পাল্টে যায় ভানুকা রাজাপাকশে ও লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকার খুনে ব্যাটিংয়ে। তবু শেষভাগে চলে আশা-নিরাশার দোলাচল। রাজাপাকশে-শানাকার ব্যাটে শেষ ওভারে গিয়ে জয়ের হাসি ওঠে লঙ্কানদের মুখে। মঙ্গলবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সুপার ফোরে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা।
সুপার ফোরে এটা শ্রীলঙ্কার টানা দ্বিতীয় জয়। এই জয়ে ফাইনাল অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেল দারুণ ছন্দে থাকা দলটির। ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে শানাকার দল। অন্যদিকে টানা দুই হারে বিদায় প্রায় নিশ্চিত ভারতের। বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেই ফাইনালে উঠে যাবে পাকিস্তান। ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কারও।
পাকিস্তান জিতলে বাদ পড়ে যাবে ভারত ও আফগানিস্তান। আফগানদের বিপক্ষে পাকিস্তান হারলেই কেবল আশা বেঁচে থাকবে ভারতের। এরপর সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের হারের অপেক্ষায় থাকতে হবে রোহিত-কোহলিদের। এরপরও থাকবে রান রেটের সমীকরণ। সব মিলিয়ে কার্যত ফাইনালের আশা শেষ হয়ে গেল ভারতের।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ভালো শুরু করতে না পারলেও দলকে ঠিক পথে রাখেন দারুণ ইনিংস খেলা ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। এরপর সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ঋষভ পন্ত, রবিচন্দ্রনদের ব্যাটে ৮ উইকেটে ১৭৩ রান তোলে ভারত। জবাবে উদ্বোধনী জুটি থেকেই জয়ের ভিত পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। মাঝে দিক হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে গেলেও এক বল বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কাকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন রাজাপাকশে ও ম্যাচসেরা শানাকা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন নিসাঙ্কা ও কুশল। উদ্বোধনী জুটিতে ১১ ওভারে ৯৭ রান যোগ করেন এ দুজন। দাপুটে শুরুতেই লঙ্কানদের কাছে জয় কাছেই মনে হচ্ছিল তখন। কিন্তু এমন সময়ই বাধে বিপত্তি। মাত্র ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে তারা। একে একে ফিরে যান নিসাঙ্কা, চারিথ আসালাঙ্কা, দানুসকা গুনাথিলাকা ও কুশল।
লঙ্কানরে সাজানো সংসারে আগুন জ্বালেন যুজবেন্দ্র চাহালার। ভারতের এই লেগ স্পিনার ১২তম ওভারে ফেরান নিসাঙ্কা ও আসালাঙ্কাকে। ফেরার আগে ৩৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন নিসাঙ্কা। হঠাৎ দিক হারানো শ্রীলঙ্কার চাপ আরও বাড়ান রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দলীয় ১১০ রানে তার শিকার গুনাথিলাকা। দুই বল পর আবারও চাহাল জাদু। এবার তার শিকার ৩৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫৭ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলা কুশল মেন্ডিস।
দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে ঘোর সঙ্কটে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। যদিও দলকে কোনো চাপই বুঝতে দেননি রাজাপাকশে ও শানাকা। দ্রুত উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৩৪ বলে ৬৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন এ দুজন। বল হাতেও অবদান রাখা শানাকা ১৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। রাজাপাকশে ১৭ বলে ২টি ছক্কায় ২৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। ভারতের চাহাল ৩টি ও অশ্বিন একটি উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা ভারতের শুরুটা হয় চরম অগোছালোভাবে। দলীয় ১৩ রানের মধ্যেই ফিরে যান ওপেনার লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলি। শুরুতেই হোঁচট খাওয়া দলকে অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই কক্ষপথে ফেরান রোহিত শর্মা ও সূর্য কুমার যাদব। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। এই জুটিতে ১২.১ ওভারে ১১০ রানে পৌঁছে যায় ভারত।
রোহিতের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ডানহাতি এই ওপেনার ৪১ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৭২ রানের ছলমলে ইনিংস খেলেন। তার বিদায়ে রান তোলার গতিতে ভাটা পড়ে ভারতের। পরের ব্যাটসম্যানরা সেভাবে ব্যাট চালিয়ে সংগ্রহ বড় করতে পারেননি। সূর্যকুমার ৩৪ এবং হার্দিক ও পন্ত ১৭ রান করে করেন। শেষ দিকে অপরাজিত ১৫ রান করেন অশ্বিন। শ্রীলঙ্কার দিলশান মাধুশাঙ্কা ৩টি এবং চামিকা করুনারত্নে ও দাসুন শানাকা ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান মাহেশ থিকশানা।