শামির তোপে শ্রীলঙ্কাকে গুঁড়িয়ে সেমিতে ভারত
শ্রীলঙ্কার ইনিংসে আঘাত হেনে শুরুটা করে দিলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। এরপর মোহাম্মদ সিরাজের দাপট শুরু, ডানহাতি এই পেসার একাই ধসিয়ে দিলেন লঙ্কানদের ইনিংস। পরে উইকেট উদযাপনের পর্বে যোগ দিলেন অসাধারণ বোলিং করা মোহাম্মদ শামি। ভারতের এই তিন পেসারকে সামলাতে দিশেহারা শ্রীলঙ্কার ইনিংসে হলো উইকেট বৃষ্টি। ব্যাটসম্যানদের শূন্য আর একের ছড়াছড়িতে অল্পতেই শেষ তাদের ইনিংস, চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় মেনে নিতে হলো বিশাল এক হার।
বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত। রানের হিসাবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা দ্বিতীয় বড় জয়, সর্বোচ্চ জয় অস্ট্রেলিয়ার ৩০৯ রানে। রানের হিসেবে বিশ্বকাপে এটা ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। ওয়ানডে ইতিহাসে এটা চতুর্থ বড় জয়, ভারতের দ্বিতীয়। বিশাল এই জয়ে সবার আগে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল সাত ম্যাচের সবগুলোতে জেতা আয়োজকরা। সাত ম্যাচের ৫টিতে হারা শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ থেকে কার্যত বিদায় ঘণ্টা বেজে গেল।
টস হেরে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় লঙ্কনরা, এই সিদ্ধান্তই যেন কাল হয় তাদের জন্য। শুভমান গিল ও বিরাট কোহলির দারুণ ব্যাটিংয়ের পর ঝড় তোলেন শ্রেয়াস আইয়ার। শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিং করেন রবীন্দ্র জাদেজাও। এই চার ব্যাটসম্যানের ব্যাটে ৮ উইকেটে ৩৫৭ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ভারত। জবাবে বিশ্বকাপে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়া শামি ও সিরাজের আগুনে বোলিংয়ে ১৯.৪ ওভারে ৫৫ রানেই গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটা চতুর্থ সর্বনিম্ন স্কোর এবং শ্রীলঙ্কার সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। দুঃস্বপ্নের এই ইনিংসে তাদের মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পেরেছেন। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ ১৪, বাকি দুজন করেন ১২ রান করে। দলটির পাঁচজন ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খুলতে পারেননি, বাকি তিন জনের একজন ৫ ও দুজন ১ রান করে করেন। গত এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ৫০ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। সেই ম্যাচে ৬ উইকেট নেন সিরাজ, এবার ৫ উইকেট নিয়ে লঙ্কানদের দিক ভুলিয়ে দিলেন শামি।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শূন্য রানেই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। বুমরাহর এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে আউট হন নিসাঙ্কা। এরপর সিরাজের কাঁপিয়ে দেওয়া বোলিং, ৩ রানের মধ্যেই দিমুথ করুনারত্নে, সাদিরা সামারাবিক্রমা ও কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দেন ভারতের ডানহাতি এই পেসার। ৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা তখন দিশেহারা। কিছুক্ষণ পরই তোপ দাগেন ম্যাচসেরা শামি, তার প্রথম শিকার চারিথ আসালাঙ্কা।
প্রথম উইকেট নিয়ে আগুনে বোলিং করতে থাকেন এবারের বিশ্বকাপের সর্বশেষ তিন ম্যাচে দুবার ৫ উইকেট নেওয়া ভারতের এই পেসার। ২৯ রানের মধ্যেই আরও ৩টি উইকেট তুলে নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার ইনিংসের ১৮তম ওভারে আরও একটি উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক হয়ে যান শামি। বিশ্ব আসরে ১৪ ম্যাচে তার উইকেট এখন ৪৫টি। আজ তিনি পেছনে ফেলেছেন ভারতের পক্ষে ৪৪ উইকেটের মালিক জহির খান ও জাভাগাল শ্রীনাথকে। এতোদিন ভারতের পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ডটি তাদের দখলে ছিল।
নবম উইকেট জুটি থেকে সর্বোচ্চ ২০ রান পায় শ্রীলঙ্কা। চারিথ আসালাঙ্কা ও মাহিশ থিকশানা এই জুটি না গড়লে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ গড়ার অস্বস্তিতে পড়তে পারতো তারা। সর্বোচ্চ ১৪ রান করেন রাজিথা। ১২ রান করে করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও থিকশানা। ৫ ওভারে ১৮ রানে ৫টি উইকেট নেন শামি, এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। সর্বশেষ তিন ম্যাচে ১৪ উইকেট নিলেন তিনি। ৭ ওভারে ১৬ রানে ৩টি উইকেট নেন সিরাজ। একটি করে উইকেট পান বুমরাহ ও জাদেজা।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা ভারত শুরুতেই অধিনায়ক রোহিতকে হারায়। শুরুর চাপ কাটিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৯ রানের জুটি গড়েন শুভমান ও কোহলি। ৩০তম ওভারে শুভমানের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ফেরার আগে ৯২ বলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯২ রান করেন তিনি। ৩ রান পর কোহলিও থামেন। বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান ৯৪ বলে ১১টি চারে ৮৮ রান করেন। এই ইনিংস দিয়ে শচিন টেন্ডুলকারের একটি রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন কোহলি।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ওয়ানডেতে ৭ বার এক বছরে ১ হাজার করেছেন শচিন। তাকে ছাড়িয়ে অষ্টমবারের মতো বছরে হাজার রান পূর্ণ করলেন কোহলি। রান তোলার গতি কম থাকলেও শ্রেয়াসের ব্যাটে ভারত এগিয়ে যায়। ৫৬ বলে ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৮২ রানের খুনে ইনিংস খেলেন তিনি। ২৪ বলে ৩৫ রান করেন জাদেজা। এ ছাড়া লোকেশ রাহুল ২১ ও সুর্যকুমার যাদব ১২ রান করেন। ১০ ওভারে ৮০ রানে ৫টি উইকেট নেন দিলশান মাদুশঙ্কা। একটি উইকেট পান দুশমন্ত চামিরা।