বাঁচা-মরার ম্যাচে মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা, কী আছে মেসিদের ভাগ্যে?
'ডু অর ডাই'- অর্থাৎ, করো, নয় মরো। কথাটির অর্থ সবারই জানা। তাৎপর্যটাও খুব সোজা। তবে এই মুহূর্তে কথাটির মাহাত্ম্য সবচেয়ে ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারবে আর্জেন্টিনা। হট ফেবারিট হিসেবে কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশটিরই দিশেহারা অবস্থা। দ্বিতীয় রাউন্ডই লিওনেল মেসির দলের জন্য হয়ে উঠেছে 'বিশেষ' লক্ষ্য।
অথচ এই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে কতো আলোচনা। দলটি সব বিভাগে ভারসামপূর্ণ, দলের বোঝাপড়াও দারুণ। সেটার প্রতিফলন মাঠেই দেখা গেছে। তিন বছর ধরে ৩৬ ম্যাচে হারেনি তারা। কিন্তু বুক ফুলিয়ে বিশ্বকাপ অংশ নিয়ে শুরুতেই তারা চুপসে গেছে সৌদি আরবের বিপক্ষে হারে। শেষ ষোলোর টিকেট কাটতে গ্রুপ পর্বের পরের দুই ম্যাচে জয়ের বিকল্প নেই লিওনেল স্কালোনির দলের।
হারলেই বিদায় ঘণ্টা বেজে যেতে পারে। সেদিক থেকে বাকি দুই ম্যাচই আর্জেন্টিনার জন্য অগ্নিপরীক্ষার। এই পরীক্ষার শুরুতে মেক্সিকোর বিপক্ষে মাঠে নামছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। টিকে থাকার লড়াইয়ে বাংলাদেশ সময় আজ রাত একটায় লুসাইল স্টেডিয়ামে শুরু হবে। মেসিদের পরের ম্যাচটি পোল্যান্ডের বিপক্ষে।
'সি' গ্রুপে সবার উপরে সৌদি আরব। মেসিদের হারিয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। ড্র করা পোল্যান্ড এবং মেক্সিকো যথাক্রমে দুই ও তিন নম্বরে। হারে শুরু করা আর্জেন্টিনা তলানিতে। আরেকটি ম্যাচে জিতলেই সৌদির শেষ ষোলো নিশ্চিত হতে পারে। তখন লড়াইটা হবে পোল্যান্ড, মেক্সিকো ও আর্জেন্টিনার মধ্যে।
এ পথে জয় ছাড়া কিছুই ভাবছেন না মেসি, ভাবার সুযোগই যে নেই। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক বলেছেন, 'আমাদের জিততে হবে অথবা জিততে হবে।' 'অপশন' যে একটা, সেটাই বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। তাদের লক্ষ্য এবার নির্ভুল থাকার। মেসির ভাষায়, 'ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের ওপর। আর আমাদেরকে নিজেদের মৌলিক বিষয়ে ফিরে যেতে হবে।'
আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য লাউতারো মার্তিনেসের কাছে মেক্সিকোর ম্যাচটিই ফাইনার। তিনি বলেছেন, 'এটা (মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচ) আমাদের জন্য এখন ফাইনালের মতো। কারণ এটি এমন একটি ম্যাচ, যা এই বিশ্বকাপে আমাদের বিশ্বাসকে তুলে ধরবে। (সৌদি আরবের কাছে হেরে যাওয়া) আমাদের মনোবলে একটি ভারী ধাক্কা ছিল কিন্তু আমরা একটি শক্তিশালী দল, খুব ঐক্যবদ্ধও আছি।'
মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচের করণীয় ভালো করেই জানা আছে ইন্টার মিলানের ফরোয়ার্ডের। কেবল সেদিকেই নজর তার, 'আমাদের শান্ত থাকতে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং কী আসছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। এবং যা আসছে তা মেক্সিকো, তাই আমাদের জয়ের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, সেটা যাই হোক না কেন।'
যার ছোঁয়ায় বদলে গেছে আর্জেন্টিনা, সেই লিওনেল স্কালোনি জানিয়েছেন, খেলার ধরনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। তার ভাষায়, 'আমরা সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখেছি এবং যৌক্তিকভাবে আমরা এরমধ্যেই মেক্সিকোকে নিয়ে ভাবছি, যা ভিন্ন হতে যাচ্ছে। তবে দলের খেলার ধরন একই রকম থাকছে। মঙ্গলবার যা ঘটেছে তার কারণে আমরা আমাদের খেলার পদ্ধতি পরিবর্তন করছি না। এটাই, আমরা খুব পরিষ্কার। মেক্সিকোর বিপক্ষে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং ভাবতে হবে যে আমরা জিততে যাচ্ছি।'
একই ভাবনায় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী আর্জেন্টাইন কোচ, 'এই হার নিঃসন্দেহে প্রভাবিত করেছে। তবে আপনি যখন কোনো আঘাত পান, আপনাকে যা করতে হবে তা হলো ঘুরে দাঁড়াতে হবে এবং এই দলটি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে এ দল ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা কিছু বিকল্প খুঁজছি, কিন্তু আমাদের খেলার পদ্ধতিতে নয়। এটা সম্ভব যে আমরা কিছু পরিবর্তন করব, আমরা আজ সিদ্ধান্ত নেব।'
আর্জেন্টিনার সব খেলোয়াড়ের কাঁধে চাপের বোঝা থাকলেও মেক্সিকোর বিপক্ষে অবশ্য অনুপ্রেরণার জায়গা আছে তাদের। বিশ্বকাপে মেক্সিকোর বিপক্ষে তিনবারের সাক্ষাতে তিনবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আর্জেন্টিনা। প্রথম বিশ্বকাপেই (১৯৩০) দেখা হয় দুই দলের। প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে মেক্সিকোকে ৬-৩ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। পরের সাক্ষাত ২০০৬ সালে, শেষ ষোলোয় আর্জেন্টিনা জেতে ২-১ গোলে। সর্বশেষ ২০১০ সালে শেষ ষোলোয় ৩-১ গোলের জয় তুলে নেয় আর্জেন্টিনা।