বেলজিয়ামকে হারিয়ে আরবের আশা বাঁচিয়ে রাখলো মরক্কো
প্রথমার্ধে মরক্কোকে পাত্তাই দিলো না বেলজিয়াম। অবিরত আক্রমণে মরক্কোকে দিশেহারা করে তুললো র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরা দলটি। এই অর্ধের প্রায় পুরোটা সময় মরক্কোর রক্ষণভাগেই বল ঘোরাফেরা করে। কিন্তু আরব অঞ্চলের দেশটিই যোগ করা সময়ে জালের ঠিকানা করে নিলো, যদিও তা অফসাইডের কারণে বাতিল হয়।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে নতুন চেহারার মরক্কোকে কোনো ফাঁদে পড়তে দিলেন না আবদেলহামিদ সাবিরি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ ফ্রি-কিক বল জালে জড়ালেন তিনি। যোগ করা সময়ে গিয়ে বেলজিয়ামের হারের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকলেন জাকারিয়া। রোমাঞ্চকর জয়ে আরব অঞ্চলের বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখলো মরক্কো।
রোববার কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে 'এফ' গ্রুপের ম্যাচে শক্তিশালী বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়েছে মরক্কো। বিশ্বকাপে এটাই বেলজিয়ামের বিপক্ষে তাদের প্রথম জয়। আগের সাক্ষাতে ১৯৯৪ সালে ১-০ হেরেছিল তারা। সব মিলিয়ে চার সাক্ষাতের দুটিতে বেলজিয়ামকে হারালো আফ্রিকার দেশটি।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দুই দলের ব্যবধান অনেক। জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা বেলজিয়াম দুই নম্বরে আছে। মরক্কো সেখানে ২২তম দল, ব্যবধানই ২০ ধাপের। শক্তি-সামর্থ্যেই তাও পার্থক্য ছিল, যা মাঠের লড়াইয়ে ফুটে উঠছিল। কিন্তু বেলজিয়ামের আক্রমণ সামলে পাল্টা আক্রমণ করার পাশাপাশি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে গেছে তারা, যার ফল মিললো হাতেনাতে।
ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে মরক্কো। এই জয়ে তাদের পয়েন্ট দাঁড়ালো চার। 'এফ' গ্রুপের শীর্ষ দল এখন তারাই। অপ্রত্যাশিত হারে হতাশায় নিমজ্জিত বেলজিয়াম দুই ম্যাচে তিন পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে নামলো। বর্তমান রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়া এক ড্রয়ে এ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে আগামী ১ ডিসেম্বর আজকের ভেন্যুতেই কানাডার মুখোমুখি হবে মরক্কো। ওই ম্যাচে জিতলেই নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো পরের রাউন্ডে যাবে তারা। সর্বশেষ ১৯৮৬ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোয় দেশটি। শেষ ম্যাচে ড্র করলেও দ্বিতীয় রাউন্ডের সম্ভাবনা থাকবে মরক্কোর।
বলা যায়, খেললো বেলজিয়াম, জিতলো মরক্কো। পুরো ম্যাচে দাপট জারি রেখে খেলে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা দলটি। ৬৭ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে বেলজিয়াম। তাদের নেওয়া ১০টি শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে, কিন্তু একবারও জালের ঠিকানা মেলেনি। সমান শট নেওয়া মরক্কোর ৪টি শট লক্ষ্যে থাকে, এর মধ্যে ২টি জড়ায় জালে।
বেলজিয়ামের মুহুর্মুহু আক্রমণ ফিরিয়ে প্রথমার্ধে নিজেদের জাল অক্ষত রাখে মরক্কো। এই অর্ধের যোগ করা সময়ে তারাই এগিয়ে যেতে পারতো। ডি-বক্সের একটু দূরে থেকে অসাধারণ শটে বল জালে জড়ান হাকিম জায়েখ। কিন্তু ভিএআর-এর সাহায্য নিয়ে অফসাইডে গোলটি বাতিল করেন রেফারি। একে বেলজিয়ামের শাসন, সঙ্গে ভাগ্যের রসিকতা, হতাশ হয়েই মাঠ ছাড়ে মরক্কো।
দ্বিতীয়ার্ধে নতুন শুরু করে আরব অঞ্চলের দেশটি। বেলজিয়ামের হানা সামলে আক্রমণ সাজাতে থাকে তারা। ৭৩তম মিনিটে গিয়ে মেলে সাফল্য। বাঁ প্রান্ত থেকে নেওয়া সাবিরি বাঁকানো শট বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ায়। যোগ করা সময়ে (৯০+২) গিয়ে জাইখের কাটব্যাক থেকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন জাকারিয়া। দুই গোলে এগিয়ে গিয়ে আরও কয়েকটি দারুণ আক্রমণ সাজায় মরক্কো, তবে আর জালের সন্ধান করতে পারেনি তারা।