ইরানের বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধে শেষ ষোলোয় যুক্তরাষ্ট্র
শেষ ষোলোয় উঠতে জয়ের বিকল্প ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের, ইরানের ড্র হলেও চলতো। এমন ম্যাচের আগে দুই দেশের মধ্যকার পুরনো রাজনৈতিক দ্বৈরথের আঁচও চলে আসে দৃশ্যপটে। ইরানের জাতীয় পতাকা থেকে 'আল্লাহ' শব্দটি বাদ দিয়ে ছবি পোস্ট করায় ফিফার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ইরান। যে ঘটনায় পরে দলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চান যুক্তরাষ্ট্রের কোচ গ্রেগ বারহ্যাল্টার। মাঠেও উত্তেজনার পারুদ ছড়াবে, এটা অনুমেয়ই ছিল। হলোও তেমন, দেখা গেল ঝাঁঝালো এক লড়াই। যে লড়াই জিতে মধুর প্রতিশোধে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলো যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার কাতারের আল থুমামা স্টেডিয়ামে 'বি' গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যে কোনো প্রতিযোগিতায় ইরানকে প্রথমবারের মতো হারালো তারা। ম্যাচ জিতে পরের রাউন্ডের টিকেটের সঙ্গে প্রতিশোধও নিয়ে নিলো মাঝে একটি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়া যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপে এর আগে একবারই ইরানের মুখোমুখি হয় তারা। ১৯৯৮ সালের সেই আসরে ২-১ গোলে জেতে ইরান। এরপর ২০০০ সালে একটি প্রীতি ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করে এ দুই দল।
ইরান লড়াই করলেও প্রথমার্ধে দাপট দেখায় যুক্তরাষ্ট্র। টানা আক্রমণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিকে ব্যতিব্যস্ত রাখে তারা। দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে তুলনামূলক ভালো চ্যালেঞ্জ জানায় ইরান। ৫১ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের নেওয়া ১২টি শটের ৫টি লক্ষ্য্ ছিল। ইরানের নেওয়া চারটি শটের একটি ছিল লক্ষ্যে।
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই প্রতিপক্ষের রক্ষণে হানা দিতে শুরু করে দুই দল। গতিময় ফুটবলে উত্তজনার পারদ ছড়াতে শুরু করে তখন থেকেই। চোখের পলকেই বল এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যাচ্ছিল। যদিও ধীরে ধীরে মনবম মিনিটে আক্রমণে যায় যুক্তরাষ্ট্র। রবিনসনের বাড়ানো পাস খুঁজে নেয় মুসাহকে। কিন্তু তার নেওয়া শট উপর দিয়ে চলে যায়। ১১তম মিনিটে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের হানা। সতীর্থের বাড়ানো ক্রসে পালিসিক হেড নেন, কিন্তু তা সহজেই তালুবন্দী করেন ইরানের গোলরক্ষক আলীরেজা বেইরানভান্ড।
১৬তম মিনিটে বিফলে যায় যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রচেষ্টা। ২৮তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। ডি-বক্সে একা থেকেও জালের ঠিকানা করে নিতে পারেননি ওয়েহ, তার হেড সহজেই ধরে ফেলেন বেইরানভান্ড। ৩৩ তম মিনিটে ডি-বক্স থেকে ওয়েহর নেওয়া জোরালো শট উপর দিয়ে চলে যায়।
৩৮তম মিনিটে জালের সন্ধান পায় যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাককিনির ক্রস খুঁজে নেয় ছোট বক্সে থাকা সার্জিনো ডেস্টকে। তিনি হেডে বল বাড়ান ক্রিশ্চিয়ান পালিসিকের দিকে, ভলিতে বল জালে জড়ান এই উইঙ্গার। ৪৪তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার ভালো সুযোগ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের, কিন্তু এবারও ওয়েহ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের সপ্তম মিনিটে ইরানের জালে বল পাঠিয়েও লাভ হয়নি, অফসাইডে গোলটি বাতিল হয়।
বিরতির পর সমতায় ফিরতে চেষ্টা বাড়ায় ইরান। যদিও সাজানো আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণে কাঁপন ধরাতে পারছিল না তারা। তবে ধীরে ধীরে ছন্দ ফিরে পায় ইরান। ৫২তম মিনিটে রেজাইয়ানে ক্রসে হেড করেন ঘোদোস, কিন্তু বারপোস্টের উপর দিয়ে চলে যায়। ৬৫তম মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় ইরান, ডি-বক্সের মধ্যে থেকে বাঁকানো শট নেন ১৪ ঘোদোস। কিন্তু অ্যাটাকিং এই মিডফিল্ডারের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৬৯ মিনিটে ফ্রি-কিক পায় যুক্তরাষ্ট্র, ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে মুসাহর নেওয়া শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৮২তম মিনিটে দারুণ এক ক্রস পেয়েও তাতে শট বা হেড নিতে পারেনি ইরান, বল নিয়ন্ত্রণে নেন যুক্তরাষ্ট্রের গোলরক্ষক ম্যাট টার্নার। ৮৭তম মিনিটে একই রকম সুযোগ হাতছাড়া করে যুক্তরাষ্ট্র। ডি-বক্সে ক্রস পেয়েও সামান্যর হেড নিতে পারেননি শাক মুরে। যোগ করা সময়ে টানা আক্রমণ করতে থাকে ইরান। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে জালালি ক্রসে হেড নেন এজাতালোহি, কিন্তু তার হেড একটুর জন্য বেরিয়ে যায়। অষ্টম মিনিটে ডি-বক্সে বাধার শিকার হওয় পড়ে যাওয়ায় পেনাল্টির আবেদন জানান মেহদি তেরেমি, কিন্তু রেফারি কান দেননি। একটু পরই শেষ বাঁশি বাজান তিনি।