বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনাল মানেই অপ্রতিরোধ্য আর্জেন্টিনা
দুঃস্বপ্নের শুরু হয়েছিল। শিরোপা স্বপ্ন নিয়ে কাতার গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খায় আর্জেন্টিনা। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে কোণঠাসা অবস্থা। ওই এক হারেই শেষ ষোলোর পথ কঠিন হয়ে যায় লিওনেল মেসির দলের। তবে খেই হারায়নি আলবিসেলেস্তেরা। রোমাঞ্চকর পথ পাড়ি দিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠে গেছে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশটি।
ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার সামনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলকে হারিয়ে সেমিতে ওঠা ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আগামী ১৩ ডিসেম্বর মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। অসাধারণ ফুটবল খেলা বর্তমান রানার্স-আপ ক্রোয়েশিয়া মেসিদের জন্য বড় বাধাই হবে। এরপরও অবশ্য আর্জেন্টিনাই এগিয়ে, কারণ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠলেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে যায় আলবিসেলেস্তেরা।
ফুটবলের বিশ্ব আসরে সেমি-ফাইনাল মানেই আর্জেন্টিনা ফেবারিট। বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠে কখনও হারেনি দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। কাতার বিশ্বকাপের আগে চারবার সেমি-ফাইনাল (১৯৭৮ বিশ্বকাপ ভিন্ন ফরম্যাটে খেলা হয়) খেলা আর্জেন্টিনা প্রতিবারই বিজয়ের হাসি হেসে মাঠ ছেড়েছে। কোনো প্রকিপক্ষই পারেনি তাদের হারের স্বাদ দিতে।
বিশ্বকাপ ইতিহাসের শুরুর লগ্ন থেকে এই রেকর্ড ধরে রেখেছে আর্জেন্টিনা। ১৯৩০ সালে বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই সেমি-ফাইনাল খেলে তারা। সেবার ফাইনালে হার মানা দেশটি পরে ১৯৮৬, ১৯৯০ ও ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলে। প্রতিবারই তারা সেমির বাধা পেরিয়ে উঠে যায় ফাইনালে।
১৭৭৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জেতে আর্জেন্টিনা। এই বিশ্বকাপেও সেমি-ফাইনালে পর্যায়ে তাদের রুখতে পারেনি কেউ। তবে ভিন্ন ফরম্যাটে হওয়ায় এই আসরে ছিল না কোনো সেমি-ফাইনাল। আর্জেন্টিনার ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপে ১৬ দল ৪ গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলে। আটটি দল দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে। দুই গ্রুপের সেরা দুই দল খেলে ফাইনাল। নেদারল্যান্ডসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনার খেলা চার বিশ্বকাপ:
১৯৩০ বিশ্বকাপ: আর্জেন্টিনা-যুক্তরাষ্ট্র
৯২ বছর আগে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। দাপুটে ফুটবলে যুক্তরাষ্ট্রকে ৬-১ গোলে গুঁড়িয়ে ফাইনালে ওঠে তারা। আর্জেন্টিনার হয়ে জোড়া গোল করেন গিলের্মো স্তাবিলে ও কার্লোস পেকুসেয়ে। একটি করে গোল করেন লুইস মন্তি ও আলেহান্দ্রো স্কোপেয়ি। বড় ব্যবধানে হারলেও এই ম্যাচে ফেবারিট হিসেবে ধরা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রকে, কিন্তু সব হিসাব বদলে দিয়ে মাঠে রাজত্ব দেখায় আর্জেন্টিনা
১৯৮৬ বিশ্বকাপ: আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম
ম্যারাডোনাময় এই বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বরের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারায় তারা। দলের হয়ে দুটি গোলই করেন ম্যারাডোনা। রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতে আর্জেন্টিনা। এই বিশ্বকাপে একক ফুটবল প্রদর্শনীতে দেশকে শিরোপা জেতান অবিসংবাদিত ম্যারাডোনা।
১৯৯০ বিশ্বকাপ: আর্জেন্টিনা-ইতালি
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে তাদের লড়তে হয় চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালির বিপক্ষে। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হয়। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে, যেখানে নায়ক হয়ে দলকে জয় এনে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক গয়কোচিয়া। ৪-৩ গোলের জয়ে ফাইনালে ওঠে আলবিসেলেস্তেরা। তবে ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনা।
২০১৪ বিশ্বকাপ: আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস
লিওনেল মেসির অনন্য ফুটবল প্রদর্শনীতে ২৪ বছর পর বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা, প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। ১২০ মিনিটের ধুন্ধুমার লড়াইয়ে পরও ম্যাচটি থাকে গোলশূন্য। টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে হাজির হন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক হের্হিও রোমেরো। ডাচদের দুটি শট ফিরিয়ে দলকে ফাইনালে তোলেন তিনি। ফাইনালে জার্মানিরে বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে শিরোপা খোয়ায় আর্জেন্টিনা।
এবার কী হবে?
২০২২ বিশ্বকাপ: আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া
২০১৪ বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল জয়ের নায়ক রোমেরোর স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস। কোয়ার্টার ফাইনালে সেই নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেই এবার টাইব্রেকারে জাদু দেখান আর্জেন্টাইন এই গোলরক্ষক, রোমেরোর মতো তিনিও দুটি শট ফেরান। লড়াইটা এবার ফাইনালে ওঠার। আগের চার সেমি-ফাইনালের রেকর্ড অক্ষুন্ন রেখে আর্জেন্টিনা ফাইনালে উঠতে পারে কিনা, সেটা দেখতে আরও দুদিন অপেক্ষা করতে হবে।