পরিসংখ্যানে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া লড়াই
হার দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করা আর্জেন্টিনা রোমাঞ্চের অলিগলি পেরিয়ে পৌঁছে গেছে সেমি-ফাইনালে। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে শেষ টারের টিকেট কেটেছে ক্রোয়েশিয়া। এই দুই দলের দেখা হচ্ছে ফাইনালের ওঠার লড়াইয়ে। ১৩ ডিসেম্বর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে প্রথম সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা ও ক্রোয়েশিয়া।
বিশ্বকাপ, আন্তর্জাতিক ম্যাচ; সবখানেই এই দুই দল লড়েছে সমানে সমান। কোনো জায়গাতেই এগিয়ে নেই কোনো দল। সর্বশেষ সাক্ষাতে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারায় ক্রোয়েশিয়া। ২০১৮ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচের আর মুখোমুখি হয়নি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া। সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হওয়ার আগে পরিসংখ্যানে দেখে নেওয়া যাক দুই দলের মধ্যকার রেকর্ড।
আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া রেকর্ড
বিশ্বকাপে খুব বেশি দেখা হয়নি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার। এখন পর্যন্ত দুটি ম্যাচ খেলেছে তারা, দুই দলই একটি করে ম্যাচ জিতেছে। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে হারায় ক্রোয়েশিয়া। ২০ বছর পর প্রতিশোধ নেয় ক্রোয়াটরা। ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বেই আলবিসেলেস্তেদের ৩-০ গোলে হারায় ক্রোয়েশিয়া।
নিজেদের মধ্যে আন্তর্জাতিক ম্যাচও বেশি খেলেনি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া। এখন পর্যন্ত পাঁচবার দেখা হয়েছে দল দুটির। এর মধ্যে দুই দলই জিতেছে দুটি করে ম্যাচ, একটি ম্যাচ ড্র হয়। বিশ্বকাপের ম্যাচটি হতে যাচ্ছে তাদের সপ্তম লড়াই।
আর্জেন্টিনা, মেসি ও অন্যান্য পরিসংখ্যান
দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলার হাতছানি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক লিওনেল মেসির সামনে। আট বছর আগে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল জাদুকর। ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যায় আলবিসেলেস্তেরা। সেবার নেদারল্যান্ডস বাধা পেরিয়ে ফাইনালে ওঠা আর্জেন্টিনার সামনে এবার ক্রোয়েশিয়া পরীক্ষা।
আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড এবারই গড়েছেন মেসি, ছাড়িয়ে গেছেন দিয়েগো ম্যারাডেোনাকে। গোলেও আর্জেন্টাইন ফুটবল ইশ্বরকে পেছনে ফেলেছেন মেসি। ম্যারাডোনার গোল ৮টি, মেসির গোল ৯টি। এবার আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি ১০ গোলের মালিক গাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার হাতছানি মেসির সামনে।
বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল মানেই ফেবারিট আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে কখনও হারেনি লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের দেশটি। দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আগের চার সেমি-ফাইনালেই (১৯৭৮ বিশ্বকাপে ভিন্ন ফরম্যাটে হয় বলে সেমি-ফাইনাল ছিলো না) জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। সব মিলিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিতে উঠেছে আর্জেন্টিনা।
ক্রোয়েশিয়ার বিশ্বকাপ কথন
তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছে ক্রোয়েশিয়া। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো শেষ চারে ওঠে দেশটি। এরপর ২০১৪ বিশ্বকাপে সেমিতে ওঠা ক্রোয়েশিয়া খেলে ফাইনালেও। শিরোপার লড়াইয়ে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-২ গোলে হেরে যায় তারা। এবারও শেষ চারে উঠেছে দেশটি, টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে খেলতে যাচ্ছে তারা।
সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনা যেমন অপরাজেয়, ক্রোয়েশিয়া তেমন বিশ্বকাপে টাইব্রেকারে হার না মানা। বিশ্বকাপে চারবার টাইব্রেকার রোমাঞ্চের সামনে পড়া ক্রোয়েশিয়া প্রতিবারই ম্যাচ জিতেছে। টাইব্রেকারে তাদের কেউ হারাতে পারেনি। গত বিশ্বকাপে শেষ ষোলোয় ডেনমার্ক ও কোয়ার্টার-ফাইনালে রাশিয়াকে টাইব্রেকারে হারায় ক্রোয়েশিয়া। এবার শেষ ষোলোয় জাপান ও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে টাইব্রেকারে হারিয়েছে মদ্রিচ-পেরেসিচরা।
১৯৯৮ ও ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে ব্রাজিল। সেলেসাওদের পর প্রথম দল হিসেবে টানা দুটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার হাতছানি ক্রোয়েশিয়ার সামনে। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ম্যাচ হারেনি ক্রোয়েশিয়া। কেবল এবারের বিশ্বকাপই নয়, ফুটবলের এই বিশ্ব আসরে নিজেদের সর্বশেষ ১২ ম্যাচের ১১টিতে অপরাজিত তারা। একমাত্র হারটি ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে।