মেসিকে ‘ট্রিপল ক্রাউন’ ক্লাবে স্বাগত জানালেন কাকা, মাত্র ৯ জন ফুটবলার ঠাঁই পেয়েছেন সেখানে!
৩৬ বছরের শিরোপা খরা দূর করে ২০২২ সালে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয় করেছে আর্জেন্টিনা। সেই সঙ্গে ফুটবলের ইতিহাসে নিজেকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন লাতিন আমেরিকার দলটির জয়ের মূল নায়ক লিওনেল মেসি। মেসির এ অর্জনের পর তাকে 'ট্রিপল ক্রাউন' ক্লাবে স্বাগতম জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার কাকা। 'ট্রিপল ক্রাউন' ক্লাবে ঠাঁই করে নিতে পেরেছেন মাত্র ৯ জন ফুটবলার, যাদের মধ্যে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার কাকাও আছেন।
আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ জয় করা ছিল মেসির অধরা স্বপ্ন। ক্যারিয়ারে একের পর এক বিভিন্ন শিরোপা জিতে অনেক আগেই সর্বকালের সেরা ফুটবলারের বিতর্কে নাম উঠিয়েছিলেন মেসি। এবার বিশ্বকাপ জয়ের পর বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে মেসি সেই খেতাব পাকাপাকিভাবে নিজের করে নিয়েছেন বলেই অনেকের বিশ্বাস। মেসি যে শুধু বিশ্বকাপ জিতেছেন তা নয়, ৩৫ বছর বয়সেও অবিশ্বাস্য পারফরমেন্স দেখিয়েছেন পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে। গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছে হেরে গেলেও, টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতেছেন। আবার প্রথম ফুটবলার হিসেবে ৫টি ম্যাচে 'ম্যান অব দ্য ম্যাচ' হয়েছেন। সেই সাথে মেসির দুর্দান্ত অ্যাসিস্টগুলোর কথাও ভুলে গেলে চলবে না!
কিন্তু ট্রিপল ক্রাউন ক্লাব আসলে কী? যেসব ফুটবলার একই সাথে ফিফা বিশ্বকাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ব্যালন দ'অর জিতেছেন তারাই এই ক্লাবের সদস্য। না, এই ক্লাবের কোনো অবকাঠামোগত অস্তিত্ব নেই বটে, কিন্তু শুধুমাত্র নামেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এযাবত এই ক্লাবের সদস্য হতে পেরেছেন মাত্র ৯ জন ফুটবলার।
কাকা মেসিকে কী বার্তা দিয়েছেন?
নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে একটি গ্রাফিক ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে কাকা লিখেছেন, "এই ক্লাবে তোমাকে স্বাগতম, লিও মেসি।"
চলুন দেখে নেওয়া যাক 'ট্রিপল ক্রাউন' ক্লাবে কোন কোন ফুটবলার আছেন।
ববি চার্লটন
ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপ (১৯৬৬ সাল), ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৬৮ সাল), ব্যালন দ'অর (১৯৬৬ সাল)
ট্রিপল ক্রাউন ক্লাবের একমাত্র ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে এ গৌরব অর্জন করেছেন ববি চার্লটন। বিশ্বকাপ জেতার একই বছরে তিনি ব্যালন দ'অরও জিতেছেন। এর দুই বছর পর তিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জেতেন।
ফ্রানজ বেকেনবাওয়ার
পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ (১৯৭৪), ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬; বায়ার্ন মিউনিখ), ব্যালন দ'অর (১৯৭২, ১৯৭৬)
মেসির পর ইতিহাসের অন্যতম সেরা জার্মান ফুটবলার ফ্রানজ বেকেনবাওয়ারই এই 'ট্রিপল ক্রাউন' ক্লাবের একমাত্র সদস্য যিনি একের অধিক ব্যালন দ'অর জিতেছেন।
জার্ড মুলার
পশ্চিম জার্মানির হয়ে বিশ্বকাপ (১৯৭৪), ইউরোপিয়ান ক্লাব (১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬; বায়ার্ন মিউনিখ), ব্যালন দ'অর (১৯৭০)
বেকেবাওয়ারের সাবেক সতীর্থ জার্ড মুলার ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সর্বাধিক উচ্চারিত একটি নাম। জার্ড মুলারের আগে বা তার সময়ে খুব কম ফুটবলারই এতটা সোজাসাপ্টাভাবে গোল করার সৌন্দর্য্য দেখাতে পেরেছিলেন।
পাওলো রসি
ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ (১৯৮২), ইউরোপিয়ান কাপ (১৯৮৫, জুভেন্টাস), ব্যালন দ'অর (১৯৮২)
১৯৮২ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন বুট বিজয়ী ফুটবলার পাওলো রসি বিশ্বকাপ জেতার তিন বছর পর জুভেন্টাসের হয়ে ইউরোপিয়ান কাপ জেতেন।
জিনেদিন জিদান
ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ (১৯৯৮), চ্যাম্পিয়নস লিগ (২০০২, রিয়াল মাদ্রিদ), ব্যালন দ'অর (১৯৯৮)
ফুটবলকে শিল্পে পরিণত করেছেন যিনি, তিনি জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে জিদানের হেডে দেওয়া দুটি গোল তাকে ব্যালন দ'অর এনে দেয়।
চার বছর পর বিশ্বসেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতেন তিনি। হ্যাম্পডেন পার্কে ফাইনালে বেয়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে করা একটি গোল আজও একটি শ্রেষ্ঠতম গোল হিসেবে বিবেচিত।
রিভালদো
ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ (২০০২), চ্যাম্পিয়নস লিগ (২০০৩, এসি মিলান), ব্যালন দ'অর (১৯৯৯)
১৯৯৯ সালে ব্যালন দ'অর জয়ী ফুটবলার রিভালদো একই বছরে ব্রাজিলকে কোপা আমেরিকা জয় করতে সাহায্য করেন। তিন বছর পর বিশ্বকাপ জয় করেন অসামান্য প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়।
রোনালদিনহো
ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ (২০০২), চ্যাম্পিয়নস লিগ (২০০৬, বার্সেলোনা), ব্যালন দ'অর ( ২০০৫)
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ফুটবলের সর্বশ্রেষ্ঠ একজন আইকন রোনালদিনহো সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে তার ক্রীড়া দক্ষতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আনন্দ দিয়েছেন। বার্সেলোনায় লিওনেল মেসির গুরুতুল্য ছিলেন রোনালদিনহো। ২০০৫ সালে তিনি ব্যালন দ'অর জেতেন।
কাকা
ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ (২০০২), চ্যাম্পিয়নস লিগ (২০০৭, এসি মিলান), ব্যালন দ'অর (২০০৭)
২০০২ বিশ্বকাপে উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্স না দেখালেও বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছেন বলে কাকাকে সৌভাগ্যবানই বলতে হয়। কিন্তু দিন শেষে ট্রফিই কথা বলে।
২০০৭ সালে এসি মিলানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পর ব্যালন দ'অরও পান এই ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার।
লিওনেল মেসি
আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপ (২০২২), চ্যাম্পিয়নস লিগ (২০০৬,২০০৯, ২০১১, ২০১৫; বার্সেলোনা), ব্যালন দ'অর (২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯, ২০২১)
আর্জেন্টাইন তারকার ট্রফির সংখ্যার দিকে দেখুন একবার! ট্রিপল ক্রাউন ক্লাবের বাকি সদস্যদের অর্জনের সঙ্গে মেসির অর্জনের পার্থক্য হয়তো ইতোমধ্যেই স্পষ্ট। সাতবার ব্যালন দ'অর জয়ী লিওনেল মেসির জীবনের একমাত্র অধরা শিরোপা ছিল বিশ্বকাপ। গত ১৮ ডিসেম্বর কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসির স্বপ্ন পূর্ণতা পেয়েছে।
তাহলে মেসিই কি সর্বকালের সেরা ফুটবলার? তা নিয়ে এখনও সন্দেহ আছে? মেসির ক্যারিয়ারে যা অর্জন, একজন শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হয়তো এর চেয়ে বেশি কিছু আর চাইতে পারেন না!
সূত্র: গিভ মি স্পোর্ট