সাকিবের মেজাজ হারানোর ম্যাচে বরিশালের জয়
স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান ঠিক করা নিয়ে মাঠে নাটক চললো, যার অংশ হলেন মেজাজ হারানো সাকিব আল হাসানও। শুরুতে নিজ দলের ব্যাটসম্যানদের মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতে বলা ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক পরে মাঠে ঢুকে আম্পায়ারের সঙ্গে জড়ালেন তর্কে। সব সময় তিনে ব্যাটিং করা সাকিব এদিন ব্যাটিংয়েই নামলেন না। যদিও তাতে জয়ের পথে বাধা হয়নি, দারুণ জয়ে ছন্দে ফিরেছে ফরচুন বরিশাল।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রংপুর রাইডার্সকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথম ম্যাচে ১৯৪ রান তুলেও মাশরাফি বিন মুর্তজার সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে হেরেছিল সাকিবের দল। আজকের জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার চার নম্বরে উঠে গেছে বরিশাল। পরের ম্যাচে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পরিশালের প্রতিপক্ষ ঘরের মাঠের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে রংপুর রাইডার্স। রনি তালকুদার ও শোয়েব মালিকের ব্যাটে ৭ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে তারা। জবাবে ইব্রাহিম জাদরান ও ম্যাচসেরা মেহেদী হাসান মিরাজের পর ইফতিখার আহমেদ করিম জানাতের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৪ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় তুলে নেয় ফরচুন বরিশাল।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামেন বরিশালের দুই ওপেনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা ও এনামুল হক বিজয়। তারা মাঠে নামার পরপরই বাধে বিপত্তি। স্ট্রাইক প্রান্তের ব্যাটসম্যান ঠিক করা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। বরিশালের বাঁহাতি ওপেনার চতুরঙ্গ স্ট্রাইক প্রান্ত নেন। বোলিং প্রান্তে তখন রংপুরের স্পিনার রকিবুল হাসান। কিন্তু চতুরঙ্গকে স্ট্রাইকে দেখে বোলার পরিবর্তন করে রংপুর। দলটির অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বল তুলে দেন ডানহাতি অফ স্পিনার শেখ মেহেদী হাসানের হাতে।
রংপুরের বোলার পরিবর্তন দেখে প্রান্ত বদল করে নেন বরিশালের দুই ওপেনার, স্ট্রাইকে যান এনামুল হক বিজয়। এরপর রংপুর আবারও বোলার পাল্টায়, ডানহাতি বিজয়ের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুলকে আনে তারা। এ নিয়ে মাঠের মধ্যে শুরু হয় নাটক। যা ডাগআউট থেকে লক্ষ্য করেন সাকিব। কিছুক্ষণ বাইরে থেকে বিষয়টি দেখার পর বরিশাল অধিনায়ক হাত দিয়ে ইশারা করে দুই ওপেনারকে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন।
বরিশালের দুই ওপেনার তখন আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলছেন, এক পর্যায়ে নিয়ম ভেঙে মাঠে ডুকে পড়েন সাকিব। তখন তার পায়ে খেলার জুতাও ছিল না, স্যান্ডেল পরা সাকিব মাঠে ঢুকে স্কয়ার লেগ আম্পায়ার গাজি সোহেলের দিকে তেড়েফুঁরে এগিয়ে যান। আম্পায়ারের সঙ্গে তর্কে জড়ান। মিনিট পাঁচেক চলে এই ঘটনা। অবশেষে সাকিব মাঠ ছাড়েন। পরে চতুরঙ্গর বিপক্ষে রকিবুলকে দিয়েই বোলিং শুরু করায় রংপুর।
বিবাদে জড়িয়ে অবশ্য লাভ হয়নি, রকিবুলের করা প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ক্যাচ তুলে বিদায় নেন চতুরঙ্গ। ১৫ রান করা আরেক ওপেনার বিজয়ও টিকতে পারেননি বেশি সময়, দলীয় ১৮ রানে থামেন তিনি। ১৮ রানেই নেই ২ উইকেট, বরিশাল তখন ঘোর সঙ্কটে। এমন সময়ে ত্রাতা হয়ে হাজির হন ইব্রাহিম জাদরান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় উইকেটে ৮৪ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা।
এই জুটিতেই জয়ের ভীত মিলে যায় বরিশালের। দলকে সুবিধাজনক অবস্থান পৌঁছে দিয়ে থামেন মিরাজ। আগে বল হাতেও পথ দেখানো ডানহাতি এই অলরাউন্ডার ২৯ বলে ৫টি চারে খেলেন ৪৩ রানের ইনিংস। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন তিনি। এরপর আরও কিছুটা সময় পাড়ি দেন জাদরান। আফগানিস্তানের ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪১ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫২ রান করেন।
এরপর দলের জয় নিশ্চিত করেন পাকিস্তানের ইফতিখার আহমেদ ও আফগানিস্তানের করিম জানাত। ইফতিখার ১৮ বলে একটি ছক্কায় ২৫ ও করিম ১৪ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। রংপুর রাইডার্সের সিকান্দার রাজা ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান রকিবুল হাসান ও রবিউল হক।
এর আগে ব্যাটিং করা রংপুরের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন পাকিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার শোয়েব মালিক। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান তার ৩৬ বলের ইনিংসটি ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজান। ওপেনার রনি তালুকদার ২৮ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্বায় ৪০ রান করেন। অধিনায়ক নুরুল হাসান ১২ ও শেষ দিকে রবিউল হক ১৫ বলে অপরাজিত ১৮ রান করেন। বরিশালের চতুরঙ্গ ও মিরাজ ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সাকিব, এবাদত ও করিম।