সাকিবদের বিদায় করে কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্স
ফরচুন বরিশালের মেহেদী হাসান মিরাজের পর রংপুর রাইডার্সের শামীম হোসেন পাটোয়ারী। দুই দলের এ দুজনই খেলেছেন দারুণ দুটি ইনিংস, পার্থক্য গড়ে দেওয়ার রূপকার ছিলেন তারা। মিরাজের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহ, করিম জানাতের ব্যাটে বরিশাল বড় সংগ্রহ পায়। অবশ্য সেটা যথেষ্ট হয়নি। শামীমের ইনিংস গড়া ব্যাটিংয়ের পর শেষ দিকে দাসুন শানাকা ও শেখ মেহেদির হাসানের ব্যাটে জয় তুলে নেয় রংপুর।
রোববার মিরপুর শেরে জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ােমে ফরচুন বরিশালকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে রংপুর রাইডার্স। এলিমিনেটর ম্যাচ জিতে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার খেলা নিশ্চিত করলো নুরুল হাসান সোহানের দল। সিলেট স্ট্রাইকার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ম্যাচে হেরে যাওয়া দলের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে তারা। এই হারে বিপিএল থেকে বিদায় নিলো আসরজুড়ে দাপুটে ক্রিকেট খেলা সাকিব আল হাসানের দল বরিশাল।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে বরিশাল। গড়পড়তা শুরুর পর মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ, করিম জানাত, ভানুকা রাজাপাকশেদের ব্যাটে ৩ উইকেটে ১৭০ রান তোলে তারা। জবাবে দুঃস্বপ্নের শুরুর পরও রনি ও শামীমের ব্যাটে ভালোভাবেই জয়ের পথে থাকে তারা। শামীমের ঝলমলে ইনিংসের পর শানাকা ও শেখ মেহেদি মিলে ৩ বল হাতে রেখে রংপুরের জয় নিশ্চিত করেন।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি রংপুর রাইডার্স। কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই বিদায় নেন ওপেনার নাঈম শেখ। প্রথম ওভারে পঞ্চম বলে তাকে ফিরিয়ে দেন সাকিব। শুরুর এই ধাক্কা অবশ্য রংপুরকে বুঝতে দেননি আরেক ওপেনার রনি তালুকদার ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। দ্বিতীয় উইকেটে ৩৯ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন তারা।
ছন্দময় ব্যাটিং করতে থাকা রনি অষ্টম ওভারে গিয়ে থামেন। ফেরার আগে ১৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৯ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। রনির পর অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে আরেকটি জুটি গড়েন রংপুরকে ঠিক পথে রাখা শামীম। এই জুটি থেকে আসে ৩৫ রান। ১৩ বলে ৩টি চারে ১৮ রান করে সাজঘরে ফেরেন সোহান।
অধিনায়কের বিদায়ের পর কিছুটা বিপাকেই পড়ে রংপুর। কারণ দ্রুতই ফিরে যান নিকোলাস পুরান। ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান দলের ওপর চাপ বাড়িয়েছেন। ৮ বলে ৫ রান করেন তিনি। রংপুরের ইনিংসে সবচেয়ে বড় আঘাতটি লাগে ১৭তম ওভারে। আশা-ভরসা হয়ে টিকে থাকা শামীম এ সময় আউট হন। এর আগে ৫১ বলে ৪টি করে চার ও ছক্কায় ৭১ রানের মহা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন তিনি।
দলকে জয়ের হাসি এনে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব ওঠে দাসুন শানাকা ও ডোয়াইন ব্রাভোর কাঁধে। চাপ কাটিয়ে ব্রাভো পারেননি দলকে পথ দেখাতে। ৩ বলে ২ রান করে আউট হন তিনি। কাজ সেরেছেন শানাকা ও শেখ মেহেদি হাসান মিলে। রান-বলের ব্যবধান ঘুচিয়ে রংপুরকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন এ দুজন। শানাকা ১২ বলে একটি ছক্কায় ১৬ ও মেহেদি ৯ বলে ৪টি চারে ১৮ রানে অপরাজিত থাকেন। বরিশালের সাকিব, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও খালেদ আহমেদ ২টি করে উইকেট নেন।
এরআগে ব্যাটিং করা ফরচুন বরিশালকে ভালো শুরুই এনে দেন দুই ওপেনার মেহেদী হাসান মিরাজ ও আন্দ্রে ফ্লেচার। অবশ্য মিরাজের কথা আলাদা করে বলতে হবে। কারণ ফ্লেচারকে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রেখে ডানহাতি এই অলরান্ডারই দারুণ সব শটে রান তুলে গেছেন। উদ্বোধনী জুটিতে ৫.৫ ওভারে ৪৬ রান পায় বরিশাল।
মিরাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটিং করতে পারেননি ফ্লেচার। ক্যারিবীয় এই ওপেনার ধীর গতির ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে একটি চারে ১২ রান করে আউট হন। তার বিদায়ের পর দারুণ এক জুটি গড়েন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। দ্বিতীয় উইকেটে ৪৬ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তারা। এ সময় দুজনই ব্যাট চালান টি-টোয়েন্টি মেজাজে। সাকিব নিয়মিত তিনে ব্যাটিং করলেও এদিন জায়গাটা পান মাহমুদউল্লাহ। বিপিএলে নিজের শততম ম্যাচে ব্যাটিং-ই করেননি সাকিব।
১৩ ওভার শেষে ১ উইকেটে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১১৪ রান। তখন মনে হচ্ছিল রান পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছে সাকিবের দল। কিন্তু ২১ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্বায় ৩৪ রান করে মাহমুদউল্লাহ ১৪তম ওভারে আউট হলে ছন্দ হারায় বরিশাল, কমে যায় রান তোলার গতিও। মিরাজের সঙ্গে যোগ দেওয়া করিম জানাত সেভাবে ব্যাট চালাতে পারছিলেন না।
১৬তম ওভারের প্রথম বলে আউট হন মিরাজ। ফেরার আগে ৪৮ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৯ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন এবারের আসরে তৃতীয়বারের মতো ওপেনিংয়ে নামা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষের কয়েক ওভার কাজে লাগিয়ে করিম জানাত ও ভানুকা রাজাপাকশে সংগ্রহ বড় করতে পারেননি।
২৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্বায় অপরাজিত ৩৩ রান করেন করিম। ১০ বলে একটি করে চার ও ছক্বায় ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন রাজাপাকশে। রংপুরের লঙ্কান অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা ৩ ওভারে ২৩ রানে ২টি উইকেট নেন। একটি উইকেট পান রকিবুল হাসান।