বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতায় শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম বন্ধের পথে?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে জনবলসহ মালামাল গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সে সঙ্গে প্রত্যাহার করা হচ্ছে বিসিবির নিযুক্ত বগুড়ার সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এর কারণ হিসেবে বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থাকেই দায়ী করছে বিসিবি। যদিও এমন দায় অমূলক বলছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে দেওয়া এক চিঠি থেকে এ বিষয়টি জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) স্টেডিয়াম হস্তান্তর প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে পাঠানো বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষতির ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত কয়েক বছর ধরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অসহযোগিতার কারণে বিসিবি কর্তৃক কোনো টুর্নামেন্ট, লীগ আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে স্টেডিয়ামটির রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এ দিন বিকেলে জনবল ও মালামাল প্রত্যাহারের বিষয় নিশ্চিত করেন শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের বিসিবির ভেন্যু ম্যানেজার জামিলুর রহমান জামিল। এর আগে বুধবার দুপুরে ভেন্যুর লোকজনকে বগুড়া থেকে চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ভেন্যু ম্যানেজার জানান, তাকে মোবাইল ফোনে শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে থাকা বিসিবির সকল মালামাল ঢাকার মিরপুর স্টেডিয়ামে পাঠিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয় । একই সঙ্গে বগুড়ায় কর্মরত বিসিবির ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বৃহস্পতিবারের মধ্যে ঢাকায় রিপোর্ট করতে বলা হয়।
জামিলুর রহমান বলেন, 'আমাদের বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। শুধু ভেন্যুর জনবল ও সরঞ্জাম সবকিছু নিয়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। ধারণা করছি বগুড়া থেকে ভেন্যু তুলে নিতে পারে বিসিবি।'
বিসিবির এ জেলা কর্মকর্তা আরও বলেন, মালামাল গোছাতে দেরি হয়ে গেছে। এ জন্য আমরা শনিবারে ঢাকায় রিপোর্ট করব। তবে মালামাল শুক্রবারে পৌঁছে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে বিসিবির সিনিয়র ন্যাশনাল ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, 'শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম নিয়ে বিসিবির ম্যানেজমেন্ট থেকে একটা সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, আমরা সেটা বাস্তবায়ন করছি। কিন্তু এটি নিয়ে যারা পলিসি মেকিংয়ে আছেন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। এর বাইরে এ মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারব না।'
বিসিবির লোকবল প্রত্যাহারের বিষয়টি জেনেছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাছুদুর রহমান মিলন। বিসিবির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '১৬ বছর ধরে এখানে আন্তর্জাতিক খেলা হচ্ছে না। এটা নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। বিসিবি খেলা দেয়নি।'
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক আরও বলেন, 'শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম তো ভেন্যু না। এটা রেগুলার মাঠ ছিল, ভেন্যু দিয়ে রেখেছিল। আমরা অসহযোগিতা করলে — কয়েকদিন আগে বিসিবির খেলা হল — সেটা কীভাবে হলো?'
স্টেডিয়াম সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ২১ কোটি টাকায় বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যুতে (ফ্লাড-লাইটসহ) উন্নীত করা হয়। স্টেডিয়ামটির চার টাওয়ারে ১০০টি করে মোট ৪০০ ফ্লাড-লাইট রয়েছে। এ লাইটগুলো আট লাখ ওয়াট বিদ্যুতের আলো সরবরাহ করতে পারে।
আন্তর্জাতিক খেলা বন্ধের পরে ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে একবার ফ্লাডলাইটগুলো জ্বালানো হয়েছিল। তবে এরপর সেগুলো আর জ্বলেনি।
২০০৬ সালের ৩০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করে। একই বছর স্টেডিয়ামটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ভেন্যুর স্বীকৃতিও পায়।
কিন্তু অজানা কারণে ২০০৬ সালের পর থেকে এ মাঠে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ের কোনো খেলা উপভোগ করা দর্শকদের ভাগ্যে জোটেনি। তবে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় লিগ, স্থানীয় প্রিমিয়ার ডিভিশন, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ, ও করপোরেট লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব ম্যাচের সবগুলোই দিনে অনুষ্ঠিত হয়।