উনচল্লিশেও দুর্বার মাশরাফি, গড়লেন রেকর্ড
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কতোবার ইনজুরিতে পড়েছেন, হিসাব করা কঠিন; দুই হাঁটুতে সাতটি অস্ত্রোপচার। বয়সও থেমে নেই, আগামী অক্টোবরে পা দেবেন চল্লিশে। কিন্তু মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে বয়স যেন নিছকই সংখ্যা, এই বয়সেও তিনি দুর্বার-অপ্রতিরোধ্য। সোমবার বিকেএসপিতে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে অসাধারণ বোলিংয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ব্যাটিং লাইন আপ গুঁড়িয়ে দেওয়া লেজেন্ডস অব রূপগঞ্জের অভিজ্ঞ এই পেসার গড়লেন দারুণ এক রেকর্ড।
ছোট্ট বোলিং রান আপ, বলা যায় চার-পাঁচ কদম। একটু দৌড়ে এসে মিডিয়াম পেস, তাতেই ব্যাটসম্যান দিশেহারা। স্টাম্প ভেঙে যাওয়ার পর তো ইমরুল কায়েস বুঝতেই পারছিলেন না কী হলো। মাশরাফির বলে আউট হয়ে একবার পেছনে, আবার সামনে তাকাচ্ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছিল, 'এমন তো হওয়ার কথা ছিল না।' এরপর আরও চারবার ব্যাটসম্যানকে বোকা বানালেন মাশরাফি, মাত্র ১৭ রানে ৫ উইকেট। তাতে মোহামেডান অল্পতেই শেষ, মাশরাফির নামের পাশে যোগ হলো রেকর্ড।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি নিজের দখলে নিলেন মাশরাফি। ৩৯ বছর ১৭৩ দিন বয়সে দারুণ এই রেকর্ড গড়লেন জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। এতোদিন রেকর্ডটি ছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের। গত বছরের মার্চে মোহামেডানের বিপক্ষেই ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে বিকেএসপিতে ২৩ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। সেদিন তার বয়স ছিল ৩৭ বছর ২৫৮ দিন, ওটাই তার লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট।
দেশের সবচেয়ে বেশি বয়সী বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার দিনে আরেকটি দারুণ কীর্তি গড়েছেন মাশরাফি। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৪৫০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। এবং এই রেকর্ড বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে দেশের সফলতম এই পেসার। ৩২৪ ম্যাচে মাশরাফি উইকেট ৪৫২টি। তালিকায় পরের নামটি আব্দুর রাজ্জাকের। বাঁহাতি এই স্পিনার ৪১২ উইকেট নিয়েছেন, তবে অবসরে গেছেন বেশ আগেই। সর্বশেষ ২০১৯ সালের মার্চে লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে ৫ উইকেট পান মাশরাফি।
একটি রেকর্ডে অবশ্য রাজ্জাকের পেছন পেছন ছুটছেন মাশরাফি। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ বার ৫ উইকেট রাজ্জাক। সোমবার মোহামেডানকে দিক ভুলিয়ে দেওয়ার দিন মাশরাফি নিলেন লিস্ট 'এ' ক্যারিয়ারের সপ্তম পঞ্চম উইকেট। সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ায় মাশরাফির উইকেট সংখ্যা কোনোদিনই ছোঁয়া হবে না রাজ্জাকের। তবে তার রেকর্ডটি ছোঁয়ার সুযোগ থেকেই যাচ্ছে মাশরাফির।
মোহামেডানের বিপক্ষে ম্যাচের চতুর্থ বোলার হিসেবে বোলিংয়ে আসেন মাশরাফি। নিজের তৃতীয় ওভারে গিয়ে দেখা পান প্রথম উইকেট। ইমরুল তার প্রথম শিকার, এর পর একে একে তুলে নেন আরও ৪ উইকেট। ৮.৪ ওভারে তিন মেডেনসহ ১৭ রানে ৫ উইকেট নেন মাশরাফি। মোহামেডান গুটিয়ে যায় ৮০ রানেই, ৮ ওভারেই ১০ উইকেটের জয় তুলে নেয় রূপগঞ্জ।