ঢাকা আসছেন এমিলিয়ানো মার্তিনেস?
দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরিয়ে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। শিরোপা জয়ের পথে লাতিন আমেরিকার দেশটির স্বপ্নবাহক লিওনেল মেসি করেছেন জাদুকরী পারফরম্যান্স। দলের অন্যান্যরা জান লাগিয়ে খেলেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেস। পুরো আসরজুড়ে আলবিসেলেস্তেদের গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে থেকেছেন, পেনাল্টি ফেরানোসহ অনেক বিপদ থেকে দলকে বাঁচিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলার এই গোলরক্ষক। আর্জেন্টিনা, মেসির মতো মার্তিনেসেরও অনেক ভক্ত আছে বাংলাদেশে। তাদের জন্য সুখবর, ঢাকা আসছেন মার্তিনেস।
অবশ্য আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে বলে মার্তিনেসের ঢাকা আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলাই ভালো। মূলত দুই দিনের জন্য কলকাতা সফরে আসার কথা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষকের। কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্ত তাকে কলকাতায় নিয়ে আসার জন্য যোগাযোগ শুরু করেন। তার পরিকল্পনা ছিল শুধু কলকাতাকে ঘিরেই। কিন্তু মার্তিনেসের ইচ্ছার কারণে তার সফরে যোগ হয়েছে ঢাকা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন শতদ্রু। রোববার দ্য বিসনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব জানিয়েছেন তিনি। আগামী পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে জানান শতদ্রু।
৪ ও ৫ জুলাই কলকাতা সফরে থাকবেন মার্তিনেস। এর আগে ৩ জুলাই ঢাকায় আসার কথা তারকা এই ফুটবলারের। শতদ্রু বলেন, 'মার্তিনেসকে আমরা নিয়ে আসছি। আমি শুধু কলকাতায় আনার জন্যই যোগাযোগ করেছিলাম ওর সাথে। মার্তিনেস নিজে থেকেই আমাকে বাংলাদেশের কথা বলেছে। ও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানে, ওখানকার মানুষ আর্জেন্টিনার কেমন সমর্থক, এটা জানা আছে ওর। ও আমাকে বলছিল, "বাংলাদেশেও যেতে চাই আমি। বাংলাদেশে আমার ও আমাদের দলের অনেক অনেক ভক্ত আছে। তাদের সাথে দেখা হলে দারুণ হবে।" ৩ জুলাই মার্তিনেসকে ঢাকায় নেওয়ার পরিকল্পনা আমাদের।'
কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগা হচ্ছে শতদ্রুর। কাউকেই কথা দিচ্ছেন না তিনি, সেরা 'অপশন' বেছে নেওয়ার অপেক্ষায় এই ক্রীড়া উদ্যোক্তা, 'মার্তিনেসের ইচ্ছার কারণে বাংলাদেশের স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ শুরু করি। আমার বাংলাদেশে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, পার্টনার রয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দুই-তিন জনের সঙ্গে আমার ভালোভাবে কথা হয়েছে। এটা নন-এক্সক্লুসিভ রাখছি, কারও সঙ্গেই স্থায়ী আলোচনায় যাচ্ছি না। অন্য কোনো ভালো প্রস্তাব থাকলে আমি সেটা নিয়ে নিবো।'
বসুন্ধরা, বিকাশ, গ্রামীন ফোন, প্রাণ গ্রুপসহ আরও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'কথা চলছে, আমার সঙ্গে সরাসরি হচ্ছে না। কারণ আমি আমার পার্টনারদের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি। তারা বসুন্ধরা গ্রুপ, বিকাশ, গ্রামীন ফোন, প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে কথা বলেছে, আলোচনা চলছে। তারা ব্যাপারটা দেখছে, পরে আমি যুক্ত হবো এই প্রক্রিয়ায়। আমি পরের সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবো। সময়টা তো একদিন, দ্রুততার সাথেই করতে হবে সব। অনেকে আবার আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করেছে, অনেকেই ফোন করছেন। তিনদিন ধরে আলোচনা চলছে, পাঁচ-ছয়দিনের চূড়ান্ত করে নিবো।'
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফ) সঙ্গে আলোচনা করেই আয়োজনটা সারতে চান শতদ্রু। মার্তিনেসের সফর ঢাকা সফর নিশ্চিত করতে আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশে আসবেন তিনি, ' আগামী সপ্তাহে আমি বাংলাদেশে যাব। আমি এরআগে বাফুফের প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছিলাম অনেক বছর আগে। এবারও আমি দেখা করবো। উনার সঙ্গে আমার ভালো একটা যোগাযোগ আছে, আজও কথা বলেছি। বাংলাদেশে গেলে উনার সঙ্গে নিশ্চিত যোগাযোগ করবো। বাফুফেকে নিয়েই কাজটা করবো, কাউকে অসম্মান করে কিছু করবো না।'
শতদ্রুর উদ্যোগে কলকাতা সফরে আসেন ফুটবলের দুই মহানায়ক পেলে ও ম্যারাডোনা। আরও অনেক তারকাকেই কলকাতা এনেছেন তিনি। মার্তিনেসের সঙ্গে পরিচয় ও তাকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া সম্পর্কে শতদ্রু বলেন, 'আমি এরআগে অনেক ফুটবলারকেই এনেছি। পেলে, ম্যারাডোনা, কাফু, ভালদেরামা; এমন তারকাদের আমি নিয়ে এসেছি। ফুটবলের দুনিয়াটা তো খুব বেশি বড় নয়, যোগাযোগ আর বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়ে গেলে সবই সম্ভব। ফুটবল বিশ্বে যোগাযোগ আর কাউকে আনতে চাওয়ার কারণটা জরুরি। কারণটা ভালোভাবে বোঝাতে পারলে সম্ভব।'
মার্তিনেসের ঢাকা সফর এখনও চূড়ান্ত নয়। তাই ঢাকা এসে তিনি কী করবেন, কোথায় যাবেন; সেটা এখনও ঠিক হয়নি। তবে কলকাতা সফরের সূচি অনেকটাই চূড়ান্ত। ঐতিহ্যবাহী মোহনবাগান ক্লাবে যাবেন মার্তিনেস, ম্যারাডোনার ভাস্কর্যে মালা পরাবেন, উদ্বোধন করবেন ফুটবল ম্যাচের। দেখা করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ভারত ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে। এর বাইরে আরও কিছু কার্যক্রমে অংশ নেবেন মার্তিনেস।