ভুটানকে গুঁড়িয়ে ১৪ বছর পর সাফের সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশ
ভুটানের বিপক্ষে জিতলে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত হতো বাংলাদেশের। দিনের প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে মালদ্বীপ হারায় বাংলাদেশের জন্য সমীকরণ আরো সহজ হয়ে যায়। ড্র করলে, এমনকি হারলেও সেমি-ফাইনাল খেলার সুযোগ আসে লাল-সবুজদের সামনে।
তবে এতসব সমীকরণের ধার ধারেননি হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। ভুটানকে উড়িয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে সাফের সেমি-ফাইনালে উঠেছেণ মোরসালিন-রাকিবরা। ১৪ বছর পর সাফে আবারো শেষ চার নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচেই মালদ্বীপের বিপক্ষে গোল খেয়েও ৩-১ গোলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকেই আত্মবিশ্বাস আসে এই ম্যাচেও। ১২ মিনিটে গোল হজম করেও সেখান থেকে দারুণ এক প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছেন মোরসালিন-রাকিবরা। আর তাতেই মালদ্বীপ ম্যাচের মতো একই ফল ভুটানের বিপক্ষেও। তবে দুই ম্যাচের পার্থক্য হলো ভুটানকে প্রথমার্ধেই তিন গোল দিয়েছে বাংলাদেশ।
জিতলে তো বটেই, ড্র হলেই চলে, এমন সহজ সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটাও ছিলো ইতিবাচক। ম্যাচের ২ মিনিটে পোস্টে প্রথম শট বাংলাদেশের। শেখ মোরসালিনের কাট ব্যাকে সোহেল রানার শট ঠেকান ভুটানি গোলরক্ষক।
ভুটানও কম যায়নি যদিও। ৫ মিনিটের পর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অর্ধে চাপ বাড়াতে থাকে দলটি। তাতেই অঘটন। ১২ মিনিটে হঠাৎ চমকে দিয়ে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন সেনদা দর্জি। বাঁ পায়ের শটটি বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ঠেকানোর কোনো সুযোগই পাননি।
গোল করে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে ভুটান। ১৭ মিনিটে বাংলাদেশের ক্রসবার কাঁপিয়ে দেয় নিমা ওয়াংডির শট। ৩০ গজ দূর থেকে যে শটটি নিয়েছেন নিমা, ক্রসবারে না লাগলে এই গোলটি হতে পারত এবারের সাফের সেরা গোল!
ভুটান খুব বেশিক্ষণ নিজেদের লিড ধরে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশের সমতাসূচক গোলটি আসে ২১ মিনিটে মোরসালিনের দারুণ এক গোল থেকে। বক্সের বাইরে থেকে রাকিব হোসেনের পাস থেকে প্রথম দফায় শট নিতে গিয়ে ব্যর্থ হোন মোরসালিন।
ফিরতি বলে আবারও মোরসালিনের 'ট্রেড মার্ক' বুলেট গতির শট। ভুটানি গোলরক্ষকের গ্লাভসের মাঝখান দিয়ে বল সোজা জালে! মাত্র চতুর্থ ম্যাচে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক গোল ১৭ বছর বয়সী মোরসালিনের, মালদ্বীপ ম্যাচের পর ভুটানের সঙ্গেও গোল পেলেন তিনি।
সমতায় ফিরেই বিধ্বংসী রূপে দেখা দেয় বাংলাদেশকে। মোরসালিনের সঙ্গে রাকিবের দারুণ বোঝাপড়ায় তছনছ হয়ে যায় ভুটানের রক্ষণ। ৩০ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মোরসালিনের হাওয়ায় ভাসানো ক্রস থেকে বলে স্পর্শ করেন রাকিব। সেটি ভুটানের খেলোয়াড় পুনতসো জিগমের গায়ে লেগে আবারও জালে!
দ্বিতীয় গোল হতেই গোলের নেশা যেন চেপে বসে বাংলাদেশি ফুটবলারদের মাথায়। ৩৩ মিনিটে ভুটানি গোলরক্ষককে একা পেয়ে গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন রাকিব। রাকিবের শটে গোলরক্ষক হার মানলেও পোস্টের গা ঘেঁষে বল চলে যায় বাইরে।
তবে তিন মিনিট পরেই সেই আক্ষেপ মেটালেন রাকিব। করলেন মনে রাখার মতো এক গোল। ৩৬ মিনিটে একের পর এক ভুটানি ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডান পোস্টের দুরূহ কোণ থেকে শট নেন রাকিব। সেই শট বাঁ পোস্টে লেগে জড়িয়ে গেল জালে।
দ্বিতীয়ার্ধে আর গোলের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ভুটানও আর কোনো ঝামেলা করতে পারেনি। ফলে ২০০৯ সাফের পর আবারো দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এই টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে উঠল লাল-সবুজের দল। সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ অপর গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল কুয়েত।