অতিরিক্ত সময়ে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের
গল্পটা হতে পারতো অন্যরকম, যদি মোরসালিন ম্যাচ শুরুর দ্বিতীয় মিনিটে কুয়েত গোলরক্ষককে একা পেয়ে তার গায়ে বল না মারতেন। রাকিবের ক্রস থেকে প্রথম স্পর্শেই ছয় গজ বক্সের ঠিক মাঝখান থেকে মোরসালিনের নেওয়া শট কুয়েত গোলরক্ষকের যেকোনো এক পাশে গেলেই এগিয়ে যেতো বাংলাদেশ।
এরপর পুরো ম্যাচেই কোনো গোল হয়নি। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্ত পর্যন্তও কুয়েতের কাছে কোনো গোল হজম করেনি বাংলাদেশ। কিন্তু সেই একই রোগ ফিরে এসে আরেকবার হতাশার সাগরে ডোবালো বাংলাদেশকে।
শক্তিশালী কুয়েতের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেও সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিলো হাভিয়ের কাবরেরার দল। র্যাংকিংয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা দল কুয়েতের সঙ্গে সমানে সমান লড়াই করেছে বাংলাদেশ। প্রথমার্ধে তো সোহেল রানা-বিশ্বনাথরাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন শারীরিক এবং ফুটবলীয় সামর্থ্যে এগিয়ে থাকা কুয়েতের ওপর।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। শক্তিশালী কুয়েতের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে লড়াকু এক বাংলাদেশের দেখাই মিলল। সমানভাবে লড়েছে দুই দল। তাতে নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে অমীমাংসিত থাকে ম্যাচের ফল।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে কুয়েতের বিপক্ষে এবারের সাফে নিজেদের সেরা খেলাটা উপহার দিয়ে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইকে ১২০ মিনিট পর্যন্ত নিয়ে গেছে বাংলাদেশ। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় কেউ কাউকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ-কুয়েত। কিন্তু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলাতেই সর্বনাশটা হলো বাংলাদেশের।
ম্যাচ শুরু হতেই গোল না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়েছে বাংলাদেশ। মাত্র ২ মিনিটের মাথায় কুয়েত গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি শেখ মোরসালিন। ডান প্রান্ত থেকে কুয়েতের রক্ষণ ভেঙে দারুণ এক বল বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের নাম্বার ১০ রাকিব। সেই পাস থেকে প্রথম স্পর্শেই মোরসালিন কি না মারলেন গোলরক্ষকের শরীরে!
নিজেদের প্রথম সুযোগে গোল পেতে পারত কুয়েতও। ৭ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে জটলা তৈরি হয় বাংলাদেশের বক্সে। হেড নিয়েছিলেন কুয়েতের সালমান মোহাম্মদ। সেই হেড বলে জালে জড়ানোর আগেই গোল লাইন থেকে বল ফিরিয়ে দেন ইসা ফয়সাল।
বলের নিয়ন্ত্রণ কুয়েত নিজেদের পায়ে রাখলেও সুযোগ পেলেই আক্রমণে গিয়েছে বাংলাদেশ। ২৮ মিনিটে ২৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে শট নেন রাকিব হোসেন। যদিও খুব বেশি বিপদজনক ছিলো না সেটি। পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ওঠে কুয়েত। ফরোয়ার্ড ঈদ আল রশিদির শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকান বাংলাদেশ গোলরক্ষক জিকো।
৩১ মিনিটে আবারও আক্রমণ করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। এবার বাঁ প্রান্ত দিয়ে বক্সে বল বাড়ান মোরসালিন। বক্সে থাকা রাকিব বলে পা ছোঁয়ানোর আগেই কুয়েতের ডিফেন্ডার বিপদমুক্ত করেন দলকে।
প্রথমার্ধের অন্তিম মুহূর্তে আবারো ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন রাকিব হোসেন। ভুটান ম্যাচের মতো এবারও নিয়েছিলেন 'জিরো অ্যাঙ্গেল' শট। তবে এবার আর বল জালে জড়াতে পারেননি রাকিব।
৫৪ মিনিটে আবারো আক্রমণে রাকিব। মাঝমাঠ থেকে একের পর এক কুয়েত খেলোয়াড়দের কাটিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ে বুলেট গতির শট নেন রাকিব। বাংলাদেশের এবারও দুর্ভাগ্য, অল্পের জন্য বল খুঁজে পায়নি জাল।
রাকিব ছিলেন যেন অবাধ্য ঘোড়া। এই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রায় সব আক্রমণই এসেছে তার মাধ্যমে। ৬১ মিনিটে আবারো দুর্ভাগ্যের শিকার তিনি। জামালের পাস ধরে মোরসালিনের বাড়ানো বলে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন রাকিব। তার ডান পায়ে নেওয়া শট ক্রসবারে লেগে চলে যায় মাঠের বাইরে।
এরপর এক মিনিটে দুবার বাংলাদেশকে গোল হজম করা থেকে বাঁচিয়েছেন গোলরক্ষক জিকো। ৬৩ মিনিটে আহমেদ আলদেফারির ফ্রি কিক ফিস্ট করে ঠেকান জিকো। পরের মিনিটে আল রশিদির শটও ফেরান জিকো। ৬৯ মিনিটে বাংলাদেশকে প্রায় বিপদেই ফেলে দিয়েছিলেন কুয়েতের বদলি ফুটবলার আথবি সালেহ। বক্সের বাইরে থেকে তার শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে যায় বাইরে।
দুই দলই এত এত আক্রমণ করে গোল না পেলেও মাঠে বাইরে বাড়তে থাকে উত্তাপ। সেই উত্তাপে ঘি ঢালেনবাংলাদেশের স্প্যানিশ ফিজিও দাভিদ মাগান। রেফারির দিকে কটূক্তি করে লাল কার্ড দেখেন তিনি।
৮৮ মিনিটে গোলের সুবর্ণ আরেকটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি রাকিব। ডান প্রান্ত দিয়ে বদলি ফরোয়ার্ড ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের ক্রস থেকে রাকিব বল মাথা ছোঁয়াতে পারলেই চলত।
১০৫ মিনিটে কুয়েতের রাইট-ব্যাক আবদুল্লাহ আল ব্লাউসি করেছেন ম্যাচের একমাত্র গোলটি। তার গড়ানো শট বাংলাদেশের সেন্টার-ব্যাক তপু বর্মণের দুই পায়ের ফাঁক গলে জালে ঢুকে যায়। এ ম্যাচে 'চীনের প্রাচীর' হয়ে ওঠা বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান বলের গতিটা ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। তাকে কিছুটা বিভ্রান্ত করে বল জালে যেতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে কুয়েত।
সাফে প্রথমবার অতিথি দল হিসেবে খেলতে নেমেই কুয়েত উঠে গেছে ফাইনালে। আজই দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ভারত-লেবানন ম্যাচের জয়ী দলের বিপক্ষে ফাইনালে মুখোমুখি হবে কুয়েত।