ব্রাজিলে যখন মেয়েদের ফুটবল খেলা নিষিদ্ধ ছিলো!
সুন্দর ফুটবলের পূজারি তারা, জোগো বনিতোর ছন্দে পুরো বিশ্বকে মাত করেছে ব্রাজিলের ফুটবল। পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার একক অর্জনও আছে সাম্বা নাচের জন্য বিখ্যাত দেশটির।
সেই ব্রাজিলেই কিনা ফুটবল খেলার জন্য পুলিশের কাছে আটক হওয়ার ঘটনা ঘটেছে অহরহ! বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, এমনটিই ব্রাজিলের নিত্যদিনের ঘটনা।
তবে সেটি এখনকার সময়ে নয়। আর গ্রেপ্তারও শুধুমাত্র নারীদেরকেই করা হতো। বলছি, ১৯৭৯ এর আগ অব্দি চার দশকের কথা। যে সময়টাতে ব্রাজিলে নারীদের ফুটবল খেলা ছিলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ!
সেই সময়েরই ফুটবল খেলে পুলিশের কাছে আটক হওয়া দিলমা মেন্ডেস স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, কতবার পুলিশ তাকে ফুটবল খেলার 'অপরাধে' গ্রেপ্তার করেছে, তার হিসাব তিনি নিজেও জানেন না।
১৯৭০ এর দশকে নিজে ফুটবল খেলার জন্য সতীর্থ ছেলেদেরকে আইসক্রিম কিনে দিতে হতো দিলমাকে। আর এই আইসক্রিম ছিলো আদতে ঘুষ! যেন আশেপাশে পুলিশের নামগন্ধ পেলেই দিলমাকে সতর্ক করে দেন, সেজন্য ছেলেদেরকে এভাবেই আয়ত্তে রাখতে হতো।
পুলিশের নিশানা দেখলেই মাঠের পাশে নিজেরই করে রাখা গর্তে লুকোতেন দিলমা। এরপর পুলিশ চলে গেলে ছেলেদের সঙ্গে খেলতেন তিনি। তবে সবসময় যে তার ছেলে বন্ধুরা খেলতে নিতেন, তা নয়। মাঝেমধ্যেই নিজেকে থানায় আবিষ্কার করেছেন দিলমা।
অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের যৌথ আয়োজনে মেয়েদের বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হচ্ছে সামনের সপ্তাহেই। এটিকে সামনে রেখেই নিজের ফুটবলার হওয়ার পেছনের কঠিন সংগ্রামের গল্প বললেন ৫৯ বছর বয়সী দিলমা, 'আমি ভাবতাম, পুলিশ শুধু যারা অপরাধী তাদেরকেই ধরে। আমার কখনোই মনে হয়নি, আমি কোনো অপরাধ করছি।'
পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেলেও কখনো খারাপ আচরণ করতো না বলে জানান দিলমা, 'আমার সাথে তারা কোনোদিনো বাজে আচরণ করেনি। তবে কেউ কেউ বলতো, আমি ফুটবল খেলতে পারব না। কারণ, এটা শুধু পুরুষদের খেলা!'
১৯৪১ সালে ব্রাজিলের তখনকার প্রেসিডেন্ট, গিতোলিও ভারগাস মেয়েদের ফুটবল খেলা সহ অন্যান্য খেলায় অংশ নেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, খেলাধুলা করলে মেয়েদের বাচ্চা জন্মদানের সময় শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। ১৯৭৯ পর্যন্ত এই আইন কার্যকর ছিলো।
নির্দিষ্ট কোনো শাস্তির বিধান ছিলো না এই আইনে। যেই পুলিশ কর্মকর্তা কোনো নারীকে ফুটবল খেলার 'অপরাধে' আটক করতেন, সেই কর্মকর্তার ওপরই সাজা দেওয়ার উপায় বা পরিমাণ নির্ভর করতো।
তবে কখনো কারোর জেল খাটা বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ধরে আনার পর জিজ্ঞেসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হতো নারীদেরকে।
এরপরেও খেলা থামায়নি ব্রাজিলের অদম্য নারীরা। সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যপটেরও পরিবর্তন হয়েছে। সেই আইনের পরিবর্তন ঘটেছে। বিশ্বে নারী ফুটবল হয়ে উঠেছে জনপ্রিয়।
ব্রাজিলের নারী ফুটবল দল এবার তাদের নবম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। নারী ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতাও ব্রাজিলেরই, মেয়েদের ফুটবলের পেলে বলে পরিচিত মার্তা ১৭টি গোল করেছেন বিশ্বকাপে।