বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিদায় বলতে কেন ভয় পান, বোঝেন না সুজন
তিন বছর ধরে না খেললেও ওয়ানডে থেকে এখনও অবসর নেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় টস করতে নেমে হঠাৎ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বিদায় বলেন সাবেক এই অধিনায়ক। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাঠের বাইরে থেকে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের টেস্ট অবসরও এমন। অর্থাৎ, এসব ক্রিকেটারের কেউ-ই আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে শেষ ম্যাচ খেলেননি।
এই প্রজন্মে এমন হলে বাংলাদেশের আগের ক্রিকেটারদের বিদায় পর্ব কেমন ছিল, তা না বলে দিলেও চলে। মাঠ থেকে বিদায় নেওয়ার সুযোগ হয়নি বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই। খালেদ মাহমুদ সুজন কেবল ব্যতিক্রমের তালিকায়, ২০০৬ সালে বিদায় বলেন তিনি। এখন পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার সুজনই। তার সময়ে বাকিরা না পারলেও তিনি পেরেছেন।
এ কারণেই সাবেক এই অধিনায়ক বুঝে উঠতে পারেন না, বাংলাদেশের এই প্রজন্মের ক্রিকেটাররা কেন বিদায় বলতে পারেন না। কিংবা তাদের ভয় কীসের। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলে থাকা না থাকা, তার অবসরসহ ঠিক সময়ে অন্যদের ক্রিকেট ছাড়তে না পারার বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার মিরপুর স্টেডিয়ামে সুজন বলেন, 'আমার তো ছিল। আমি তো মাঠ থেকেই বিদায় দিয়েছি। আমি বুঝতে পেরেছি আমার সময় শেষ, ইয়াংস্টাররা এসেছে। আমি যদি না ছাড়ি তাহলে নতুন মুখরা কীভাবে আসবে, এটাও একটা বড় কথা।'
'তো এটা খেলোয়াড়দের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলার জন্য (বিদায়) কোনটা ঠিক সময়, এটা খুব কঠিন। কারণ আমিও ছিলাম ওই মুহূর্তটায়। কারণ খেলা ছাড়াটা ভালোবাসা ছেড়ে দিয়েছিলাম। রিয়াদদের মতো এতো প্রফেশনাল ছিলাম না। এতো টাকা পেতাম না, আমরা খুব অল্প টাকায় খেলেছিলাম। ওটা তখন আমাদের ভালোবাসা ছিল, পেশা ছিল না। আমরা ছাড়তে পেরেছি। আমি জানি না কেন আমাদের এই প্রজন্মের ছেলেরা এটা ছাড়তে পারে না, কেন ভয় পায়।' যোগ করেন তিনি।
জায়গাটা স্থায়ী নয়, একটা সময়ে যে ছাড়তেই হয়; নিজের সতীর্থদের উদাহরণ টেনে তা মনে করালেন বিসিবির এই পরিচালক, 'একটা সময় ছাড়তে হবে। আকরাম ভাই ছেড়েছেন, নান্নু ভাই বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন, ছেড়েছেন। হাবিবুল বাশারকে মিস্টার ফিফটি বলা হতো, বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন্সি করেছে, রান করেছে অনেক। সবাই ছেড়েছে।'
সাবেক এই ক্রিকেটার মনে করেন, কখন ছাড়তে হবে; এটা নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকেই জানতে হবে। তার ভাষায়, 'স্টুয়ার্ড ব্রড এখনও ইংল্যান্ড দলে খেলতে পারত না? ও ছাড়ল কেন? আমার কথা হচ্ছে এটাই; ইউ হ্যাভ টু নো, হোয়েন ইউ হ্যাভ টু গিভ আ ফুলস্টপ। এটা আপনাকে জানতে হবে। সব খেলোয়াড়ের প্রতি সম্মান রেখেই আমি বলছি, এটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা কেউ জোর করতে পারব না। "এই তোমার অবসর নেওয়ার বয়স হয়েছে", এই কথাটা বলার অধিকার আমাদের কারও নাই।'
'তারা এটা নিয়ে ভাববে যে, 'আমার অবসর নেওয়া উচিত নাকি আমার খেলা উচিত"। যদি মনে করে "না আমার আরও খেলা উচিত, আমি আরও দুই তিন বছর খেলব", সেটা ঠিক আছে। আপনি এটা বলতে পারবেন না যে, কেউ আপনাকে বাদ দিতে পারবে না। আপনি বাদ পড়তে পারেন, আপনার ফর্ম আপনার সব কিছু বিবেচনা করলে। আপনার জায়গায় অন্য ছেলেকে সুযোগ দিতে পারে। আসলে এইগুলো অনেক তর্কের ব্যাপার।' বলেন সুজন।
মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাহমুদউল্লাহদের অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এই জায়গায় নিয়ে আসতে কিন্তু মাশরাফি, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, তামিম, মুশির অবদান অনেক। আমরা অকপটে স্বীকার করি। কিন্তু এরা তো সারাজীবন বাংলাদেশ দলে খেলবে না। মাশরাফিখেলছে না বা মুশি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট ছেড়েছে। তামিম ছেড়ে দিয়েছে একটা ফরম্যাট। এভাবে আমাদের আস্তে আস্তে সবাইকে গুটিয়ে আনতে হবে। ওরা গুটিয়ে গেলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যাবে, তাহলে তো হবে না।'
সর্বশেষ তিন ওয়ানডে সিরিজে দলের বাইরে থাকা মাহমুদউল্লাহ এশিয়া কাপের স্কোয়াডে নেই। সুজনের বিশ্বাস লড়াই করে ফিরবেন তিনি। নির্বাচকরা ক্রিকেটারদের শত্রু নয় উল্লেখ করে সুজন বলেন, 'আমি এখনও বিশ্বাস করি, রিয়াদের লড়াই করার সামর্থ্য আছে। ও লড়াই করে ফিরবে। সামনে খেলা আছে ঢাকা লিগে, জবাবে দেবে। আমি এটাও বলি জবাব, প্রমাণ, এগুলো ভুল কথা। ক্রিকেটার নিজস্ব মেধা দিয়ে খেলবে, বাছাই করার জন্য নির্বাচক প্যানেল আছে। আপনারা কি বলবেন নান্নু, বাশার, রাজ্জাক ওরা আমাদের শত্রু! রাজ্জাক আর রিয়াদ তো এক দলে খেলেছে, এগুলো আসলে ভুল কথা।'