ডাচদের হারিয়ে প্রথম জয়ের স্বাদ নিল শ্রীলঙ্কা
প্রথম ম্যাচে ৩২৬ রান করেও ১০২ রানের বড় ব্যবধানে হারে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে রান পাহাড় গড়েও লাভ হয়নি, বিশ্বকাপ ইতিহাসের রেকর্ড রান তাড়ায় ম্যাচ জিতে নেয় পাকিস্তান। তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেই হারানো লঙ্কানরা সামান্যতম লড়াইও করতে পারেনি। দারুণ ব্যাটিং করেও জিততে না পারার আক্ষেপে পুড়ছিল ৯৬'র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। অবশেষে শ্রীলঙ্কার হারের অধ্যায় শেষ হলো। নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম জয়ের স্বাদ নিলো তারা।
শনিবার লক্ষ্ণৌর ভারত রত্ন শ্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ডাচদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। চার ম্যাচে এক জয়ে পয়েন্ট টেবিলে এক ধাপ এগিয়ে নয়ে উঠলো তারা। সমান ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের জয়ও একটি, তবে রেটে এগিয়ে থাকায় শ্রীলঙ্কার উপরে ডাচরা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করা নেদারল্যান্ডস চরম বিপর্যয়ে পড়ে, ১০০ রানের আগেই ৬ উইকেট হারায় তারা। এখান থেকে হাল ধরে রেকর্ড জুটি গড়েন সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট ও লোগান ভ্যান বিক। এ দুজনের হাফ সেঞ্চুরির কল্যাণে ৪৯.৪ ওভারে ১০ উইকেট ২৬২ রান তোলে ডাচরা। বিশ্বকাপে আগে ব্যাটিং করা ম্যাচে এটা তাদের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ। জবাবে পাথুম নিসাঙ্গার হাফ সেঞ্চুরির পর চারিথ আসালাঙ্কা ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে দুটি জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে জয় এনে হার নামা অসাধারণ এক ইনিংস খেলা ম্যাচসেরা সাদিরা সামারাবিক্রমা।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৮ রানেই ওপেনার কুশল পেরেরাকে হারায় শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসও এদিন টিকতে পারেননি। ৫২ রানে দুই উইকেট হারানো দলকে ১০২ রান পর্যন্ত এগিয়ে দেন নিসাঙ্কা ও সামারাবিক্রমা। ৫২ বলে ৯টি চারে ৫৪ রান করে আউট হন নিসাঙ্কা। তার বিদায়ের পর আসালাঙ্কার সঙ্গে ৭৭ রানের জুটি গড়েন। ৬৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৪ রান আসালাঙ্কাকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন আরিয়ান দত্ত।
এরপরও দলকে চাপ বুঝতে দেননি দারুণ ব্যাটিং করে আসা সামারাবিক্রমা। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান পঞ্চম উইকেটে ধনঞ্জয়ার সঙ্গে গড়েন ৭৬ রানের জুটি। ধনঞ্জয়া ৩০ রান করে ফেরার পর দুসান হেমন্তকে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজটি সারেন সামারাবিক্রমা। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ১০৭ বলে ৭টি চারে ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন। নেদারল্যান্ডসের আরিয়ান ৩টি এবং মেকেরেন ও অ্যাকারম্যান একটি করে উইকেট পান।
এর আগে শ্রীলঙ্কার পেসার কাসুন রাজিথার দারুণ বোলিংয়ের মুখে ডাচদের শুরুটা হয় চরম অগোছালোভাবে। দলীয় ৭ রানেই ফিরে যান ওপেনার বিক্রমজিত সিং। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে অবশ্য চাপ কাটিয়ে তোলেন ম্যাক্স ও'দাউদ এবং কলিন অ্যাকারম্যান। ৩৮ বলে ৪১ রান যোগ করেন এ দুজন। ১৬ রান করা ও'দাউদকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন রাজিথা। ২৯ রান করা অ্যাকারম্যানকেও একটু পর সাজঘর দেখিয়ে দেন নেদারল্যান্ডসের প্রথম তিন উইকেট তুলে নেওয়া ডানহাতি এই পেসার।
দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ডাচরা যখন দিকহারা, তখন আঘাত হানতে শুরু করেন মাদুশঙ্কা। লঙ্কান এই বাঁহাতি পেসার তিন রানের ব্যবধানেই ফিরিয়ে দেন বাস ডে লেডে ও তেজা নিদামানুরুকে। কিছুক্ষণ পর ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসকে ফিরিয়ে নেদারল্যান্ডসের বিপদ আরও বাড়ান মাহিশ থিকশানা। ৯১ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে অল্পতেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় দলটি।
এমন সময়ে আলোক বর্তিকা হাতে দেখা মেলে এঙ্গেলব্রেখট ও ভ্যান বিকের। চাপি কাটিয়ে দ্রুতই উইকেটে মানিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে থাকেন এ দুজন। সপ্তম উইকেট তারা ১৪৩ বলে ১৩০ রানের জুটি গড়েন। যা বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের সেরা জুটি, যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি। দলীয় ২২১ রানে মাদুশঙ্কার তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ৮২ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৭০ রান করা এঙ্গেলব্রেখট।
৪৯ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করা ভ্যান বিক ৭৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ৫৯ রান করে আউট হন। নেদারল্যান্ডসের কেবল চারজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন। মাদুশঙ্কা ৯.৪ ওভারে ৫৪ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। রাজিথার শিকারও ৪ উইকেট, ৯ ওভারে ৫০ রান দেন তিনি। ১০ ওভারে ৪৪ রানে একটি উইকেট নেন থিকশানা।