সাকিবদের রংপুরের বিপক্ষে সহজেই জিতল তামিমের বরিশাল
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় দিনে ফরচুন বরিশাল ও রংপুর রাইডার্সের লড়াই। দুই দলেই তারকা ক্রিকেটার থাকায় ম্যাচটি নিয়ে দর্শকদের মাঝে তুমুল আগ্রহ ছিল। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি প্রায় ভরে উঠেছিল। এই আগ্রহের কারণ অবশ্য কেবল ম্যাচ নয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা যে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবালের মাঝেও ছিল।
জাতীয় দলে এ দুজনের সম্পর্ক মধুর নয়, এটা এখন সবারই জানা। তাদের সম্পর্কের বৈপরীত্য নিয়ে কথা বলেছেন খোদ বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তাই এই দুজনের মাঝেও প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাল্পনিক রেখা টেনে নিয়েছিল দর্শকরা। রাসেল মামুন নামের এক দর্শক মাঠে ঢোকার সময় বলছিলেন, 'লড়াই-ই তো সাকিব-তামিমের, বরিশাল-রংপুর তেমন বড় ম্যাচ নয়।'
ম্যাচটি অবশ্য তেমন জমেনি। শনিবার মিরপুরে সাকিবদের রংপুর রাইডার্সকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে তামিমের দল ফরচুন বরিশাল। শক্তিশালী দল গড়ে দারুণ কিছুর আশায় থাকা দলটির শুরুটা মনমতোই হলো। ম্যাচের মতো সাকিব-তামিম লড়াইও জমেনি। তামিমকে বল করেছেন সাকিব। তামিম কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি, আবার সাকিবও পারেননি তামিমের পরীক্ষা নিতে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা রংপুর বড় সংগ্রহ গড়তে পারেনি। বরিশালের খালেদ আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, দুনিথ ভেল্লালাগেদের বোলিং তোপে ৯ উইকেট ১৩৪ রান তোলে নুরুল হাসান সোহানের দল। জবাবে তামিমের ৩০ ছাড়ানো ইনিংসের পর মুশফিকুর রহিম, শোয়েব মালিক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের ব্যাটে ৫ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত হয় বরিশালের।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালোই হয় বরিশালের। উদ্বোধনী জুটিতে ৪.২ ওভারে ৩২ রান পায় তারা। কিছুটা ভুগতে থাকা ইব্রাহিম জাদরান ১৬ বলে ১২ রান করে বিদায় নেন। দ্বিতীয় উইকেটে ২১ বলে ৩৪ রান যোগ করে চাপ কাটান দীর্ঘদিন পর খেলতে নামা বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তামিমের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি, ২৪ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করেন প্রায় চার মাস পর ম্যাচ খেলা অভিজ্ঞ এই ওপেনার।
পরের ওভারেই থামেন সৌম্য সরকার। হাসান মুরাদের বলে শট খেলতে গিয়ে টপএজ হয় তার, সহজ ক্যাচ লুফে নেন নবী। মুশফিকুর রহিম ও মিরাজ চাপ সামলান, যোগ করেন ২৭ রান। ধীর-স্থির মেজাজে খেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি মিরাজ। ১৮ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২০ রান করেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার।
এরপর বরিশালের জয়ের পথ সহজ হয়ে যায়, মনে হচ্ছি মুশফিক ও মালিকের ব্যাটে জয় নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। কিন্তু ১৭তম ওভারে বিদায় নেন ২৭ বলে ২টি চারে ২৬ রান করা মুশফিক। জয় তুলে নেওয়ার বাকি কাজটুকু সারেন মালিক ও মাহমুদউল্লাহ । মালিক ১৮ বলে ২টি চারে ১৭ ও ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১১ বলে ২টি ছক্কায় ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ। রংপুরের সাকিব ও হাসান মুরাদ ২টি করে উইকেট নেন। একটি উইকেট পান মোহাম্মদ নবী।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা রংপুর রাইডার্সের শুরুটা হয় চরম অগোছালোভাবে। স্কোরকার্ডে রান যোগ হওয়ার আগেই ফিরে যান ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং। ইনিংসের প্রথম বলেই তার স্টাম্প উপড়ে নেন বরিশালের পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ ইমরান। শুরুর চাপ কাটিয়ে ওঠার আগেই বিপদ বাড়ে রংপুরের।
দ্বিতীয় ওভারে তোপ দাগেন খালেদ। ডানহাতি এই পেসার এক বলের ব্যবধানে ফিরিয়ে দেন রনি তালুকদার ও সাকিব আল হাসানকে। ১৫ রানেই ৩ উইকেট হারানো দলটি ৩০ পেরিয়ে আরেকটি উইকেট খোয়ায়, এবার বিদায় নেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই।
৩১ রানে ৪ উইকেট, রংপুর তখন দিকাহারা। এখান থেকে ধরে ৩৪ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে আউট হন ২৩ বলে ২টি চারে ২৩ রান করা সোহান। শামীম একপাশ আগলে খেলতে থাকেন, তাকে কিছুটা সময় সঙ্গ দেন নবী। আফগান অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার ১০ রান করেন।
শামীমের সঙ্গে ২৯ রানের জুটি গড়েন শেষ দিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়ানো শেখ মেহেদি হাসান। শামীম ৩৩ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৪ রান করেন। ১৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান আসে মেহেদির ব্যাট থেকে। দারুণ বোলিং করা বরিশাল পেসার খালেদ ৪ ওভারে ৩১ রানে ৪টি উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান মিরাজ। একটি করে উইকেট নেন ইমরান, ভেল্লালাগে ও শোয়েব মালিক।