মেয়ার্স দ্যুতিতে সিলেটকে হারিয়ে প্লে-অফের আরও কাছে বরিশাল
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম হয়তো কাইল মেয়ার্সের কাছে 'তীর্থস্থান'- এর মতো। এই ম্যাঠেই যে রূপকথার রাজকুমার হয়ে দেখা দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ক্রিকেটার। টেস্ট অভিষেকেই ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়ে জিতিয়েছিলেন দলকে, রেকর্ড বইয়ে নিজের নামটি লিখে নিয়েছিলেন অমর কালিতে। সেই চট্টগ্রামে আবার দ্যুতি ছড়াতে দেখা গেল মেয়ার্সকে। তার অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে সহজেই সিলেট স্ট্রাইকার্সকে হারালো ফরচুন বরিশাল।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) শনিবার সিলেটকে ১৮ রানে হারিয়েছে বরিশাল। ১০ ম্যাচের ছয়টিতে জিতলো তামিম ইকবালের দল। ১২ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে থাকা দলটি পৌঁছে গেল প্লেঅফের আরও কাছে। আরেকটি হারে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেল সিলেটের। বাকি থাকা দুই ম্যাচে জিতলেও তা কাজে আসার সম্ভাবনা একেবারেই কম। ১০ ম্যাচে তিন জয়ে ছয় পয়েন্ট নিয়ে তালিকার ছয় নম্বর দল বিপিএলের বর্তমান রানার্সআপরা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুন বরিশাল। ম্যাচসেরা মেয়ার্স ও মুশফিকুর রহিমের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে আরও কয়েকটি ছোট ছোট ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৮৩ রান তোলে তারা। জবাবে মেয়ার্সের বোলিং দাপটে শুরুতেই দিক হারানো দলকে আর ঠিক পথে ফেরাতে পারেননি দারুণ ব্যাটিং হাফ সেঞ্চুরি করা বেনি হাওয়েল ও আরিফুল হক। রেকর্ড জুটি গড়েও হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় এই দুই ব্যাটসম্যানকে। ৮ উইকেটে ১৬৫ রানে থামে সিলেটের ইনিংস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই মেয়ার্সের তোপে পড়ে সিলেট। প্রথম ওভারেই হ্যারি টেক্টর ও নাজমুল হোসেন শান্তকে ফিরিয়ে দেন মেয়ার্স। কোনো রান না দিয়েই দুই উইকেট নেন ডানহাতি এই ক্যারিবীয় পেসার। দলীয় ১৮ রানে জাকির হাসান রান আউটে কাটা পড়েন, এরপর আবারও মেয়ার্সের শাসন। এবার তার শিকার সিলেট অধিনায়ক মোহাম্মদ মিথুন। ৩৩ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে সিলেট তখন মাঝ দরিয়ায়।
এক রান পরই তাদের বিপদ আরও বাড়ে, অ্যাঞ্জেলো পেরেরাকে ফিরিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার কেশব মহারাঝ। ৫ রান পর রায়ান বার্লও সাজঘরে, ৪০ রানেই ৬ উইকেট হারায় সিলেট। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলকে পথ দেখানোর দায়িত্ব নেন হাওয়েল ও আরিফুল। সপ্তম উইকেটে দুর্বার ব্যাটিংয়ে ৫২ বলে ১০৮ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। বিপিএলে সপ্তম উইকেটে এটাই প্রথম শতরানের জুটি। রেকর্ড গড়লেও দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়নি তাদের।
১৯তম ওভারে আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫৭ রান করেন আরিফুল, বিপিএলে এটাই তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের এই ঘরোয়া আসরে দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া হাওয়েল ৩২ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন। এ ছাড়া পেরেরা ১৭ ও অধিনায়ক মিথুন ১০ রান করেন। বাকিদের কেউ দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। ৪ ওভারে এক মেডেনসহ মাত্র ১২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন ম্যাচসেরা মেয়ার্স। একটি করে উইকেট পান মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, ওবেদ ম্যাকয়, কেশব মহারাজ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
এর আগে ব্যাটিং করা বরিশালের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পান। বাকিরা ইনিংস বড় করতে না পারলেও মেয়ার্স ও মুশফিক পেরেছেন। ৩২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৫২ রান করেন মুশফিক। ৩১ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় মেয়ার্স করেন ৪৮ রান। এ ছাড়া তামিম ১৯, আহমেদ শেহজাদ ১৭, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১২* ও মিরাজ ১৫ রান করেন। সিলেটের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব খরুচে হলেও ৩টি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ৪৮ রান দেন তিনি। একটি করে উইকেট পান শফিকুল ইসলাম ও হ্যারি টেক্টর।