আগে যা পারেননি, বিশ্বকাপে তা করতে চান জাকের
আগে থেকেই আলোচনা ছিল তাকে নিয়ে। গত বিপিএল দিয়ে ভালোভাবে আলোচনায় আসেন জাকের আলী অনিক। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে কার্যকরী কিছু ইনিংস খেলা উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যানকে শুরুতে অবশ্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বিবেচনা করা হয়নি। গত মার্চে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সেই সিরিজে স্পিনার আলিস আল ইসলামের চোটে ডাক পান জাকের। আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত, ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩৪ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি।
পাওয়ার হিটিং করতে জানা জাকির হয়ে ওঠেন নিয়মিত সদস্য। ওই সিরিজের বাকি দুই ম্যাচসহ ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপের আয়োজকদের বিপক্ষেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পান তিনি। গত বছরের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর এই ফরম্যাটে ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন জাকের। আরেকটু পথ মারিয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণের পথে হবিগঞ্জের এই ক্রিকেটার।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে বড় স্বপ্ন জাকেরের, দেশের করতে চান বড় কিছু। আগে যা করতে পারেননি, এবার বিশ্বমঞ্চে তেমন কিছু করতে প্রত্যয়ী ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। মঙ্গলবার বিসিবির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিওতে তিনি বলেছেন, 'আমি চাইব, দল হিসেবে আমরা প্রতিটা ম্যাচে ভালো পারফরম্যান্স করে দেখাতে এবং জিততে। নিজের দেশের জন্য বড় কিছু করার ইচ্ছা আছে। এই বিষয়টা সব সময় ভাবনায় কাজ করে। ইচ্ছা থাকবে, আগে যেসব জিনিস অর্জন করতে পারিনি, সেসব যেন এবার অর্জন করতে পারি।'
বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়েছে, এই খবর শুনতেই পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করে দেন জাকের। ম্যাচ দেখে দেখে ঠিক করেছেন, কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোন কৌশলে খেলতে হবে। তার ভাষায়, 'যখন থেকে শুনলাম যে আমি দলে আছি, তখন থেকেই ম্যাচ বাই ম্যাচ দেখা শুরু করে দিয়েছি। কার সঙ্গে কীভাবে খেলতে হবে, কোন প্রতিপক্ষের সঙ্গে কী রকম কৌশলে নিতে হবে, সেগুলো নিয়ে ভাবছি। সেভাবেই আগাচ্ছি।'
বাংলাদেশের এবারের বিশ্বকাপ দলটি তারুণ্য নির্ভর, এদের একজন জাকের। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অন্যান্যদের তুলনায় একটু দেরিতে সুযোগ পেলেও দ্রুতই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যে পরিণত হয়েছেন তিনি। দলে মানিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে জাকের বলেন, 'যেভাবে দলে আমাকে স্বাগত জানানো হয়েছে, সেটা আমার খুব ভালো লেগেছে। সেটা আসলেই বিশেষ কিছু ছিল।'
দল নিয়ে প্রত্যাশা, নিজের বিশ্বকাপ পরিকল্পনা ছাড়াও ক্রিকেটে বেড় ওঠার গল্প শুনিয়েছেন জাকের। তিনি বলেন, 'ক্রিকেট দেখেই ক্রিকেটে আসা। ২০০৭ সাল থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট খুব ভালোভাবে অনুসরণ করি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই বিশ্বকাপ থেকে ক্রিকেটটা ভালোভাবে বোঝা শুরু করি। তখন থেকেই আসলে ইচ্ছে ছিল যে বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলব। দেশের হয়ে খেলাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। সেটা যদি বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে হয়, তবে তো আরও ভালো।'
জাকেরের স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলে খেলা, তার মায়েরও ছিল একই স্বপ্ন। মায়ের স্বপ্ন পূরণেই বেশি আনন্দ তার, 'কাছের সবাই খুব গর্ববোধ করে। আম্মার স্বপ্ন ছিল, আমি দেশের হয়ে খেলব। উনি সব সময় বলতেন, "তোর তামিম ভাই, সাকিব ভাই, মাশরাফি ভাইদের দলে তুই কবে খেলবি।" এটাই আমার আম্মার স্বপ্ন ছিল। আর এখন উনি খুব গর্ববোধ করেন। আব্বা যতো দিন ছিলেন, তিনি মাঠে বসে থাকতেন। আব্বা যখন থাকতেন না, আমার বোন নিয়ে যেতো।'
বড় ভাইকে দেখেই মূলত ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় জাকেরের। শুরু করে দেন খেলা, এরপর বিকেএসপি হয়ে কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে জাতীয় দল। পথচলায় সমর্থন পাওয়া সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জাকের বলেন, 'আমার বড় ভাইকে দেখে ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। আমি যখন ক্রিকেট দেখা শুরু করি, সে সময় আমার ভাইও ক্রিকেট খেলতেন।'
'এসব কারণে সবার ভালো সমর্থন পেয়েছি। আমি ২০১০ সালে বিকেএসপিতে ট্রায়াল দিই, এখানে আসার পরই স্বপ্নগুলো বড় হতে থাকে। শুরুতে স্বপ্ন এতো বড় ছিল না। তবে এখানে এসে যখন বড় ভাইদের দেখলাম, তখন মনে হলো স্বপ্নগুলো বড় করতে হবে। যদি আমি হবিগঞ্জে বসে থাকতাম, আমার মনে হয় না এতো দূর আসতে পারতাম।' যোগ করেন তিনি।