‘বড় টুর্নামেন্টে বড় লক্ষ্য থাকা উচিত’
প্রতিপক্ষ ভেদে পরিকল্পনার ভিন্নতা থাকে। একইভাবে প্রত্যাশার ঘুড়িতেও থাকে লাগাম। কিন্তু বিশ্বকাপ এগিয়ে এলেই বাংলাদেশ দল নিয়ে প্রত্যাশার বেলুন ফুলেফেঁপে ওঠে। প্রিয় ফরম্যাট বলে ওয়ানডেতে থাকে আকাশচুম্বী আশা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও কম আশা করা হয় না। কিন্তু এই চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে চান নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ভক্ত-দর্শকদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ অধিনায়কের আর্জি ছিল, এবার যেন তারা বেশি প্রত্যাশা না রাখেন।
চাপের বোঝা না বইতেই যেন শান্তর এই অনুরোধ। যদিও ব্যাপারটির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তিনি মনে করেন, বড় টুর্নামেন্টে বড় লক্ষ্য থাকা উচিত। আত্মবিশ্বাসে কিছুটা পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে এবার বেশি প্রত্যাশা করা হচ্ছে না, এটাও বুঝতে পারছেন বাশার। এটাকে তিনি মন্দের ভালো বলছেন। তবে প্রথম রাউন্ড পার করতে পারবে, এই বিশ্বাসটা ক্রিকেটারদের মধ্যে থাকা উচিত বলে মত সাবেক এই ক্রিকেটারের।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল, বিশ্বকাপে সম্ভাবনা, ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইক রেট, ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়ক শান্তর ভূমিকা, লিটন কুমার দাসের অফ ফর্ম, দলে সাকিব আল হাসানের ভূমিকা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ফিরে আসা, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বাদ পড়া ও বোলিং বিভাগসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেছেন বর্তমানে বিসিবির নারী বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে থাকা বাশার।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: আপনি জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। নির্বাচকের দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘদিন। আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলটা কেমন হয়েছে?
হাবিবুল বাশার: দল ভালো হয়েছে। দল যখন করা হয়, কয়েকজনকে নিয়ে আলোচনা থাকেই। এই দল নিয়েও হয়তো দুই-একটা প্রশ্ন আছে। কাউকে নিলে ভালো হতো, এই দলেও হয়তো কেউ থাকতে পারতো। কিন্তু আমার মনে হয়, যখন দল গঠন হয়ে গেছে, এটা নিয়ে আলোচনা না থাকাই ভালো। এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। কারণ, এটা আমাদের বিশ্বকাপ দল, এটাকেই আমাদের সেরা দল মনে করতে হবে। এই দলটাকেই সবার সমর্থন করতে হবে।
টিবিএস: বিশ্বকাপের আগে সব সময়ই সম্ভাবনার হিসাব-নিকাশ কষা হয়। এবার কতোটা বা কেমন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন?
বাশার: এবার তো আমরা অতি আশা নিয়ে যাচ্ছি না, হয়তো কোনো কারণ আছে। যদিও আমরা টি-টোয়েন্টিতে খুব ভালো করছিলাম। আগের বিশ্বকাপ থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগ পর্যন্ত আমরা টি-টোয়েন্টিতে খুব ভালো খেলেছি। খুবই ভালো সময় গেছে। কিন্তু সম্প্রতি দলের আত্মবিশ্বাস একটু নিচুর দিকে এবং নিজেদের কাছে আমরা কতোটুকু আশা করছি, আমি নিশ্চিত নই। এটা এক দিক থেকে মন্দের ভালো যে, এই দলের প্রতি সবার বা কম-বেশি মানুষের প্রত্যাশা কম। কিন্তু আমার মনে হয়, টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার আগে অবশ্যই কৌশল থাকতে হয়, লক্ষ্য নিয়ে যাওয়া উচিত। বড় টুর্নামেন্টে লক্ষ্যটা বড় থাকা উচিত। কারণ, এতোদিন পরে যদি লক্ষ্যই থাকে প্রথম রাউন্ড, প্রাথমিক লক্ষ্য অবশ্যই প্রথম রাউন্ড পার হওয়া। তবে আপনাকে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। প্রথম রাউন্ড পার করব, এই আত্মবিশ্বাস আমাদের থাকা উচিত।
টিবিএস: অধিনায়ক শান্ত সবার উদ্দেশ্যে বলেছেন, বেশি প্রত্যাশা করার দরকার নেই। চাপ না নিতেই হয়তো তার এই চাওয়া। অধিনায়কের বাস্তবসম্মত ভাবনা দলের জন্য ইতিবাচক হতে পারে কিনা?
বাশার: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বিশ্বকাপে আগে আমরা যতো কম আলোচনা করব, আমাদের ততোই ভালো হবে। কে কী বললো, তাতে পার্থক্য তৈরি হয় না। অধিনায়ক যেটা মনে করেছেন, বলেছেন। আমার মতে, এসব নিয়ে এখন মন্তব্য করাটা ঠিক নয়। কারণ, এখন সামনে কেবলই বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দল ভালো করবে, আমি এখন শুধু এটাই ভাবছি।
টিবিএস: এফটিপিতে থাকলেও জিম্বাবুয়ে সিরিজটাকে প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হয়েছে। এমন দলের বিপক্ষে সাধারণত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়, যদিও তেমন বিশেষ কিছু দেখা যায়নি। এ ছাড়া, জিম্বাবুয়ে বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ খেলে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া কতোটা আদর্শের?
বাশার: ভারতের বিপক্ষে খেললে খুব ভালো হতো, কিন্তু ভারতের বিপক্ষে তো আপনার খেলার সুযোগ নেই। অন্যান্য বড় বড় দলের বিপক্ষে যদি খেলার সুযোগ হতো, সেটা খুবই ভালো হতো। কিন্তু সেভাবে তো খেলার সুযোগ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, বড় দলগুলোর বিপক্ষে এই মুহূর্তে খেলার সুযোগ নেই, এফটিপিতেই নেই। যখন সুযোগ নেই, সেদিক জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ খেলাও উপকারের। এ ছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ম্যাচগুলো আমাদের অবশ্যই কাজে লাগবে। কারণ, ওখানকার মাঠ আমাদের অচেনা। তো ম্যাচ খেললে কন্ডিশন বোঝা যাবে। এটা অবশ্যই আমাদের অনেক কাজে আসবে। আর জাতীয় দলের ব্যানারে যখন খেলা হয়, তখন কিন্তু খেলাটা অন্যরকম হয়। তো বড় দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ হয়নি, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছে; এতে আমি কোনো দোষ বা ভুল দেখি না।
টিবিএস: ঘরের মাঠে খেলা, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েও তুলনামূলক দুর্বল। এরপরও বাংলাদেশ যেমন ব্যাটিং করে জিতেছে, বিশ্বকাপে এটা চিন্তার জায়গা হতে পারে কিনা?
বাশার: বিশ্বকাপে চিন্তার কারণ হলেও এখন কিছু করার নেই, না হলেও এখন কিছু করার নেই। এখন শুধু বিশ্বকাপেই চোখ রাখা উচিত। যা হয়ে গেছে, আমরা সবাই সেটা, সেটা তো আর বদলানো যাবে না। কেমন হলো ভালো হতো, সেই আলোচনা এখন কাজে আসবে না। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে বিশ্বকাপই আমার কাছে প্রায়োরিটি। বাংলাদেশ ভালো করুক, এখন সেটাই প্রত্যাশা।
টিবিএস: অধিনায়ক হিসেবে শান্তর আরেকটু দ্রুত স্কোর করে টোন সেট করা উচিত কিনা?
বাশার: শান্ত তিন নম্বরে ব্যাটিং করে। অধিনায়ক হলেও যে ব্যাটিং করা উচিত, না হলেও একই ব্যাটিং করা উচিত। এখানে আলাদাভাবে কিছু করার নেই। তিন নম্বরে যে ব্যাটিং করে, তার কাজ হচ্ছে একটা গতিতে রান করা। অধিনায়ক বা ব্যাটসম্যান, সবার ক্ষেত্রেই একই দায়িত্ব। এখন পর্যন্ত শান্তর যা স্ট্রাইক রেট, এর চেয়ে বেশি হওয়া উচিত। তবে শেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শান্ত দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিল। আমি আশা করি, এই বিশ্বকাপে শান্ত ফর্ম ফিরে যাবে। ওর শক্তির জায়গা ব্যাটিং, আশা করি, ব্যাটিং করতে পারবে।
টিবিএস: দীর্ঘদিন ধরে লিটন কুমার দাসের ব্যাটে রান নেই। গত কয়েকটি সিরিজে তার শারীরিক ভাষা, আউট হওয়ার ধরনও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। লিটনের মতো ব্যাটসম্যানকে ফর্মে পাওয়াটা দলের জন্য কতোটা জরুরি?
বাশার: লিটনের মতো ব্যাটসম্যান যখন রান পাবেন না, তখন আলোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক নয়। টপ অর্ডারে যারা ব্যাটিং করে, তাদের মধ্যে এখনও অনেকের চেয়ে লিটনের স্ট্রাইক রেট ভালো। সম্ভবত সবচেয়ে বেশি। লিটন রান করেছেন, পরীক্ষিত, অভিজ্ঞ; সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছিল। এটা ঠিক যে, এর সব কিছুই অতীত। এই মুহূর্তে ফর্মে নেই, এটাও ঠিক। বাংলাদেশের ভালো করার ক্ষেত্রে লিটনের ফর্মটা খুব জরুরি। ব্যাটসম্যান ফর্মে না থাকলে কথা হবে, সমালোচনা হবে। লিটনের এখান থেকে বের হয়ে আসাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাকে দলে নেওয়া হচ্ছে ব্যাটসম্যান হিসেবে, সে যদি রান না করে; সেটা চিন্তার বিষয়। লিটনকেই এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আশা করি, বিশ্বকাপে সেই কাজটা লিটন করতে পারবে।
টিবিএস: বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ইনটেন্ট ব্যাপারটা কেন কম দেখা যায়? রানের চেয়ে স্ট্রাইক রেট কি বর্তমান টি-টোয়েন্টিতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
বাশার: শুধু বাংলাদেশে না, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে স্ট্রাইক রেট নিয়ে পৃথিবীর সবখানে কথা হয়, প্রশ্ন তোলা হয়। আইপিএলে দেখেন, স্ট্রাইক রেটের ব্যাপারটা মাথায় রেখে বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করেন। যে দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ১১০ স্ট্রাইক রেটে রান তোলে, সেই দলের গড় সংগ্রহ হবে ১৪০-১৫০ রান। এই জন্যই স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা হয়। আর ফরম্যাটটা এমন, এখানে স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা হবেই। আমাদের স্ট্রাইক রেট অতো ভালো না, এই কারণে আমরা এটা নিয়ে আলাপ করি। টপ অর্ডারে যারা ব্যাটিং করে, তাদের স্ট্রাইক রেট অন্তত ১৪০-১৫০ থাকা উচিত। আমাদের একজন ব্যাটসম্যান আছে, ১৩৫ (১৩৩.৯৩) এর মতো, তাওহিদ হৃদয়ের। আর বাকিদের স্ট্রাইক রেট ভালো নয়, এ কারণেই এতো কথা আমাদের দেশে। বাকি যারা সফল দল, তাদের টপ ও মিডল অর্ডারের স্ট্রাইক রেট কিন্তু অনেক উপরে। টি-টোয়েন্টিতে ভালো করতে হলে, স্ট্রাইক রেট ভালো থাকতেই হবে। এটা দলীয় ব্যাপার। একা একজন ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলে যেতে পারবে না সব সময়। দলীয় মানসিকতার ওপর এটা নির্ভর করে।
টিবিএস: মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন শেষ বেলায় এসে বাদ পড়েছেন। এটা নিয়ে আলোচনা ছিল বেশ। আপনার মন্তব্য কী?
বাশার: আমাদের তো ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার নাই। অনেক সময় যখন আমরা তিনজন পেসার নিয়ে খেলি, ব্যাকআপ দুর্বল হয়ে যায়। যদি ব্যাটসম্যানরা রান না করে, আমাদের সমস্যা হয়, আগে হয়েছে। তো ওই সুবিধাটা আমরা নিতে পারতাম। এ ছাড়া, সাইফউদ্দিন খুবই অভিজ্ঞ। আমার মনে হয়, (জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের) শেষ ম্যাচের জন্য তাকে বিবেচনা করা হয়নি। কিন্তু পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে সে খারাপ বোলিং করেনি। অলরাউন্ডার হিসেবে তার যে সামর্থ্য আছে, এমন ক্রিকেটার আমাদের বেশি নেই। বোলিংয়ের পাশাপাশি ওই রকম ব্যাটিং করতে পারে, এমন নেই। যেটা বললাম, সাইফউদ্দিন অভিজ্ঞ। সে থাকলে ভালো হতো।
টিবিএস: তাসকিন আহমেদের চোট আছে, তারপরও বিশ্বকাপে সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে তাকে। শুরুর দিকের ম্যাচে তাকে নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে। সব মিলিয়ে শক্তির বিচারে বাংলাদেশের বোলিং বিভাগটা কেমন?
বাশার: আমাদের বোলিং বিভাগ খুব ভালো। যে সাইফউদ্দিনকে নিয়ে কথা হয়েছে, তাকে ছাড়াও কিন্তু শেষ দুই-তিন বছর ধরে বাংলাদেশ ভালো করেছে। আমাদের মুস্তাফিজ ভালো বোলার, শরিফুল অসাধারণ বোলার। বর্তমান সময়ে তাসকিন মুস্তাফিজের চেয়েও ভালো বোলার, এটা আমি মনে করি। আরেকজন তানজিম সাকিব, সে কিন্তু যখনই যে ম্যাচে খেলেছে, উইনিং ব্রেক থ্রু দিয়েছে। আমি ওকে ভাগ্যবান বলি, ও যে ম্যাচে খেলে, বাংলাদেশ জেতে। ওর ব্যাটিং সামর্থ্যও খারাপ নয়। আমরা তাকে অলরাউন্ডার হিসেবে তৈরি করতে পারি। বোলিংয়ে বাংলাদেশ দলে বেশ কিছু ভালো অপশন আছে। সাইফউদ্দিন থাকলে ভালো হতো, কিন্তু বাংলাদেশ শেষ এক বছর টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলেছে। হয়তো কিছু কারণে এবারের বিশ্বকাপে আমরা আশা করছি না সেভাবে। তবে এটাই হয়তো কাজে লাগতে পারে। আশা নিয়ে গিয়ে কিছু করতে পারিনি, আশা ছাড়া গিয়ে কিছু করা যায় কিনা, দেখা যাক। আমি যেটা বললাম, কিছু কারণে গত বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে ভালো পারফরম্যান্স করে আসছিল। শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগে বাংলাদেশ বেশ কিছু সিরিজ জিতেছে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছে। বোলিংয়ের কারণেই টি-টোয়েন্টিতে ভালো করছিল বাংলাদেশ। আর তাসকিন তো সহ-অধিনায়ক, আমাদের তো অধিনায়ক আছেই। শান্তকে সাহায্য করার জন্য সাকিব আছে, মাহমুদউল্লাহ আছে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা আছে। দুর্ভাগ্যবশত তাসকিন যদি না খেলে, আমার মনে হয় না খুব বেশি সমস্যা হবে।
টিবিএস: সাকিব আল হাসান তার ক্যারিয়ারের শেষ দিকে, হতে পারে এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ। তার কাছ থেকে কতোটা আশা করা যায়?
বাশার: আমি সেটা মনে করি না, হয়তো পরের বিশ্বকাপেও খেলতে পারে। দক্ষতার দিক থেকে সাকিবের কখনোই খুব বেশি ওঠা-নামা ছিল না। সব সময় স্টেডি পারফরম্যান্স করেছে। ফিটনেসের দিক থেকে আমার মনে হয়, সাকিব এখনও ফিট। এটা সাকিবের ওপর যে, ও কতোদিন খেলতে চায়। সে খেলতে চাইলে পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলতে পারে। আর বিশ্বকাপে ভালো করতে সাকিব, মাহমুদউল্লাহকে ভালো করতে হবে, আমি এমন মনে করি না। আমাদের কিন্তু খুব বেশি গেম চেঞ্জার নেই। আমরা জিতি দলগতভাবে।
টিবিএস: আপনাদের নির্বাচক প্যানেলের ওই সময়টাতে আলোচনার বাইরে চলে গিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ফিরে এসে পারফর্ম করে বিশ্বকাপ দলেও জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। দলে তার অন্তর্ভুক্তিটা কীভাবে দেখেন?
বাশার: মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে একটা ভুল ধারণা আছে সবার মাঝে। আমরা তো সব সময় সবকিছু প্রকাশ করি না। তাকে সেই সময় বিশ্রাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, সে কখনোই আলোচনার বাইরে ছিল না। আমরা তখন দলের মধ্যে একটা পরিবর্তন চাচ্ছিলাম। ভিন্ন ভাবনা থেকে অমন করা হয়েছিল। তাওহিদ হৃদয়দের মতো খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে মাহমুদউল্লাহ বা মুশফিকদের বিশ্রাম না দিয়ে করা যাচ্ছিল না। ভারতে এটা সব সময়ই করে। কোহলি-রোহিতদের তো প্রায়ই টি-টোয়েন্টিতে বিশ্রাম দেওয়া হয় বড় টুর্নামেন্টের পরে। আমাদের কৌশলও সেটাই ছিল। মাহমুদউল্লাহর মধ্যে খুবই ভালো বিষয়, যা আমি অনেকের মধ্যেই দেখি না; যা আমি উদাহরণ হিসেবে দিই, আরও দিবো। যা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক ছিল। খুব সহজেই তিনি নিজের পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারতেন, কথা বলতে পারতেন। মাহমুদউল্লাহ কিছুই করেননি। একজন স্পোর্টস পার্সন হিসেবে যে কাজটা করা উচিত, মাহমুদউল্লাহ ঠিক সেই কাজটাই করেছেন। তার ইনটেন্ট, স্লো স্টার্ট, ফিল্ডিং, ফিটনেস নিয়ে কথা হতো। তো সে যে ওই বিরতিটা পেয়েছে। আমি মনে করি, ওটা তাকে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। সে নিজেকে সাহায্য করেছে। ওই সময়ে তাকে নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল, সে নিজেই সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ফিরে আসার পর তার ইন্টেন্ট ভিন্ন, ফিটনেস আগের চেয়ে অনেক ভালো, ফিল্ডিংয়ে উন্নতি হয়েছে, স্ট্রাইট রেট ভালো হয়েছে। ওই বিরতিটা সে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করেছে। অন্য ক্রিকেটার হলে হতাশ হয়ে যেতো, কিন্তু মাহমুদউল্লাহ কাজে লাগিয়েছে। ভবিষ্যতে অনেক ক্রিকেটারকে এটা আমরা দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতে পারব। নিজেকে আরও পরিশীলিত করা যায়, এদিক থেকে এটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় উদাহরণ। বিশ্বকাপে সে ভালো করবে, এই প্রত্যাশা। তবে শুধু তাকে এই কাজ বা ওই কাজ করতে হবে, আমি সেভাবে ভাবি না। ভালো করতে দলগতভাবে খেলতে হবে, সবাইকে ভালো করতে হবে। মাহমুদউল্লাহ তো আছেই, বাকি যারা আছে, তাদেরও ভালো করতে হবে।
টিবিএস: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেখানে পৌঁছে গেছে, বাংলাদেশ সেখান থেকে কতোটা পিছিয়ে? অন্যভাবে বললে, বাংলাদেশের উন্নতির তুলনায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কি বেশি এগিয়ে গেছে?
বাশার: অবশ্যই, টি-টোয়েন্টিতে আমরা এখনও অনেক পিছিয়ে। আমাদের সেই জায়গা তৈরি হয়নি। আমাদের চাহিদা কম। আমরা এখনও গেম চেঞ্জার তৈরি করতে পারিনি। আরও ভালো উইকেটে এই ফরম্যাটে খেলতে হবে। আইপিএলে ২৫০ রান হচ্ছে, ২৬০ রান তাড়া করে জিতছে; এটা ভালো উইকেটের কারণে। পেস, ইভেন বাউন্স থাকে; এখানে রান করা করা যায়, চেজ করা যায়। আমরা যদি ভালো উইকেটে বেশি খেলতে পারি, আমাদেরও এমন অবস্থা তৈরি হবে। আমাদের খেলাই হয় ১৪০-১৫০ রানের উইকেটে। সুযোগ-সুবিধা যেহেতু বেড়েছে, আমাদের এভাবে ভাবতে হবে। তাহলে হয়তো আমাদের টি-টোয়েন্টিতে উন্নতি হবে।