বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা যেন সীমাহীন এক অধ্যায়
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের চলমান ব্যাটিং ব্যর্থতা বর্ণনা করতে গিয়ে আপনার শব্দভাণ্ডার ফুরিয়ে যাবে, লিখতে লিখতে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন; কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতার পুরো চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না। ব্যর্থতা বা হতাশার পরিমাণ যতোটাই লেখা হবে, একটা পর্যায়ে মনে হবে; এটাও বুঝি কম হয়ে যাচ্ছে। তবে এতোটুকু লিখে হয়তো এটা বোঝানো সম্ভব যে, ব্যাটিংয়ে কতোটা খারাপ সময় যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের।
ভারত সফর থেকে ব্যর্থতার চোরাবালিতে আটকে থাকা বাংলাদেশ কোনোভাবেই দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশ্য 'কোনোভাবেই' শব্দটা ব্যবহার করাও যুক্তিযুক্ত হবে কিনা, সেটা নিয়েও সংশয় থেকে যায়। কারণ, ব্যাটিং উন্নতিতে কৌশল পরিবর্তন বা চেষ্টাগত কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। একই মানসিকতা নিয়ে উইকেটে যাচ্ছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা, আর ফিরে আসছেন অসহায় আত্মসমর্পণ করে।
কোনো একটা পর্যায়ে আপনার মতে হতে পারে, এটাই বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য। সেটা বললেও পুরোপুরি ভুল হবে না। ভারত সফরের পর ঘরের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ব্যর্থ ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগ। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর টিবিএসকে জাতীয় দলের কয়েকজন সাবেক অধিনায়ক বলেছিলেন, এটাই বাংলাদেশের সামর্থ্য। অন্যরা খারাপ খেললে জেতে বাংলাদেশ।
পাকিস্তান সফর থেকে হিসাব টানলে আপনার কাছেও তেমন মনে হতে পারে। পাকিস্তানের চিরাচরিত পেস আক্রমণ ছিল না, ব্যাটিংয়েও ছিল না গভীরতা। সিরিজটি বাংলাদেশ জেতে ২-০ ব্যবধানে। তবে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা কাজে লাগানোর পাশাপাশি ওই সিরিজে ব্যাটে-বলে পারফর্ম করেছিল তারা। পেসাররা ছিলেন দুর্বার, ব্যাটিংয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প লেখার পাশাপাশি আরও কিছু ভালো ইনিংস এসেছিল। কিন্তু ওই সিরিজটার পর থেকে ব্যাটিংয়ে একই চিত্র, যেখানে হতাশা ছাড়া কিছু নেই। সর্বশেষ ১১ ইনিংসে বাংলাদেশ ৩০০ করেছে একটিতে, ৭ ইনিংসে পারেনি ২০০ ছুঁতে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই হেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টেও বলদায়নি ব্যাটিং ভাগ্য, এখানেও ব্যাটসম্যানদের সেই আসা-যাওয়ার দৃশ্য নিয়মিত হয়ে উঠেছে। জ্যামাইকা টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেমে গেছে ১৬৪ রানেই। পুরো ইনিংসে একটি হাফ সেঞ্চুরি, ৩০ ছাড়ানো রান করেছেন আরেকজন। ক্যারিবীয় পেসার জেডেন সিলস, শামার জোসেফ, কেমার রোচদের বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দিশাহারা মনে হয়েছে।
ভেজা মাঠের কারণে এই টেস্ট মাঠে গড়ায় বেশ কয়েক ঘণ্টা পর। ৩০ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান তুলে প্রথম দিন পার করে বাংলাদেশ। সাদমান ইসলাম অনিক ৫০ ও শাহাদাত হোসেন দিপু ৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। আজ খেলা শুরু হতেই তছনছ বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ, ২৯ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ৪ উইকেট। ৬৯/২ থেকে স্কোর দাঁড়ায় ৯৮/৪। একে একে ফিরে যান শাহাদাত, লিটন কুমার দাস, জাকের আলী অনিক ও সাদমান।
৮৯ বলে ২টি চারে ২২ রান করেন থামেন শাহাদাত। ১ রান করে করেন লিটন ও জাকের। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা সাদমান ১৩৭ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় করেন ৬৪। এরপর কিছুটা প্রতিরোধ, তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি বেধে তোলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সপ্তম উইকেটে এ দুজন যোগ করেন ৪১ রান। ব্যাটসম্যানরা যা করতে পারেননি, সেটা করে দেখান তাইজুল। মিরাজের সঙ্গে জুটি গড়ার পথে ৬৬টি বল খেলেন তিনি, রান করেন ১৬।
এরপর তাসকিন আহমেদ-মিরাজের জুটি থেকে আসে ২০ রান। তবে এই জুটি ভাঙার পর বেশি সময় টেকেনি বাংলাদেশের ইনিংস। একই ওভারে ফিরে যান তাসকিন ও মিরাজ। ৭৫ বলে ২টি চারে ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ১৬ বলে ৮ রান করেন তাসকিন। ১০ বলে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন হাসান মাহমুদ। আগুনে বোলিং করা সিলস ৪টি উইকেট নেন। ১৫.৫ ওভারে ১০টি মেডেন নেন তিনি, রান খরচা করেন মাত্র ৫ রান। ১৫ ওভারে ৪৯ রানে ৩ উইকেট নেন শামার। রোচ ২টি ও আলজারি জোসেফ একটি উইকেট পান।