রাদারফোর্ড ঝড়ে রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশকে হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
ব্যাট হাতে লড়াকু সংগ্রহ গড়ার পর বল হাতেও শুরুটা দারুণ ছিল বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রায় অর্ধেক ইনিংস পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রাখে তারা। কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে ঠিক পথে রাখা ক্যারিবীয় অধিনায়কের শেই হোপের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুহূর্তেই হিসেব পাল্টে দেন ম্যাচসেরা শারফেন রাদারফোর্ড। তার উইকেটে থাকার সময় যতো বেড়েছে, ততো বেড়েছে তার ব্যাটের ধার। একটা সময়ে গিয়ে খুনে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের হাত থেকে ম্যাচ কেড়ে নেন রাদারফোর্ড, তার দুর্বার সেঞ্চুরিতেই হেরে যায় বাংলাদেশ।
রোববার সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এই জয়ে সেন্ট কিটসে রান তাড়ার রেকর্ড গড়েছে ক্যারিবীয়রা। এই মাঠের আগের সফল রান তাড়া ছিল ২৬৬, সেটাও তাদেরই। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে থামলো বাংলাদেশের জয়রথ। গত ৬ বছরে ১১ ওয়ানডের সবকটিতেই তাদেরকে হারায় বাংলাদেশ। অর্থাৎ, ১১ ম্যাচ পর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের স্বাদ পেল ক্যারিবীয়রা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। তানজিদ হাসান তামিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরি ও জাকের আলী অনিকের চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংসে ৬ উইকেটে ২৯৪ রান তোলে সফরকারীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আগে ব্যাটিং করে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ, সব মিলিয়ে চতুর্থ সর্বোচ্চ। জবাবে অধিনায়ক হোপের মহাকার্যকর ইনিংসের পর ঝড় তুলে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন সেঞ্চুরিয়ান রাদারফোর্ড। তার ম্যাচসেরা ইনিংসে ১৪ বল হাতে রেখে জেতে স্বাগতিকরা।
ব্যাট হাতে লড়াকু সংগ্রহ গড়ার পর বল হাতেও দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিবের দুর্বার বোলিংয়ের সামনে প্রথম তিন ওভার থেকে মাত্র ৫ রান তোলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, চার ওভারে তোলে ১১ রান। অষ্টম ওভারে মিলে যায় উইকেটেরও দেখা, ব্র্যান্ডন কিংকে ফিরিয়ে দেন তানজিম সাকিব। পরের ওভারে এভিন লুইসকে ফিরিয়ে দেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা নাহিদ রানা। ১০ ওভারে ২ উইকেটে ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪২ রান।
এখান থেকে হাল ধরেন শেই হোপ ও কেসি কার্টি। চাপ কাটিয়ে তোলার পাশাপাশি রান তোলার গতিও বাড়ান তারা, তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৮২ বলে ৬৭ রান। ২১ রান করা কার্টিকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। কিন্তু এই উইকেট নিয়েও লাভ হয়নি। চতুর্থ উইকেটে দাপুটে ব্যাটিং করেন হোপ ও রাদারফোর্ড। ৯২ রানে ৯৯ রানের জুটি গড়েন এ দুজন। চাপ কাটিয়ে দলকে ঠিক পথে ফেরানো উইন্ডিজ অধিনায়ক হোপ ৮৮ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৬ রান করে আউট হন।
তাকে হারানোর চাপও বুঝতে হয়নি স্বাগতিকদের। যে উইকেটে গেছেন, তিনিই থিতু হয়ে জুটি গড়েছেন। ব্যাট হাতে শাসন করতে থাকা রাদারফোর্ডের সঙ্গে যোগ দিয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিং শুরু করেন জাস্টিন গ্রিভসও। এই জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয় পাওয়া সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়। বিশেষ করে রাদারফোর্ড ঝড় বইয়ে দেন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে। এই জুটিতে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে যায় ক্যারিবীয়রা। পঞ্চম উইকেটে ৫৭ বলে ৯৫ রানের জুটি গড়েন রাদারফোর্ড-গ্রিভস।
জুটিতে বেশি অবদান ম্যাচসেরা রাদারফোর্ডের, ২৯ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে আরও খুনে ব্যাটিং করা রাদারফোর্ড ৭৭ বলে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। জয় থেকে ৭ রান দূরে থাকতে আউট হওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৮০ বলে ৭টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১১৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। বাকি থাকা কাজুটুক সারেন গ্রিভস ও রস্টন চেস। গ্রিভস ৩১ বলে ৫টি চারে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের তানজিম সাকিব, নাহিদ, রিশাদ, মিরাজ ও সৌম্য একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেয়। ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়ে গ্লোবাল সুপার লিগের সেরা খেলোয়াড় হওয়া সৌম্য সরকার আজও ভালো শুরু করেছিলেন। কিন্তু ইনিংসটি দীর্ঘ করতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। আগের বলেই চার মানা সৌম্য খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন, এর আগে ১৮ বলে ৩টি চারে ১৯ রান করেন তিনি। ৩৪ রানে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের বিপদ বাড়ে একটু পরই, লিটন কুমার দাসও খোঁচা দিয়ে আউট হন। ৭ বলে ২ রান করেন তিনি।
দ্রুত ২টি উইকেট হারালেও তানজিদের সাবলীল ব্যাটিংয়ের কারণে বাংলাদেশকে খুব একটা চাপ বুঝতে হয়নি। এরপর তার সঙ্গে যোগ দিয়ে জুটি গড়ে তোলেন মিরাজ। ৩১ রানের মধ্যে দুবার জীবন পান মিরাজ। দুবারই তার তোলা ক্যাচ ফেলে দেন কেসি কার্টি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে উইকেটে থিতু হয়ে যান মিরাজ, তবে রান তোলার গতি বাড়িয়ে নিতে পারেননি। তৃতীয় উইকেটে ৯৭ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন তানজিদ-মিরাজ।
তানজিদের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া বাঁহাতি তরুণ এই ওপেনার ৬০ বলে ৬টি চার ও ৩টি চক্কায় ৬০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। পরের জুটিতে ৬২ বলে ৫৪ রান যোগ করেন মিরাজ-আফিফ। এই জুটি ভাঙার আগে ২৯ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করেন প্রায় এক বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা আফিফ।
এরপর মিরাজও টিকতে পারেননি। বাংলাদেশ অধিনায়ক ১০১ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৭৪ রান করে জেডেন সিলসের শিকারে পরিণত হন, এটা তার পঞ্চম ওয়ানডে হাফ সেঞ্চুরি। মিরাজের রানই বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ। এরপর বাকিটা পথ মাহমুদউল্লাহ ও জাকেরে ব্যাটে এগোয় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৪ বলে ৯৬ রান যোগ করেন তারা, বাংলাদেশের ইনিংসে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি।
শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আউট হওয়ার আগে ৪০ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৮ রান করেন জাকের। শেষ পর্যন্ত ব্যাট চালানো মাহমুদউল্লাহ ৪৪ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় করেন ৫০ রান। ১৫ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটা তার ৩০তম হাফ সেঞ্চুরি। ক্যারিবীয় পেসার রোমারিও শেফার্ড ৩টি উইকেট নেন। আলজারি জোসেফ ২টি ও জেডেন সিলস একটি উইকেট পান।