তামিমের ঝলমলে ব্যাটিংয়ে বরিশালের দাপুটে জয়
অন্য প্রান্তে ভাঙনের সুর বাজলেও তাতে কান দিলেন না তামিম ইকবাল। ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক নিজের মতো করেই খেলে যেতে লাগলেন। যিনি উইকেটে গেলেন, তার সঙ্গেই হলো তার জুটি। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে ঝলমলে এক ইনিংস খেলা বাঁহাতি এই ওপেনার দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়লেন। দারুণ জয়ে শুরু করা বরিশাল এক ম্যাচ পরই পেল জয়ের স্বাদ, যেখানে ব্যাটে-বলে দাপট থাকলো কেবল তাদেরই।
সোমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুর্বার রাজশাহীকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বরিশাল। তিন ম্যাচে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিন নম্বর দল বিপিএলের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। চার ম্যাচের তিনটিতেই হার মানা রাজশাহী আছে পাঁচ নম্বরে।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে দুর্বার রাজশাহী। জিসান আলম, অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় ও ইয়াসির আলী রাব্বির তিরিশোর্ধ্ব ইনিংসের সুবাদে ৪ উইকেটে ১৬৮ রান তোলে দলটি। জবাবে এক পাশ আগলে দাপুটে ব্যাটিং করা তামিমের ইনিংসেই জয়ের পথ অনেকটা সহজ হয়ে যায় ফরচুন বরিশালের। চতুর্থ উইকেটে তার সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১৭.৩ ওভারে (১৫ বল হাতে রেখে) জিতে যায় শিরোপা প্রত্যাশী দলটি।
লক্ষ্য তাড়ায় ফরচুন বরিশালের শুরুটা ভালো ছিল না। দলীয় ১২ রানে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্তর বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান প্রীতম কুমার। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ে এই ধাক্কা সামাল দেন অধিনায়ক তামিম ও কাইল মেয়ার্স, ৪১ রান যোগ করেন তারা। নিজের ছায়া হয়ে থাকা মেয়ার্স আজ ভালো শুরুর পরও বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি। ক্যারিবীয় এই অলরাউন্ডার ১১ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২২ রান করে আউট হন।
৫৩ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানো বরিশাল তৃতীয় উইকেটেও জুটি পায়। তাওহিদ হৃদয়কে এক পাশে রেখে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন তামিম। এই জুটির ৪০ রানের মধ্যে ২৭ রান করেন বরিশাল অধিনায়ক। দেখেশুনে খেলা হৃদয় দশম ওভারে জিসানের ফুলটস ডেলিভারিতে ক্যাচ তুলে আউট হন, ১৪ বলে একটি চারে ১৩ রান করেন তিনি। এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে জয় তুলে নেওয়ার কাজ সারেন তামিম।
প্রথম দুই ম্যাচে রান অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া বাঁহাতি অভিজ্ঞ এই ওপেনার দারুণ সব শটে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন। ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে দলের জয় নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত ব্যাটিং করা তামিম ৪৮ বলে ১১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮০ রানের দুর্বার ইনিংস খেলেন। ২৪ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। চতুর্থ উইকেটে ৪৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭৬ রানের জুটি গড়েন তামিম ও মুশফিক। রাজশাহীর মোহর শেখ ২ ওভারে ৩২ রানে ২টি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ২৫ রানে একটি উইকেট পান জিসান।
এর আগে ব্যাটিং করা দুর্বার রাজশাহীর সব ব্যাটসম্যানই রানের দেখা পেয়েছেন। যদিও কেউ-ই ইনিংস বড় করতে পারেননি। ভালো শুরু করেও দলটির কোনো ব্যাটসম্যান ৪০ রানের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তিনজন ব্যাটসম্যানের ইনিংস থামে ৩০ থেকে ৪০ এর ঘরে। ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা বিজয় আজও রানের দেখা পেয়েছেন, তবে তার ব্যাটিং টি-টোয়েন্টিসুলভ ছিল না। রাজশাহীর অধিনায়ক ৩৫ বলে ৫টি চারে ইনিংস সেরা ৩৯ রান করেন।
প্রথম দুই ম্যাচে রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হওয়া তরুণ ওপেনার জিসানকে আজ সাবলীল দেখিয়েছে। যদিও তিনিও পারেননি ইনিংস বড় করতে। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৭ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৮ রান করেন। চলতি বিপিএলে আজই রানের খাতা খুললেন তিনি। বিজয়-জিসানের চেয়ে দ্রুত রান তোলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। বরিশালের পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে আউট হওয়ার আগে ২৩ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৭ রান করেন তিনি।
আকবর আলী ৯ বলে একটি ছক্কায় অপরাজিত ১৫ রান করেন। রায়ান বার্ল ১১ বলে একটি চারে করেন ১০ রান। এর আগে শুরুতে ১৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২২ রান করেন ওপেনার মোহাম্মদ হারিস। পাকিস্তানের পেসার শাহিন আফ্রিদি সবচেয়ে কৃপণ বোলিং করেন। ৪০ ওভারে ২০ রানে তার শিকার ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন তানভীর ইসলাম ও ফাহিম আশরাফ।