সাগরিকায় ‘বিশেষ’ চেষ্টায় ব্যাটসম্যান সাকিব
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সাকিব আল হাসান। বল হাতে সব সময়ই ছন্দময় সাকিবের দেখা মেলে। কিন্তু ব্যাট হাতে লম্বা সময় ধরে খোলসবন্দি বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সাদামাটা পারফরম্যান্স করা সাকিব টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ব্যাট হাতে অনুজ্জ্বল থেকে যান।
বিপিএলেও সেই ধারা থেকে বেরোনো হয়নি তার। তিনটি ম্যাচ খেলে ফেললেও হাসেনি সাকিবের ব্যাট। প্রথম ম্যাচে ১৩ রান করা ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক পরের দুই ম্যাচে করেন যথাক্রমে ২৩ ও ১ রান। তার নামের পাশে ইনিংসগুলো যে বেমানান, সেটা তার চেয়ে আর কে ভালো বোঝে! তাই সাকিবের তাড়া এবার অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা। দলের অনুশীলনের ঘণ্টাখানেক আগেই চট্টগ্রামের সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হাজির হয়ে ব্যাট হাতে ঘাম ঝরাতে দেখা গেল অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারকে।
সাকিবের রানে ফেরার চেষ্টা অবশ্য আরও আগেই শুরু হয়েছে। সিলেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) ওয়ানডে লিগে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলে ঢাকা ফিরে একক অনুশীলন করেন তিনি। দুদিনের অনুশীলনে শৈশবের কোচ নাজমুল আবেদীন ফাহিমের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ঢাকা পর্বেও একদিন দলের আগে মাঠে গিয়ে বরিশালের ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব থাকা নাজমুল আবেদীনের সঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে সাকিবকে।
২১ জানুয়ারি মাঠে গড়ানো বিপিএল পাড়ি জমিয়েছে চট্টগ্রামে। এখানে পাঁচদিন চলবে চার-ছক্কার লড়াই। ২৮ জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম পর্ব শুরু হবে, এদিন নেই ফরচুন বরিশালের ম্যাচ। কিন্তু ২৭ জানুয়ারি জহুর আহমেদের নেটে সাকিবকে পাওয়া গেল 'সিরিয়াস' মেজাজে। ফরচুন বরিশালের অনুশীলন ছিল সাড়ে দশটা থেকে। এর অনেক আগেই স্টেডিয়ামে হাজির হন সাকিব। সাড়ে ৯টায় মাঠে পৌঁছে পৌনে দশটায় শুরু করে দেন ব্যাটিং, তার একক অনুশীলন চলে প্রায় দেড় ঘণ্টা।
বিপিএলে তিন ম্যাচে একটি জয়ে কোণঠাসা অবস্থায় সাকিব। নেতা হয়েও ব্যাট হাতে দলকে পথ দেখাতে পারছেন না, এ ছাড়া ব্যাট হাতে ছন্দে ফেরার তাড়া তো আগে থেকেই; সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার জহুর আহমেদের নেটে ভিন্ন এক সাকিবকে দেখা গেল।
সকাল পৌনে দশটায় থ্রোয়ার রমজান আলী এবং ফরচুন বরিশালের সহকারী কোচ আশিকুর রহমানকে নিয়ে নেটে ব্যাটিং শুরু করেন সাকিব। তখনও দলের বাকি সদস্যরা মাঠে এসে পৌঁছাননি। ব্যাটিং অনুশীলনের শুরুতে কঠিন সময়ই গেছে তার। প্রথম আধা ঘণ্টায় থ্রোয়ার রজমানের বেশিরভাগ ডেলিভারি সামলাতে পারেননি সাকিব। আশিকের ডেলিভারির বিপক্ষেও নড়বড়ে ছিলেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এক পর্যায়ে গিয়ে মেজাজ হারাতে দেখা যায়। ব্যাটে-বলে না করতে পারায় সাকিবের চোখে-মুখে বিরক্তি ভাব ছিল স্পষ্ট।
রমজান-আশিকের বেশ কিছু বাউন্সার সাকিবের হেলমেটেও লাগে। ঠিকমতো ব্যাটে-বলে করতে না পারলেও খেই হারাননি তিনি, চালিয়ে যেতে থাকেন ব্যাটিং। একটা সময়ে গিয়ে সাবলীল হয়ে ওঠেন সাকিব। রমজানের থ্রোতে দারুণ এক কভার ড্রাইভ খেলতেই স্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে তার চেহারায়।
৩০ মিনিট ব্যাটিংয়ের পর কিছুটা সময় জিরিয়ে নেন সাকিব। এরপর যখন সাকিব নেটে ফেরেন, তখন পুরোপুরি অন্য চেহারায় দেখা যায় তাকে। আগামী শনিবার খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে পাওয়ার হিটিংয়ের অনুশীলনে মিড উইকেট, লং অন এবং লং অফের উপর দিয়ে দারুণ কিছু শটস খেলেন সাকিব। এরপর রমজান-আশিকের থ্রোয়িংয়ের বিপক্ষেই দাপুটে ব্যাটিং করে যেতে থাকেন বাংলাদেশ অলরাউন্ডার।
দারুণ এক সেশনের পর আবারও বিরতি নেন সাকিব। ততক্ষণে ফরচুর বরিশালের ক্রিকেটাররাও মাঠে হাজির হয়ে গেছেন। এ সময় সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডা, ফোন চালিয়ে সময় কাটে তার। মনে হয়েছিল সাকিবের অনুশীলন পর্ব হয়তো শেষ। কিন্তু দলের অনুশীলন শুরু হতেই ফুটবল খেলায় যোগ দেন তিনি। ফুটবলে সব সময়ই ভালো সাকিব একটি গোলের দেখাও পান। এর কিছুক্ষণ পর সেন্টার উইকেটের পাশে গিয়ে আরও কিছু ব্যাট হাতে নক করেন সাকিব। তবে এদিন বোলিং করতে দেখা যায়নি ফরচুন বরিশালের অধিনায়ককে।