সুপারম্যান সাকিবে উড়ছে বরিশাল, খাদের কিনারে মাহমুদউল্লাহরা
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফরচুন বরিশালের জয় মানেই সেখানে কাণ্ডারি সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রাম পর্বে দলকে জয়ে ফেরানোর পর থেকে এই ধারাই জারি রেখেছেন বরিশালের অধিনায়ক। ম্যাচ জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখে টানা চার ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা সাকিব মিনিস্টার ঢাকার বিপক্ষেও ব্যাটে-বলে শাসন করলেন। আবারও ম্যাচসেরা তিনি, আবারও জিতল দুর্বার বরিশাল। আরেকটি হারে কোণঠাসা হয়ে পড়লো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল ঢাকা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মিনিস্টার ঢাকাকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। ১০ ম্যাচে এটা সাকিবের দলের সপ্তম জয়। ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে আছে তারা। দারুণ ছন্দে থাকা বরিশাল পঞ্চম ম্যাচ জিতেই প্লে-অফ নিশ্চিত করে। পরের ম্যাচ জিতে প্রথম কোয়ালিফায়ারও নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ জিতে আরও শক্ত অবস্থানে থেকে প্লে-অফ খেলতে যাচ্ছে বরিশাল।
অন্যদিকে মিনিস্টার ঢাকার প্লে-অফ খেলার পথ আরও কঠিন হলো। ১০ ম্যাচে ৪ জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার কিন নম্বরে আছে তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহমুদউল্লাহদের দল। কিন্তু এরপরও প্লে-অফ নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তাই বেশি। চার এবং পাঁচ নম্বরে থাকা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ও খুলনা টাইগার্সের পয়েন্ট ৮ করে। দুই দলেরই একটি করে ম্যাচ বাকি। এই দুই দল তাদের শেষ ম্যাচে জিতলে তারাই প্লে-অফে উঠবে। এদের মধ্যে কেউ হারলেই কেবল শেষ চারে যাওয়ার সুযোগ হবে ঢাকার।
শুক্রবার টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে মিনিস্টার ঢাকা। তামিম ইকবাল ৬৬ রানের ইনিংস খেললেও বাকিদের কেউ দলের রানচাকা ঘোরাতে পারেনি। ৯ উইকেটে ১২৮ রান তোলে তারা। জবাবে ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারের পর সাকিবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ১৫.৩ ওভারে দুই উইকেট হারিয়েই জয় তুলে নেয় বরিশাল।
ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে ঢাকার বিপক্ষেও ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব। নেতা হলে দলকে কীভাবে পথ দেখাতে হয়, প্রতি ম্যাচে সেটারই ছবি এঁকে যাচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার। বরিশালের সাত জয়ের পাঁচটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন সাকিব। টানা পাঁচ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন তিনি। বিপিএলের ইতিহাসে যা প্রথম। দেশের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি এই আসরে আর কোনো ক্রিকেটারের টানা তিন ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড় হওয়ার নজির নেই।
ছোট লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে বরিশাল ভালো শুরু করতে পারেনি। দলীয় ২৩ রানেই ফিরে যান ক্রিস গেইল। আগের ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি করা ক্যারিবীয় এই ব্যাটিং দানব এদিন ৭ রান করেই থামেন। এরপর মুনিম শাহরিয়ারও বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি। দারুণ ছন্দে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ২৫ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৩৭ রান করে আউট হন।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ব্যাটিং শো শুরু করেন সাকিব। এই জুটিই দলকে জয় এনে দেয়। শান্ত ধীর-স্থির থাকলেও ঝড় বইয়ে দেন বরিশালের অধিনায়ক। ২৯ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন সাকিব। শান্ত ২৮ বলে ২৮ রানে অপরাজিত থাকেন। বরিশালের যাওয়া উইকেট দুটি ভাগাভাগি করে নেন শফিউল ইসলাম ও কাইস আহমেদ।
এর আগে ব্যাটিং করা মিনিস্টার ঢাকার হয়ে কেবল তামিম ইকবাল রান করেছেন। অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই ওপেনার ২৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। তামিম ৫০ বলে ৯টি চার ও একটি ছক্কায় ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন। এই ইনিংস খেলার পথে চলতি আসরে ৪০০ রান পূর্ণ করেন বাংলাদেশ ওপেনার, তার রান এখন ৪০৭। এই ম্যাচে সব ধরনের ক্রিকেটে ২৪ হাজার রানের মাইলফলকও পূর্ণ হয়েছে তার।
আরেকটি রেকর্ডে নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়েছেন তামিম। বিপিএলে এটা তার ২৩তম হাফ সেঞ্চুরি, যা আসরটির সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরি ১৬টি। তামিমের দারুণ ইনিংস খেলার ম্যাচে ঢাকার বাকি ব্যাটসম্যানরা ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে। তামিম ও শুভাগত ছাড়া তাদের কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। বরিশালের শফিকুল ইসলাম, ডোয়াইন ব্রাভো ও মেহেদি হাসান রানা ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মুজিব-উর-রহমান ও সাকিব আল হাসান।