বিপিএলের ফাইনালে সাকিবের বরিশাল
মাঝারি লক্ষ্য, সেই লক্ষ্য পাড়ি দিতে নেমেই ঘাম ছুটে গেল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। সাবধানী শুরুর পর রান-বলের ব্যবধান বাড়লেও মঈন আলী, ফাফ ডু প্লেসিরা অবশ্য আশা বাঁচিয়ে রাখলেন। কিন্তু শেষ দিকটায় বল হাতে জাদু দেখালেন ফরচুন বরিশালের বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা। জুটি ভাঙাসহ কিপ্টে বোলিংয়ে কুমিল্লার পথ কঠিন করে তুললেন তিনি। শেষ ওভারে ১৮ রান দরকার হলেও উঠলো ৭ রান, বিজয় কেতন ওড়ালো সাকিব আল হাসানের দল বরিশাল।
সোমবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) রোমাঞ্চ ছড়ানো প্রথম কোয়ালিফায়ারে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ১০ রানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথম কয়েক ম্যাচ পরেই দল গুছিয়ে নিয়ে দারুণ ক্রিকেট খেলে আসা বরিশাল উঠে গেল ফাইনালে। এই ম্যাচে হারলেও ফাইনালে ওঠার সুযোগ আছে কুমিল্লার। ফাইনালে ওঠার দ্বিতীয় চেষ্টায় এলিমিনেটর ম্যাচের জয়ী চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মাঠে নামবে তারা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুন বরিশাল। মুনিম শাহরিয়ারের ৪০ পেরোনো ইনিংস ও ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, জিয়াউর রহমানদের ছোট ছোট ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৪৩ রান তোলে বরিশাল। জবাবে লিটন কুমার দাস, ডু প্লেসি, মঈন আলী, সুনিল নারিনদের ব্যাটে লড়লেও ম্যাচসেরা মেহেদদি হাসার রান বাধায় ৭ উইকেটে ১৩৩ রানে থামে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে সাবধানী শুরু করেন কুমিল্লার দুই ওপেনার লিটন কুমার দাস ও মাহমুদুল হাসান জয়। ওয়ানডে মেজাজে খেলে যেতে থাকেন এ দুজন। ১০.৪ ওভারে দলের স্কোরকার্ডে ৬২ রান যোগ করেন তারা। ধীর মেজাজে ব্যাটিং করা জয় ৩০ বলে এক চারে ২০ রান করে এ সময় আউট হন।
তার আউটের পর অগোছালো হয়ে পড়ে কুমিল্লা। পরের ওভারেই থামেন অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, করেন ৫ রান। দেখেশুনে খেলতে থাকা লিটনও আর এগোতে পারেননি। ডানহাতি এই ওপেনার ৩৫ বলে ৪টি চারে ৩৮ রান করে বরিশালের পেসার শফিকুল ইসলামের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন।
ফাফ ডু প্লেসির সঙ্গে যোগ দিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেওয়ার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেন মঈন আলী। এই জুটতে ১০০ পেরোয় কুমিল্লা। উইকেটে গিয়েই মানিয়ে নেওয়া ইংল্যান্ডের এই অলরাউন্ডার ঝড়ের পূর্বাভাস দেন। ১৫ বলে ৩ ছক্কায় তুলে ফেলেন ২২ রান। কিন্তু তার এই ঝড় স্থায়ী হতে দেননি ডোয়াইন ব্রাভো।
সুনিল নারিনকে নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন ডু প্লেসি। তবে তিনি শেষ করতে পারেনি। দলীয় ১২৪ রানে মেহেদি হাসান রানার শিকারে পরিণত হন প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যান। এরআগে ১৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২১ রান করেন প্লেসি। শেষ ২ ওভারে কুমিল্লার দরকার ছিল ২২ রান। ১৯তম ওভারে প্লেসিকে আউট করাসহ মাত্র ৪ রান দেন ম্যাচসেরা মেহেদি।
শেষ ওভারে ১৮ রান দরকার পড়লে ৭ রান তুলে আউট হন ১৬ বলে ১৭ রান করা নারিন। শহিদুল ইসলাম কোনো রান তিনে পারেননি। ৩ ওভারে মাত্র ১৫ রানে ২টি উইকেট নেন মেহেদি। ২টি করে উইকেট নেন মুজিব-উর-রহমান ও শফিকুল ইসলামও। একটি উইকেট নেন ডোয়াইন ব্রাভো। অধিনায়ক সাকিব ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়ার পর বল হাতেও কিছু করতে পারেননি। ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি তিনি।
এর আগে মুনিম শাহরিয়ার ছাড়া ফরচুন বরিশালের হয়ে কেউই দাপুটে ব্যাটিং করতে পারেননি। অনেকেই উইকেটে থিতু হয়েছেন, জাগিয়ে তুলেছেন আশা, কিন্তু কেউ শেষ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলে ইনিংস এগিয়ে নিতে পারেননি। মুনিম চলিশোর্ধ ইনিংস খেলেন, বাকিদের কেউই ৩০ রানের কোটা পেরোতে পারেননি।
অথচ তাদের শুরুটা ছিল ঝড়ের মতো। মুনিম-গেইল জুটিতে ৬.১ ওভারেই ৫৮ রান পেয়ে যায় বরিশাল। ১৯ বলে ৪টি চারে ২২ রান করে গেইল বিদায় নেওয়ার পর রানের গতি কমলেও নাজমুল হোসেন শান্তকে সঙ্গে নিয়ে চাপ সামলে নেন মুনিম।
কিন্তু ডানহাতি এই ওপেনার ৩০ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৪ রান করে বিদায় নিতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বরিশালের ব্যাটিং লাইন আপ। নিয়মিত ধারায় উইকেট হারাতে থাকে তারা। এর মাঝেও কয়েকজন ভালো শুরু পান, কিন্তু কেউই শেষ পর্যন্ত দলের ত্রাতা হতে পারেননি।
নাজমুল শান্ত ১৩, জিয়াউর রহমান ১৭, ডোয়াইন ব্রাভো ১৭ ও নুরুল হাসান সোহান ১১ রান করেন। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে রেকর্ড টানা পাঁচ টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সাকিব এদিন রানের দেখা পাননি। রান আউটে কাটা পড়ার আগে ১ রান করেন বরিশালের অধিনায়ক। কুমিল্লার শহিদুল ইসলাম ৩টি ও মঈন আলী ২টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান সুনিল নারিন ও তানভীর ইসলাম।