জাদুকর মেসি, ফিনালিসিমা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা
ইতালি বনাম আর্জেন্টিনা; এতটুকু বলায় অবশ্য ম্যাচটির মাহাত্ম বোঝা যাবে না। লড়াইটা ইউরো চ্যাম্পিয়ন ও কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নের মধ্যে, নাম ফিনালিসিমা। দুই চ্যাম্পিয়নের লড়াই নিয়ে উত্তেজনার শেষ ছিল না। মাঠেও থাকলো ভরপুর উত্তেজনা, কিন্তু সেটা কেবলই আর্জেন্টিনাকে ঘিরে। লিওনেল মেসির জাদুকরী পারফরম্যান্স এবং লাওতারো মার্তিনেজ, আনহেল ডি মারিয়া ও পাওলো দিবালার গোলে ইতালিকে উড়িয়ে ফিনালিসিমা চ্যাম্পিয়ন হলো আলবিসেলেস্তেরা।
বুধবার লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ২৮ বছর পর প্রথম কোনো শিরোপা জেতা লাতিন দেশটি দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুললো ১০ মাসের মধ্যেই। জাদুকরী পারফরম্যান্সে গোটা ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম মাত করে রাখা মেসির ক্যারিয়ারে যোগ হলো আরেকটি সাফল্যের পালক।
২৯ বছর পর ফিনালিসিমার শিরোপা জিতলো আর্জেন্টিনা। অবশ্য ইউরো চ্যাম্পিয়ন ও কোপা চ্যাম্পিয়নের মধ্যকার এই ম্যাচটি এতোদিন অনুষ্ঠিতই হয়নি। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে ফিনালিসিমার ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, নাম ছিল আর্তেমিও ফ্রাঙ্কি কাপ। সেটারও চ্যাম্পিয়ন ছিল আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর দিয়েগো ম্যারাডোনার নেতৃত্বে সেই ম্যাচে টাইব্রেকারে ইউরো চ্যাম্পিয়ন ডেনমার্ককে ৫-৪ গোলে হারায় আর্জেন্টিনা। ২৯ বছর পর এসে মেসির নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা ওড়াল বিজয় কেতন। তবে এবার আর টাইব্রেকার নয়, দাপুটে ফুটবল খেলে ইতালিকে বিধ্বস্ত করে শিরোপার হাসি হাসলো লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা।
ইতালির বিপকেষ এই আর্জেন্টিনাকে অন্য এক আর্জেন্টিনা মনে হতে পারে যে কারও কাছে। এতোটা নিখুঁত ফুটবল খেলতে তাদেরকে কমই দেখা যায়। গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী অ্যামিলিয়ানো মার্তিনেজ ছিলেন চেনা ছন্দে। এ ছাড়া রক্ষণভাগ থেকে মাঝমাঠ, আক্রমণে আর্জেন্টিনা ছিল অপ্রতিরোধ্য।
মেসি ফিরেছিলেন পুরনো দুর্বার চেহারায়। আক্রমণ সাজানো থেকে শুরু করে বল বানিয়ে দেয়াসহ সব জায়গায় 'পারফেক্ট' ছিলেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী। দি মারিয়া, মার্তিনেজদের ঝলকেও পুড়তে হয় ইতালিকে। সব মিলিয়ে স্বপ্নের ম্যাচে শেষ হাসি উঠলো মেসিদের মুখে।
ম্যাচে ইতালিকে পাত্তাই দেয়নি আর্জেন্টিনা। বল দখলের লড়াইয়ে অনেক এগিয়ে ছিল তারা। ৫৬ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখেন মেসি-দি মারিয়ারা। অবিরত আক্রমণ সাজিয়ে গোলমুখে ১৭টি শট নেয় আর্জেন্টিনা, এর মধ্যে ৯টি ছিল লক্ষ্যে। স্কোর লাইন আরও বড় হতে পারতো। কিন্তু ইতালির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমার দৃঢ়তায় তা হয়নি, দারুণ কয়েকটি সেফ করেন তিনি। মেসিদের আক্রমণ ফেরাতে ব্যস্ত থাকা ইতালি গোলমুখে ৭টি শট নেয়, ৩টি ছিল লক্ষ্যে।
শুরু থেকেই ইতালির ওপর চড়ে বসা আর্জেন্টিনা ২৮তম মিনিটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেয়। ডি-বক্সের একটু বাইরে থেকে বল কেড়ে নিয়ে বাম প্রান্ত দিয়ে ঢুকে পড়েন মেসি। বলের নিয়ন্ত্রণ রেখে দারুণ এক ক্রস করেন আর্জেন্টিনা প্রাণ ভোমরা, আলতো টোকায় অনায়াসে বল জালে জড়ান লাউতারো মার্তিনেজ।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আবার সাদা-আকাশী শিবিরে উৎসব। ইতালির লিওনার্দো বোনুচ্চিকে এড়িয়ে রক্ষণচেরা পাস দেন লাউতারো। বল পৌঁছে যায় দি মারিয়ার পায়ে। পেছনে ইতালির রক্ষণভাগের খেলোয়াড় থাকলেও তাতে সমস্যা হয়নি পিএসজির এই তারকা ফুটবলারের। বাঁ পায়ের চিপে গোল আদায় করে নেন তিনি।
যোগ করা সময়ে মাঠে নামেন দিবালা। নেমেই গোলের দেখা পান তিনি। যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে ইতালির ডি-বক্সে জটলা বাধে। মেসির পা থেকে বল ছুটে যায় ইতালির রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের বাধায়। কিন্তু বল পেয়ে যোন দিবালা। বাঁ পায়ের কোনোকুনি শটে দলের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন কিছুদিন আগেই জুভেন্টাস ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া আর্জেন্টাইন এই ফরোয়ার্ড।
আরও বড় ব্যবধানে জিততে পারতো আর্জেন্টিনা। কিন্তু তাদের অনেক আক্রমণ বিফলে গেছে। ২৮তম মিনিটে দি পলের পাস থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের ভেতরে ডান পায়ে শট নেন মেসি। দোন্নারুমা ঝাঁপিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে নেন। ৬০তম মিনিটে অবিশ্বাস্য দক্ষতায় নিজেদের জাল রক্ষা করার দোন্নারুমা। নিজেদের অর্ধ থেকে ওতামেন্দি লম্বা করে বল বাড়ান। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে গিয়ে ডি-বক্সের বাইরে বাঁকানো শট নেন। উড়ন্ত বলাকার মতো ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে বাঁচান দোন্নারুমা।