আন্তর্জাতিক ম্যাচ নেই এক যুগ, সবজির চাষ হয় বগুড়া স্টেডিয়ামে
২০০৬ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই তারিখে কি ঘটেছিল তা কারও মনে না পড়লেও এদিনটি ভুলবেন না বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ও দলের জয়-পরাজয় মনে রাখা হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী। বাশারের অধিনায়কত্বেই শ্রীলঙ্কার মতো তৎকালীন পরাশক্তির বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। খেলার ভেন্যু ছিল নতুন যাত্রা শুরু করা বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম।
সেদিন শ্রীলঙ্কার ২১২ রানের জবাবে মোহাম্মদ আশরাফুল ও আফতাব আহমেদের দাপুটে ব্যাটিংয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় বাংলাদেশ দল।
স্মৃতির পাতায় জ্বলজ্বল করা সেই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের কথা এখন অনেকেই ভুলতে বসেছে। কারণ গত ১৩ বছরে কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচের মুখ দেখেনি এই স্টেডিয়ামটি।
প্রথম ম্যাচ জয়ের ১৪দিন আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাট বলের লড়াই শুরু হয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে বগুড়া জেলা স্টেডিয়ামকে তখন রুপান্তরিত করা হয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। আইসিসির নির্দেশনা মেনে দেয়া হয় সব সুযোগ সুবিধা। তবে, এত আয়োজন, এত কিছু আটকে যায় ওই এক বছরেই। ৫ ডিসেম্বর সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় এই মাঠে। এরপর অনেক চেষ্টা করেও বগুড়াবাসী দেখা পায়নি রঙিন পোশাকের।
প্রেসবক্স, ভিআইপি গ্যালারি এমনকি ক্রিকেটারদের ড্রেসিং রুমের অবস্থা এখন যাচ্ছেতাই। গ্যালারির একপ্রান্তে শাক-সবজির চাষ করছেন পরিচর্যায় থাকা কর্মীরা। ঘরোয়া লিগের কিছু খেলার কারণে মাঠটির নিয়মিত পরিচর্যা থাকলেও ভিআইপি গ্যালারির চেয়ার ভাঙা, নেই অধিকাংশ কক্ষের কাঁচও।
শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের বড় শঙ্কার জায়গা নিরাপত্তা। চারপাশে গড়ে উঠেছে প্রচুর বাড়িঘর। অনেকেই যাতায়াতের রাস্তা বানিয়েছেন স্টেডিয়াম চত্বরকে। হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে আসার পথটিও সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে বাড়িঘর আর দোকানপাটের কারণে। আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আর সেই অর্থে কোন পরিবেশই নেই এখানে।
বগুড়ার সাবেক ক্রিকেটার ও প্রবীণ ক্রিকেট সংগঠক শহীদুল ইসলাম অবশ্য এখনও আশাবাদী।
তিনি বলছেন, কিছু ব্যয় করলেই আবারো আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফিরিয়ে আনা সম্ভব এখানে। গ্যালারী ঠিক করতে হবে। করতে হবে কিছু সংস্কার।
বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বারের সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। এই স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের জন্য যে বাধা বিপত্তি আছে, তা জানেন তিনি।
তার মতে, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সময়, সেখানে বিমানবন্দরবিহীন একটি শহরে কেন খেলা হবে, সে নিয়েও সন্দিহান মিলন।
তাই সবকিছু বিবেচনা করে তিনি বিসিবি ও সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, “যদি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের চেহারা ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে তা করতে হবে দ্রুত, আরও ক্ষতি হওয়ার আগেই। আর তা যদি না হয়, তাহলে আবারও সেই পুরোনো জেলা স্টেডিয়াম হিসেবেই বগুড়াবাসীকে ফেরত দেয়া হোক যাতে সব ধরণের খেলাধুলা নির্বিঘ্নে আয়োজন সম্ভব হয়। কারণ ক্রিকেটের দিকে তাকাতে গিয়ে আর জায়গার অভাবে অন্য খেলাগুলো পিছিয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত।”
আইসিসির গুডবুকেও অবশ্য নাম নেই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের। ২০০৭ সালেই একদল প্রতিনিধি পরিদর্শনে এসে, এটিকে ‘ডি গ্রেড’ এর স্টেডিয়ামে নামিয়ে দিয়ে গেছেন। তারপর কেটে গেছে এক যুগ। এই লম্বা সময়েও যখন কোন অগ্রগতি হয়নি, তাহলে অগ্রগতি আদৌ হবে কি না, সেই শঙ্কাও কেবল বাড়ছে বগুড়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।