দক্ষিণ সিটিতে এডিস মশা বেশি; ঝুঁকিতে উত্তরের গুলশান-বনানী
১৫ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচী পালন করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে নাম লিখিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে ‘পরিচ্ছন্ন’ এ সিটি করপোরেশনেই এডিস মশার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে। এর আগে মার্চে পরিচালিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘প্রি-মুনসুন’ জরিপেও দক্ষিণে এডিস মশার উপস্থিতি বেশি ছিল।
মশার ঘনত্বের মাত্রা পরিমাপের জন্য ১৮ থেকে ২৭ জুলাই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডের ১০০টি এলাকায় জরিপ চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ বলছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৯ শতাংশ এলাকায় এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৮ শতাংশ এলাকায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান ও বনানী এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২৫০ এর মতো পাওয়া গেছে। উত্তর সিটির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।
দক্ষিণ সিটির স্বামীবাগ এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি ৯০ মাত্রায় পাওয়া গেছে। সবুজবাগ এলাকায় ৮০ মাত্রায় লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
জরিপের সঙ্গে জড়িত জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. এম এম আক্তারুজ্জামান বলেন, লার্ভার মাত্রা ২০-এর বেশি হলে সেটিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের মাত্রা ২০ এর উপরে আছে। যা ডেঙ্গুর বিস্তারে সহায়ক। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে সিটি করপোরেশনগুলোকে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে।
জরিপে দেখা যায়, সবেচেয়ে বেশি লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে পরিত্যক্ত টায়ারে। পরিত্যাক্ত টায়ারে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনের জমে থাকা পানিতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, ড্রামের পানিতে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, পানির ট্যাংক ও প্লাস্টিক বাকেটে ৪.৮৪ শতাংশ, পেইন্ট পটে (টিন/প্লাস্টিক) ৩.৫৫%, ফুলের টব ও মাটির পাত্রে ৩.৮৭%, প্লাস্টিকের বদনা/মগে ২.৯০% মশার উপিস্থিতি পাওয়া গেছে।
এর আগে মার্চে পরিচালিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রি-মুনসুন জরিপে দেখা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ শতাংশ এবং উত্তর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২১ শতাংশ এলাকায় এডিস মশার লার্ভা ছিলো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. সানিয়া তাহমিনা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “বয়স্ক মশা ও এডিস মশার লার্ভার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। এছাড়া কোন এলাকায় মশার লার্ভা কম বা না থাকলেও ডেঙ্গু রোগী থাকবেনা তা নয়। মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করে, সেহেতু যে এলাকাগুলোতে মশার ঘণত্ব কম, সে এলাকাতেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। সে কারণে ডেঙ্গুর সোর্স মশা নিধনে জোর দিতে হবে।”
ঢাকা শহরে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়লেও শহরের কোন এলাকায় রোগীর সংখ্যা বেশি সে বিষয়ে সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। তবে শিশু হাসপাতালের তথ্য বলছে দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গু রোগী বেশি।
শিশু হাসপাতালের এপিডেমোলজিস্ট কিঙ্কর ঘোষ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, “ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় ঢাকার সব এলাকা থেকে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে রোগীদের তথ্য বিবেচনা করা দেখা গেছে, ফার্মগেট, ওয়ারী, মোহাম্মদপুরসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু রোগী বেশি।”
ঢাকায় এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৯,০৮১ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১,০৫৩ জন।
এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি ১,৮৭০ জন
প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৭,৩৬৯ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১,৮৭০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকায় ১,০৫৩ ও ঢাকার বাইরে ৮১৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, এ বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৪,৮০৪ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৮ জন। তবে বেসরকারি তথ্য বলছে মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ৬০।