বাংলাদেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতেই আওয়ামী লীগের জন্ম: শেখ হাসিনা
১৯৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে নবাবদের পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার যে সমাপ্তি ঘটেছিলো তা ফিরিয়ে আনতেই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই সংগঠনটি সারা বাংলাদেশে সুসংগঠিত ছিলো। সত্তরের নির্বাচনে তার নেতৃত্বেই আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ জয় পায় এবং ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সূর্য উদিত হয়।”
রোববার (২৩ জুন) আওয়ামীলীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দলীয় কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। যার ফলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মিত্র বাহিনীর কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে দখলদার শোষকবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় আমাদের দেশ।”
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের সকল গণতান্ত্রিক লড়াই সংগ্রামে সমানে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামীলীগ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতিকে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছে এই সংগঠনটি।
আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক এবং কারাবন্দি তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন যুগ্ম সম্পাদক।
১৯৫২ সালে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছরই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাকে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ১৩ বছর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অবিচল থাকার প্রয়াসে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। ফলে সংগঠনের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার সংগ্রামের পর দলটি ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে কার্যক্রম শুরু করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদল সেনা অফিসারের হাতে নির্মমভাবে খুন হবার পর একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর গুলি করে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট চার সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামানকে।
বঙ্গবন্ধু ও জাতীর চার নেতাকে হত্যার পর সামরিক সরকারের শাসনামলে দমনপীড়নের মুখে ও মতের ভিন্নতায় বিভক্ত হয়ে পড়ে সংগঠনটি। ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে পিতার হাতে গড়া বিভক্ত দলকে পুনরায় সংগঠিত করে সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর থেকে ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিজয় লাভের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফেরে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার-দলীয় ঐক্যজোটের কাছে হেরে যাবার পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয় লাভের মাধ্যমে পুনরায় সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ।
আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে যে গৌরব হারিয়ে গিয়েছিলো তা পুনরুদ্ধার করছে তার সরকার।
দেশের মানুষের ‘অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে’ আওয়ামীলীগের যেসব কর্মী, সমর্থক ও নেতারা আত্মত্যাগ করেছেন বক্তব্যে তাদের কথাও স্মরণ করেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবং পরবর্তীতে দলীয় প্রধান হিসেবে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি। জাতির জনকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় সেখানে নীরবতা পালন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। এরপর জাতীয় পতাকা ও আওয়ামীলীগের দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন ওড়ানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।