‘তড়িঘড়ি করে প্রিয়া সাহার বিরুদ্ধে মামলা না করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দেয়া প্রিয়া সাহার বক্তব্যের পর শনিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রদ্রোহের’ অভিযোগ এনে বলেছিলেন, ‘অসত্য’ তথ্য উপস্থাপন করায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তার একদিন পর প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলছেন, তড়িঘড়ি করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাদের লিডার, গতরাতে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, সেটা হচ্ছে- ‘এখানে তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। প্রিয়া সাহা যা বলেছেন, ‘শি শুড মেইক এ পাবলিক স্টেটমেন্ট’। তিনি আসলে কি বলেছেন, কি বলতে চেয়েছেন তার একটি পাবলিক স্টেটমেন্ট করা উচিত, তারও আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ থাকা উচিত। তার আগে কোনো প্রকার মামলা বা আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন।”
অভিযোগের বিষয়ে প্রিয়া সাহার বক্তব্য জানার আগে তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার কথা নিষেধ করে কাদের বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আজ একটা মামলা করার কথা ছিল, তাকে আমি জানিয়েছি এ ধরণের মামলার প্রসিডিং শুরু না করতে এবং আইনমন্ত্রীর সাথেও এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। এছাড়া প্রিয়া সাহার ব্যক্তিগত বাড়িঘর সম্পদ, সেখানে যাতে প্রটেকিটিভ মেজার থাকে, যথার্থ নিরাপত্তা থাকে সে স্টেপ নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মেসেজ জানিয়ে দিয়েছি।”
প্রিয়া সাহার দেশে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, “সে তার দেশে আসবে না কেন। দেশের আসার অধিকার তার আছে, দেশে আসার পথে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছি না বা কোনো লিগ্যাল প্রসিডিউরও শুরু করছি না। আমার মনে হয় তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেশে আসতে পারেন, সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া বা বাধা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।”
দেশে ফিরে আসলেই ট্রাম্পের কাছে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রিয়া সাহার কাছে জানতে চাওয়া হবে বলে জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী।
“এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, উসকানিমূলক এবং অসত্য, কাল্পনিক বক্তব্য। তিনি কেন দিলেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, তিনি দেশে ফিরে আসুক তার কাছে জানতে চাইব, উদ্দেশ্য কি, মোটিভটা কি।এটা তো তার থেকে আমাদের পাবলিক স্টেটমেন্টটা জানা উচিত, আসার পরই কোন স্টেপ নেয়ার বিষয়ে ভাবা যাবে।”
ট্রাম্পের কাছে কি বলেছেন প্রিয়া সাহা?
যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মত আয়োজিত ‘ধর্মীয় স্বাধীনতায় অগ্রগতি’ শীর্ষক তিন দিনের একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা দেখা করে নিজ নিজ দেশের সমস্যার কথা জানান। সেখানেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানান বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহা।
ট্রাম্পের কাছে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মৌলবাদীদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। প্রায় ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। এখনও সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু মানুষ আছে। আমার অনুরোধ, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা দেশ ছাড়তে চাই না। তারা আমার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আমার জমি কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু বিচার হয়নি।”
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানতে চেয়েছিলেন- কারা তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, জমি কেড়ে নিয়েছে।
জবাবে প্রিয়া বলেন, তারা মুসলিম মৌলবাদী, তারা সব সময় রাজনৈতিক আশ্রয় পাচ্ছে।
ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাতের ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যপক আলোচনা সমালোচনা তৈরি হয়। বাংলাদেশ সরকারও বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
কে এই প্রিয়া সাহা?
প্রিয়া সাহা বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক।
তিনি ‘শারি’ নামে বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায় নিয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত। প্রিয়া সাহা ‘দলিত কণ্ঠ’ নামে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক।
পিরোজপুরের মেয়ে প্রিয়া সাহার স্বামী মলয় কুমার সাহা দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে পড়াশোনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। থাকতেন রোকেয়া হলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।
তিনি ‘মহিলা ঐক্য পরিষদ’এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
‘বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে গতবছর তাকে মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক সংগঠন ‘হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন’র কর্মকর্তা জয় ক্যানসারার উদ্যোগে প্রিয়া সাহা যুক্তরাষ্ট্রে ওই সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছেন।