আইদা মুলুনের আলোকচিত্র: আফ্রিকান আত্মপরিচয়ের রূপকধর্মী জাদু
ইথিওপিয়ান আলোকচিত্রী আইদা মুলুনের তোলা ছবিতে প্রথমেই আপনার চোখ যাবে রঙে। মূলত আফ্রিকান নারীদের প্রতিকৃতিই তোলেন তিনি। সেইসব ছবিতে সাবধানী চোখে লাল, নীল ও হলুদ রঙের নিগূঢ় খেলা ধরা পড়ে।
ক্যারিয়ারের শুরুতে সাদাকালো ছবি তুলতেই ভালোবাসতেন মুলুনে। এক পর্যায়ে নিজস্ব ভাবনা থেকে শুরু করেন রঙিন আলোকচিত্র। তবে শুধু রঙের ওপর ভর দিয়েই তার ভিজুয়াল স্টাইল ধরতে চাওয়া ঠিক হবে না। বরং ছবির রহস্য উদ্ধারে কম্পোজিশনের গভীরেও দিতে হবে মন।
তার ছবির 'সাবজেক্ট' বা মডেলরা সব সময়ই অনবদ্য শৈলীর অংশ হয়ে ওঠে। আফ্রিকার ট্র্যাডিশনাল বডি আর্ট থেকে প্রেরণা নিয়ে নারীদের মুখ ও শরীরে গাঢ় লাল কিংবা ধবধবে সাদা রঙ মেখে নেন তিনি; তারপর পোশাকের সঙ্গে রঙের বৈপরিত্য ফুটিয়ে তোলেন।
রূপকধর্মী আলোকচিত্র তোলায় ইতোমধ্যেই খ্যাতি লাভ করেছেন ৪৬ বছর বয়সী এই শিল্পী। আইডিয়ার বিকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'এ একেবারেই সহজাত ব্যাপার। তবে আপনাকে এর প্রকাশ ঘটানোর বেলায় উদারমনা হতে হবে।... ছবির ফ্রেমের ভেতর স্বয়ং আমি বসবাস করি। তাই আমার কোনো অভিজ্ঞতা, ভাবনা কিংবা প্রশ্ন ফুটে ওঠে ছবিতে।'
'দুনিয়ার নানা জায়গায় বসবাস করি বলে মানুষ প্রসঙ্গে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে এর একটা প্রভাব পড়ে,' বলেন মুলুনে। তার জন্ম ১৯৭৪ সালে। অল্প বয়সে নিজ দেশ ইথিওপিয়া ছেড়ে ইয়েমেন ও ইংল্যান্ডে জীবন কাটান তিনি। তারপর ভর্তি হন সাইপ্রাসের একটি আবাসিক স্কুলে। পরিশেষে পাড়ি জমান কানাডায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক পাস করে তিনি একজন আলোকচিত্র সাংবাদিক হয়ে ওঠেন।
২০০৭ সালে ইথিওপিয়ায় ফিরে যান মুলুনে, নিজ দেশের হয়েই কাজ করার স্বপ্ন নিয়ে। "দেশে ফেরাটা ছিল আমার সব সময়ের এজেন্ডা। 'তোমাকে তোমার দেশের জন্য কাজ করতে হবে,' মা এ কথা সব সময়ই বলতেন।"
'নিজের সংস্কৃতিকে নতুন করে জানার জন্য দেশে ফেরা অর্থবহ। অভিবাসী হিসেবে আবাসিক স্কুলে বেড়ে ওঠলেও আমাদের বাড়িতে নিজ সংস্কৃতির চর্চা অবশ্য ছিলই,' বলেন তিনি।
দেশে ফেরাকে একটি 'শিক্ষামূলক প্রক্রিয়া' হিসেবে উল্লেখ করেন মুলুনে। এরপর থেকে নিজের তোলা ছবিতে আফ্রিকার ঐতিহ্য ও ইতিহাসের উপাদানগুলোকে নৈতিকতার তুলিতে নিজের মতো ফুটিয়ে তুলতে শুরু করেন।
'আমার ছবির মূল ব্যাপার হলো, নিজ কাজে ইথিওপিয়ান শিঁকড়কে আমি অস্বীকার করতে পারি না,' বলেন এই আলোকচিত্রী।
- সূত্র: দ্য ন্যাশনাল