আজীবন মানুষের খাবার ছিল না মুরগি
বর্তমানে সারা বিশ্বে দুই হাজার কোটিরও উপরে মোরগ-মুরগি রয়েছে। এবং এদের অধিকাংশের জন্মই হয়েছে শুধু খাবার হয়ে মানুষের পেটে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, রোস্ট বা স্টেক; কোনো খাবারে পরিণত করার জন্য কিন্তু এই ক্ষীণকায় প্রাণীটিকে পোষ মানায়নি মানুষ।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লারসন বলেন, "সব ধরণের প্রমাণাদিই বলছে, দীর্ঘদিন মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেছে মোরগ-মুরগি, যখন তারা খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি।"
বর্তমানে প্রোটিন চাহিদা পূরণে শূকরের পরই আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে মুরগি। অচিরে শূকরকেও ছাড়িয়ে যাবে তারা।
কিন্তু শিল্প পর্যায়ে মুরগি পালন শুরু হওয়ার আগে মানুষের খাবারের তালিকায় এতো উপরের দিকে ছিল না মুরগি। মনে করা হচ্ছে, হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজে তাদের প্রাথমিক ভূমিকা ছিল মোরগ লড়াই এবং এরকম অন্যান্য আচার -অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা।
ধারণা করা হয়, ৭ থেকে ১০ হাজার বছর আগে থেকে মুরগিকে পোষ মানানো শুরু করেছে মানুষ। ইসরায়েলের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে আসা প্রতিবেদনে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রায় ২,২০০ বছর আগে প্রথম এই পাখিকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় খাওয়া শুরু করে মানুষ।
গত দশকে অস্ট্রিয়ার একটি গ্রাম খনন করলে সেখানে মধ্যযুগীয় মানব সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে মধ্যে সেখানে বসবাস করেছে মানুষ।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা এই গ্রাম খনন করতে গিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, মানুষকে তাদের মোরগ-মুরগি এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে দাফন করা হয়েছে। পুরুষদের সঙ্গে মোরগ এবং মহিলাদের সঙ্গে মুরগি, এভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে দাফনকার্য। এবং উচ্চ মর্যাদার পুরুষদের সঙ্গে দাফন করা মোরগগুলি দরিদ্র পুরুষদের সঙ্গে দাফন করা মোরগদের চেয়ে বড় নখধারী ছিল।
সেখানকার মানুষ এবং মুরগিদের হাড়ের মধ্যে থাকা কার্বন এবং নাইট্রোজেন গবেষণা করে দেখা গেছে, তখন মানুষ ও মুরগি একরকম পরিবেশেই বসবাস করতো এবং একইরকম খাবার খেতো। স্পষ্টতই, মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক সহাবস্থান ছিল মোরগ-মুরগিদের।
ড. লারসন আরও বলেন, "আমরা মুরগি এবং অন্যান্য গৃহপালিত পশু-পাখির সঙ্গে যেভাবে যোগাযোগ করি তাতে গত ১৫ হাজার বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে।
"এই ব্যাপারটি বুঝলে আমরা জানতে পারবো আমাদের কী কী ছিল, এবং আমরা কী কী হারিয়েছি।"
- সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস