আগামী দশকগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ায় তাপদাহ আরও বাড়বে
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তাপদাহ বাড়বে বলে জানিয়েছে নতুন একটি গবেষণা। আসছে দশকগুলোতে বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়লেও তা মানুষের সহনশীলতার বাইরে চলে যাবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষকরা বলছেন, তাপদাহ বৃদ্ধি পেলে ভারতের উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গসহ অধিকাংশ ফসল উৎপাদনকারী স্থানই কাজের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। এমনকি, কলকাতা, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদের মতো কেন্দ্রীয় নগর এবং উপকূলীয় অঞ্চলগুলোও এই তীব্র তাপদাহ থেকে রেহাই পাবে না।
জিওগ্রাফিকাল রিসার্চ লেটারস সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণাটির তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতার পরিবর্তন দুই ডিগ্রী পর্যন্ত হলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার হবে প্রায় তিন গুণ বেশি। দক্ষিণ এশীয় জনপদের জন্য এই তাপমাত্রা মারাত্মক প্রাণঘাতী হতে পারে।
গবেষণাটির সহ-লেখক মুইতাসিম আশফাক জানান, "দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ ঝুঁকিপূর্ণ দেখা যাচ্ছে। তবে, উষ্ণতা বৃদ্ধি যতটুকু কমানো যায় ততটুকু কমানো গেলে সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়ার এই পরিবর্তন ভবিষ্যতে নয়, বরং আজই আনা জরুরি। এখন আর অন্য কোনো বিকল্প নেই।"
"এমনকি ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পরিবর্তনেও দক্ষিণ এশিয়ায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিণাম হবে ভয়াবহ। আর তাই গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের বর্তমান মাত্রায় আমূল পরিবর্তন আনা জরুরি," বলেন আশফাক।
গবেষণাটি পরিচালনায় গবেষকগণ বৈষ্ণিক উষ্ণতা দেড় থেকে দুই ডিগ্রী সেলসিয়াসের পরিবর্তনে দক্ষিণ এশিয়ার তীব্র তাপমাত্রার শিকার হবে এমন জনগোষ্ঠীর সংখ্যা হিসাব করতে কৃত্রিম জলবায়ু এবং অনুমিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিবেচনা করেন।
মানুষ কী ধরনের ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রার সম্মুখীন হবে সেই হিসাব করেন গবেষকরা। ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রা তাপ-সূচকের অনুরূপ। তবে এখানে তাপমাত্রার সাথে আর্দ্রতাও বিবেচনায় রাখা হয়।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ওয়েট বাল্ব তাপমাত্রায় কাজ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। অন্যদিকে, ওয়েট বাল্বের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রীর বেশি হলে মানুষের শরীর আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারবে না। ফলে, মানুষ মৃত্যুবরণও করতে পারে।
গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায়, দুই ডিগ্রী তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে যাবে, অন্যদিকে প্রাণঘাতী তাপমাত্রায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে ২.৭ গুণ।
শিল্প বিপ্লব শুরু হওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেলের সূত্র অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে তা ১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পরিণত হবে।
তাপমাত্রা মাত্র অর্ধেক ডিগ্রী বাড়লেই ঘটনাগুলোর উপর প্রভাব আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে বলে মন্তব্য করেন আশফাক।
বিজ্ঞানীদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থার সংকট রয়েছে। ৬০ শতাংশ মানুষ ঘরের বাইরে কৃষি কাজ করেন। ঘরের ভেতর অবস্থানের মাধ্যমে তারা এই তীব্র তাপদাহ থেকে বাঁচতে পারবেন না।
প্রাণঘাতী তাপদাহের ঝুঁকিতে থাকা দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যে তীব্র তাপমাত্রা এবং আর্দ্র গ্রীষ্মকালের মুখোমুখি হচ্ছেন। গবেষকদের মতে, দেশগুলোর জন্য পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য খুব অল্প সময় অবশিষ্ট আছে।
শরীরের উপর হিট স্ট্রেসের প্রভাব এবং তাপদাহ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে হলে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা সম্পন্ন কাঠামোভিত্তিক উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন চেন্নাইয়ের এসআরএম ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির আবহাওয়া বিজ্ঞানী টি. ভি. লক্ষ্মী কুমার।
- তথ্যসূত্র- হিন্দুস্তান টাইমস