ছবির গল্প: করোনায় বন্ধ স্কুল, কেনিয়ায় বেড়েছে কিশোরীদের গর্ভধারণ
জ্যাকলিন বসিবোরি যখন টের পেল সে অন্তঃসত্ত্বা, কান্না থামছিল না তার। ১৭ বছর বয়সী এই মাকে একাই বড় করতে হয় পরিবারের ছয়টি শিশু। এক রুমের বাড়িতে নিদারুণ জীবনযাপন তাদের। এমনিতেই খাবার জোটানো মুশকিল, সংসারে আরেকজনের জন্ম হলে কী করবে, ভেবে দিশেহারা ওই কিশোরী।
'স্কুল খোলা থাকলে এমন কাণ্ড ঘটত না,' জানায় আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখা বসিবোরি।
করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে বাড়িতেই থাকে সে। তার মা রাস্তার পাশে সবজি বিক্রি করেন। এ সময়ে ২০ বছর বয়সী এক তরুণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় বসিবোরি। কিন্তু সে অন্তঃসত্তা, এ তথ্য জানানোর পর থেকে তার প্রেমিক আর ফোন ধরছেন না!
পরিবারকে সাহায্য করতে অন্তঃসত্তাকালে কিবেরা বস্তিতে জামা-কাপড় ধোয়ার কাজ করতে হয়েছে বসিবোরিকে। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবির শহরতলিতেই রেললাইনের পাশে এই বস্তি। সেখানে টিনের চালের ঘর তুলে গাদাগাদি করে থাকে মানুষ।
কাছের একটি বাজার থেকে নিজের সন্তানের জন্য সেকেন্ড-হ্যান্ড পোশাক কিনেছে ওই কিশোরী।
বেসরকারি সংস্থাগুলোর স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রচারণার মধ্যেই, বৈশ্বিক লকডাউনে দুনিয়াজুড়ে অল্প বয়সীদের অন্তঃসত্তা হওয়ার হার বেড়েছে।
কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় শহর লদওয়ারে ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির (আইআরসি) সাহায্যকারী গ্রুপ জরিপ চালিয়ে দেখেছে, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কিশোরীদের অন্তঃসত্তা হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। আইআরসির তথ্যমতে, একই সময়কালে গড়ে ২২৬ কিশোরী অন্তঃসত্তা হলেও করোনাভাইরাস মহামারিকালে হয়েছে ৬২৫ জন।
অন্যদিকে, নিকটবর্তী কাকুমা শরণার্থী শিবিরে গত বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ১৫ কিশোরী অন্তঃসত্তা হলেও এ বছরের একই সময়ে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ জনে।
স্থানীয় এক ক্লিনিকে গিয়ে বসিবোরি জানতে পারে, তার আরেক সহপাঠীও অন্তঃসত্তা।
'কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের কেস আমরা অনেক বেশি পাচ্ছি,' জানান নার্স জয় আমবিয়ো।
তাছাড়া বহু অন্তঃসত্তা কিশোরীই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় না, এ তথ্যও জানিয়ে রাখেন তিনি।
'দেখুন, সামাজিকতার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক অন্তঃসত্তা নারীদের মতো স্বাস্থ্য সেবা অন্তঃসত্তা অল্প বয়সী মেয়েরা পায় না,' বলেন ইউনাইটেড ন্যাশনস পপুলেশন ফান্ডের কেনিয়া প্রতিনিধি আদেমোলা ওলাজিদে।
এ কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও অনিরাপদ গর্ভপাতের ঘটনা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের অকালমৃত্যুর প্রধান কারণ গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান।
বসিবোরিও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যায় পড়েছিল। চিকিৎসক তাকে সিজারিয়ান সেকশনে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেও সে ও তার মা প্রচলিত রেওয়াজের ওপরই ভরসা রেখেছে।
ভাগ্য ভালো, বসিবোরি ৩.৩ কেজি ওজনের একজন স্বাস্থ্যবতী কন্যা সন্তানের জন্ম দিতে পেরেছে।
'আমি খুব খুশি; উৎকণ্ঠা কেটে গেছে,' পরিবারের একমাত্র বিছানায় সদ্য জন্মানো মেয়েকে আদর করতে করতে বলছিল বসিবোরি।
কেনিয়ায় আগামী জানুয়ারিতে স্কুল খোলার কথা। তার আগ পর্যন্ত সারাক্ষণ সন্তানের লালন-পালন করেই সময় কাটাবে বলে জানিয়েছে ওই কিশোরী।
স্কুল খুললে শিশুটিকে সামলাবেন বসিবোরির মা। 'আমার মেয়েকে পড়ালেখা করতেই হবে,' জানালেন তিনি।
- আল জাজিরা থেকে অনুবাদ: রুদ্র আরিফ