তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় কোভিড ভ্যাকসিন: ঝুঁকির নতুন হিসেব-নিকেশ
তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় (ফেজ থ্রি ট্রায়াল) যত বেশি ভ্যাকসিন নাম লেখাচ্ছে, কোভিড-১৯-এর দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে তত বেশি ধারণা পাচ্ছেন গবেষকরা। তবে অনেক দেশেই সামাজিক দূরত্ব ঠিকঠাক মানা হচ্ছে না এবং প্রায় সব কিছু খুলে দেওয়ায় ঝুঁকির বিষয়টি যাচাই করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য।
খবরে ভ্যাকসিনের বেদম দৌড়
ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের প্রশ্নে দুটি বড় বিষয় সামনে এসে দাঁড়ায়। প্রথমত একটি কার্যকরী ও নিরাপদ ভ্যাকসিন বানাতে হয়। তারপর সেই ভ্যাকসিন কীভাবে ও কতটুকু কাজ করবে- সেটি ঠিকঠাক ব্যাখ্যা ও প্রচারের কৌশল অবলম্বন করতে হয়, যেন সেটির ওপর মানুষের যথেষ্ট আস্থা তৈরি হয়।
গত সাত দিনে পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রথম বিষয়টি নিয়ে প্রচুর খবর প্রকাশ পেয়েছে। নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, টিউবারকিউলোসিসের শতবর্ষ পুরনো ভ্যাকসিনের পক্ষে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। অবশ্য এজন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন এবং আগামি বছরের শুরুর দিক ছাড়া সেটি শেষ হবার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে, নভোভ্যাক্স ও জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষ থেকে আরও দুটি ভ্যাকসিন প্রবেশ করেছে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে। অন্যগুলোর সঙ্গে জনসন অ্যান্ড জনসন ভ্যাকসিনের পার্থক্য, এটিকে হিমায়িত রাখা আবশ্যক নয় এবং এটির মাত্র এক ডোজ গ্রহণ করলেই চলবে।
এদিকে, কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন পেলে, তা যেন সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য সহজলভ্য হয়, এ বিষয়ে বারবার জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে, বেশিরভাগ ভ্যাকসিনের উদ্ভাবন ধনী দেশগুলোতে হয়ে থাকে বলে সেগুলো গরিব দেশগুলোর জনগণের ওপর কার্যকরী হবে কি না, এ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে অনেকের।
আমেরিকানরা যদি কোনো ভ্যাকসিন পান, মানুষ কী করে জানবে সেটি নিরাপদ কি না? এ প্রশ্নও ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের। যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক নতুন জরিপে দেখা গেছে, আজকের দিনে কোনো কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সহজলভ্য হলে সেটি পাবেন বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের ৫১ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক লোক; অথচ মে মাসে এ হার ছিল ৭২ শতাংশ।
কোভিডের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব নিয়ে গবেষকদের জানাশোনা
মহামারির দিন যত গড়াচ্ছে, কোভিড-১৯-এর রহস্য তত ভালোভাবে বুঝতে পারছেন গবেষকরা। তবু এখনো অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে।
যেমন ধরুন, কোভিড কেন ঘ্রাণশক্তি নষ্ট করে দেয়, সে সম্পর্কে আমরা সামান্যই জানি। গবেষকরা জরিপ চালিয়ে এবং রোগীর ঘ্রাণশক্তির নানা রকম পরীক্ষা নিয়েও এই রহস্যের এখনো কিনারা করতে পারেননি।
অন্যদিকে, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন মানুষের গৃহবন্দি থাকার প্রভাব পড়েছে অন্যান্য প্রজাতির ওপর। নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্যান ফ্র্যান্সিস্কো বে এরিয়ার সাদা ঝুঁটিওয়ালা পুরুষ চড়ুই পাখিগুলোর কণ্ঠস্বর এপ্রিল-মে মাসে পাল্টে গেছে!
আগে এই পাখিগুলো যথেষ্ট উচ্চস্বরে, অনেকটা চিৎকারের মতো গান গাইত। এখন এরা বেশ কোমল স্বরে ডাকে।
মানুষের মধ্যে কী প্রভাব এই ভাইরাস ফেলে যায়, সেটি হয়তো সময়ই বলে দেবে।
ঝুঁকির হিসেব
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণহানির সংখ্যা সদ্যই ২ লাখ ছাড়িয়েছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। তবু মহামারিকালে বন্ধ থাকা দেশটির সবকিছু আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বিশ্বাসযোগ্য গাইডলাইনের অভাবে, করোনাভাইরাসে নতুন ঝুঁকির আশঙ্কা কেমন, সেটি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেতে ভুগছেন গবেষকরা।
অবশ্য, দুটি প্রযুক্তি সরঞ্জাম খানিকটা স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বুধবার গুগল ম্যাপ একটি কোভিড-১৯ আস্তরণের প্রকাশ ঘটিয়েছে। এ ক্ষেত্রে জনস হপকিন্স, নিউইয়র্ক টামইস ও উইকিপিডিয়ার তথ্য ব্যবহার করে দেখানো হয়েছে, কোন এলাকায় আক্রান্তের হার কেমন।
অন্যদিকে ইনস্টাগ্রামের যুগ্ম-প্রতিষ্ঠাতারা আরটি ডট লাইভ নামে একটি ওয়েবসাইট খুলেছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোন রাজ্যে কত দ্রুত ছড়াচ্ছে কোভিড-১৯, সেই গতিপথ দেওয়া রয়েছে।
- সূত্র: উইয়ার্ড ম্যাগাজিন