বিশ্বের শীর্ষ ৬ ধনী পরিবার
মহামারিতে বিশ্ব অর্থনীতি ধাক্কা খেলেও গত এক বছরে বিশ্বের শীর্ষ ২৫ ধনী পরিবারের সম্পদ বেড়েছে ২২ শতাংশ। সম্প্রতি শীর্ষ এই ধনী পরিবারগুলোর তালিকা প্রকাশ করেছে ব্লুমবার্গ। তালিকায় আছে বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের প্রতিষ্ঠাতা ওয়ালটন পরিবার থেকে শুরু করে সৌদি রাজ পরিবার ও ভারতের আম্বানি পরিবারের নাম।
কয়েক প্রজন্ম ধরে পারিবারিক ব্যবসার হাত ধরে সম্পদের পাহাড় গড়েছে পরিবারগুলো। শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বগতি এবং অনুকূল কর নীতির কারণে বাড়ছে তাদের সম্পদের পরিমাণ।
জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের শীর্ষ ছয় ধনী পরিবারের সম্পদের পরিমাণ ও পারিবারিক ইতিহাস।
১। ওয়ালটন পরিবার
প্রতিষ্ঠান: ওয়ালমার্ট
ব্যবসার ধরন: খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান
সম্পদের পরিমাণ: ২৩৮.২ বিলিয়ন ডলার
অবস্থান: বেন্টোভিল, আরকানসাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
প্রজন্ম সংখ্যা: ৩
আয়ের দিক থেকে ওয়ালমার্ট বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী ওয়ালমার্টের সাড়ে ১০ হাজারের বেশি দোকান রয়েছে। ওয়ালটন পরিবারের হাতে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ৪৮ শতাংশ মালিকানা।
সময়কাল:
১৯৪৫: ওয়ালমার্ট প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ওয়ালটন ওয়ালমার্টের প্রথম দোকান কিনেন।
১৯৯২: স্যামের মৃত্যুর পর তার ছেলে রব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হন।
২০২০: মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের প্রণোদনা হিসেবে ২.৮ বিলিয়ন ডলারের বিশেষ বোনাস দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
জানেন কী?
চলতি বছর ওয়ালটন পরিবারের সদস্যরা ৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছে।
২। মারস পরিবার
প্রতিষ্ঠান: মারস
ব্যবসার ধরন: কনফেকশনারি, পোষা প্রাণীর সামগ্রী
সম্পদের পরিমাণ: ১৪১.৯ বিলিয়ন ডলার
অবস্থান: ম্যাকলিন, ভার্জিনিয়া
প্রজন্ম সংখ্যা: ৫
মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯০২ সালে গুড়ের ক্যান্ডি বিক্রি শুরু করেন ফ্র্যাংক মারস। তার প্রতিষ্ঠান এমঅ্যান্ডএম, মিল্কি ওয়ে এবং স্নিকার বারের জন্য পরিচিতি লাভ করে। তবে, প্রতিষ্ঠানটির ৩৯.২ বিলিয়ন ডলার আয়ের অর্ধেকই আসে পোষা প্রাণীর বিভিন্ন সামগ্রী থেকে।
সময়কাল:
১৮৮৩: আমেরিকায় ফ্র্যাংক মারসের জন্ম হয়। ছোট থাকতে তিনি পোলিও আক্রান্ত হন। ফলে, যেতে পারেননি স্কুলে।
১৯৩২: ফ্র্যাংক মারসের ছেলে ফরেস্ট ই মারস সিনিয়র যুক্তরাজ্যে আসেন।
১৯৬৩: নেদারল্যান্ডসে চকলেট কারখানা খুলেন মারস।
জানেন কী?
মারস অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় লভ্যাংশের বড় অংশই পুনরায় ব্যবসায় বিনিয়োগ করে থাকে।
৩। কোখ পরিবার
প্রতিষ্ঠান: কোখ ইন্ডাস্ট্রিজ
ব্যবসার ধরন: শিল্প প্রতিষ্ঠান
সম্পদের পরিমাণ: ১২৪. ৪ বিলিয়ন ডলার
অবস্থান: ক্যানসাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
প্রজন্ম সংখ্যা: ৩
ফ্রেড কোখের জ্বালানি তেলের প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পান চার ভাই ফ্রেডরিখ, চার্লস, ডেভিড এবং উইলিয়াম। ভাইদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবাদের পর ৮০'র দশকের শুরুতে ফ্রেডরিখ ও উইলিয়াম পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে যান। এরপরই চার্লস ও ডেভিডের হাত ধরে প্রসার লাভ করে কোখ ইন্ডাস্ট্রিজ। বৃহৎ এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার। পারিবারিকভাবে প্রতিষ্ঠানের একটি অংশ এখনো কোখ পরিবারের অধীনে।
সময়কাল:
১৯৪০: উড রিভার অয়েল অ্যান্ড রিফাইনিং কোং সহ-প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রেড কোখ।
১৯৬১: চার্লস কোখ বাবার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হন।
২০১৭: চার্লস কোখের ছেলে চেস কোখ বিনিয়োগকারী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান কোখ ডিসরাপটিভ টেকনোলজিস প্রতিষ্ঠা করেন।
জানেন কী?
কোখ ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-প্রতিষ্ঠান স্প্রিং ক্রিক ক্যাপিটাল ২০২১ সালে ২৫০টির বেশি অধিগ্রহণ সংস্থায় (এসপিএসি) বিনিয়োগ করে।
৪। হারমিজ পরিবার
প্রতিষ্ঠান: হারমিজ
ব্যবসার ধরন: বিলাসবহুল পণ্য
সম্পদের পরিমাণ: ১১১.৬ বিলিয়ন ডলার
অবস্থান: প্যারিস, ফ্রান্স
প্রজন্ম সংখ্যা: ৬
ছয় প্রজন্মের হারমিজ পরিবার বিলাসবহুল ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিখ্যাত। হারমিজের বারকিন হ্যান্ডব্যাগের দাম কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সময়কাল:
১৮৩৭: থিয়েরি হারমিজ অভিজাত পরিবারের সদস্যদের জন্য রাইডিং গিয়ার তৈরি শুরু করেন।
১৮৮০: প্যারিসে ব্যবস্থা স্থানান্তরিত হয়।
১৯০২: থিয়েরির নাতি এমিল মরিস হারমিজ এবং এডলফ হারমিজ প্রতিষ্ঠানের যৌথ চেয়ারম্যান হন।
১৯৫০: এমিলের মেয়ের জামাই রবার্ট দ্যুমা এবং জ্য রেনে গেরান্ড প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে বৈচিত্র্য নিয়ে আসেন।
১৯৭৮: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে দোকান।
২০১৪: অ্যাক্সেল দ্যুমা প্রতিষ্ঠানের সিইও হন।
৫। আল সৌদ পরিবার
প্রতিষ্ঠান: নির্দিষ্ট নয়
ব্যবসার ধরন: জ্বালানি তেল, ঠিকাদারি, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অংশীদারত্ব
সম্পদের পরিমাণ: ১০০ বিলিয়ন ডলার
অবস্থান: রিয়াদ, সৌদি আরব
প্রজন্ম সংখ্যা: ৩
সৌদি আরবের ৮৯ বছরের রাজতন্ত্রের অর্থের মূল উৎস দেশটির জ্বালানি তেল সম্পদ। পরিবারের সম্ভবত ১৫ হাজারের বেশি সদস্য এই সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। রাজ পরিবারের সদস্যরা সরকারি ঠিকাদারি ও জমিজমা সংক্রান্ত বাণিজ্য এবং সৌদি আরামকোর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হিসেবে বিপুল আয় করেন। শুধুমাত্র সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানই ব্যক্তিগতভাবে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক।
সময়কাল:
১৯০২: আধুনিক সৌদি আরবের জনক ইবন সৌদ তিন দশকের বিরোধ শেষে রিয়াদে পূর্বপুরুষের বাড়ির পুনর্দখল নেন।
১৯৭৫: ভাইপোর হাতে নিহত হন সৌদি বাদশাহ ফয়সাল।
২০১৯: বাজারে শেয়ার ছেড়ে মূলধন সংগ্রহে রেকর্ড গড়ে সৌদি আরামকো।
জানেন কী?
সেপ্টেম্বরে সৌদি যুবরাজ আলওয়ালিদ তার ফোর সিজনস হোটেল চেইনের মালিকানা অংশের প্রায় অর্ধেক বিল গেটসের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসকেডের কাছে ২.২ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করেন।
৬। আম্বানি পরিবার
প্রতিষ্ঠান: রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ
ব্যবসার ধরন: শিল্প-প্রতিষ্ঠান
সম্পদের পরিমাণ: ৯৩.৭ বিলিয়ন ডলার
অবস্থান: মুম্বাই, ভারত
প্রজন্ম সংখ্যা: ৩
মুকেশ আম্বানি এবং অনিল আম্বানির বাবা ধীরুভাই আম্বানির হাতে ১৯৫০-এর দশকে শুরু হয় রিলায়েন্সের যাত্রা। ২০০২ সালে ধীরুভাই আম্বানি সম্পদ বণ্টন না করেই মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী দুই ভাইয়ের মধ্যে পারিবারিক সম্পদ ভাগ করে দেন। মুকেশ বর্তমানে মুম্বাইভিত্তিক ব্যবসার দায়িত্বে আছেন। বিশ্বের বৃহত্তম তেল পরিশোধন কারখানার মালিকানা তার প্রতিষ্ঠানের হাতে। মুকেশ আম্বানির মুম্বাইয়ের ২৭ তালার বাসভবন বিশ্বের সবথেকে ব্যয়বহুল ব্যক্তিগত বাড়ি।
সময়কাল:
১৯৫৭: ইয়েমেন থেকে ভারতে ফিরেন ধীরুভাই আম্বানি। মুম্বাইয়ের ছোট একটি অফিস থেকে সুতার কারবার শুরু করেন তিনি।
১৯৭৭: রিলায়েন্সের বোর্ডে যোগ দেন মুকেশ আম্বানি।
২০১৯: অনিল আম্বানির দীর্ঘদিনের বকেয়া শোধ করে তাকে কারাবরণের হাত থেকে রক্ষা করেন মুকেশ আম্বানি
জানেন কী?
গত বছর কেকেআর, সিলভার লেক এবং অন্যান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলার উত্তোলন করে প্রযুক্তি খাতে ব্যয় করে রিলায়েন্স। জ্বালানি থেকে বর্তমানে প্রযুক্তিখাতের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ