মহাসমুদ্রের স্মৃতিতেও আছে সার্স কোভ-২
মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনে অনেক স্মৃতি জমা থাকে যা পরবর্তী সময়ে জীবনের চলার পথে মানুষকে দৃঢ়তা দেয়।
তবে মানুষই একমাত্র জীব নয়- যাদের স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতা আছে। উদ্ভিদ থেকে শুরু করে অণুজীব পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের প্রাণির স্মৃতি সংরক্ষণের ক্ষমতা থাকার প্রমাণ আছে, যদিও তাদের সকলেরই স্নায়বিক মস্তিষ্কের অভাব রয়েছে ।
সমুদ্রে বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন সময়ের বায়ুমন্ডলের তথ্য সংরক্ষিত আছে।
পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের সময়কার অনেক উপাদানের স্মৃতিও সংরক্ষিত আছে সমুদ্রতলে। বর্তমান পৃথিবীতে ভূপৃষ্ঠের তুলনায় সমুদ্রেই বেশি প্রাণির বসবাস। এসব প্রাণির জেনেটিক তথ্য হিসেবে তাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতি জমা আছে।
মানুষই একমাত্র প্রাণি নয়- যাদের দেহে ভাইরাস পরজীবি হিসেবে বাস করে। ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক প্রাণিই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। কিছু সংক্রমণ হতে পারে প্রাণঘাতী, কিছু আবার উপকারীও হয়। মানবদেহে প্ল্যাসেন্টার বিবর্তনের কৃতিত্ব যেমন প্রাচীন একটি রেট্রোভাইরাসের (প্ল্যাসেন্টার আবরণী দেয়াল রেট্রোভাইরাসের প্রোটিন দ্বারা গঠিত)।
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের উৎপত্তি, প্রকৃতি, বিবর্তন বুঝতে বিজ্ঞানীরা সমুদ্র ও সমুদ্রে সঞ্চিত অনেক স্মৃতির সংযোগ খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
আরএনএ ভাইরাস:
বর্তমান মহামারির জন্য দায়ী করোনাভাইরাস একটি আরএনএ ভাইরাস। সম্প্রতি জিন ভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া গেছে, সকল আরএনএ ভাইরাসের পূর্বপুরুষ মূলত একই ভাইরাস, এই ভাইরাসটি বিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন বাহকের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে আসার আগে সমুদ্রে ছিল।
ভূপৃষ্ঠে প্রথম কখন এই করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হয় এবং প্রথম বাহক কারা ছিল? প্রথম প্রশ্নটির ব্যাপারে কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। ধারণা করা হয়, আজ থেকে ১০ হাজার - ৩০০ মিলিয়ন পুর্বের সময়কালের মধ্যে আবির্ভাব হয়েছিল। বাহক কোষে বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক আরএনএ পলিমারের জিন সিকোয়েন্স এর মাধ্যমে; কিভাবে ভাইরাসটি পোষক দেহে বিবর্তিত হয় এবং সহস্রাধিক বছর টিকে আছে, এসব তথ্য জানা গেছে। বারবার পোষক দেহ পরিবর্তন করে বিবর্তন হওয়া এই ভাইরাসটির জন্য খুবই সাধারণ ব্যাপার।
এই ভাইরাসটি প্রতিলিপি তৈরির সময় কিছু ত্রুটির কারণে অভিযোজিত হয়। যার ফলে এতে জিনগত পরিবর্তন আসে, বাহকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। এছাড়াও, এতে ভাইরাসটি বিবর্তনের সুবিধা লাভ করে ও নতুন প্রজাতির প্রানীদেহে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা লাভ করে।
সমুদ্রে আরএনএ ভাইরাসের অন্যতম বাহক অ্যালগি, ফাইটোপ্লাঙ্কটন আর প্রোটিস্ট। পোষক দেহে বংশবিস্তারের সময় ভাইরাসের মিউটেশনের সম্ভাবনা ০.০১-০.১ শতাংশ, যা কিনা ডিএনএ ভাইরাসের তুলনায় হাজার গুণ বেশি। প্রথমদিককার আরএনএ ভাইরাসের সমুদ্রের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারটি আমাদেরকে বর্তমান করোনাভাইরাসের প্রকৃতি বুঝতে সাহায্য সাহায্য করবে।
বর্তমানে মানব শরীরেও ভাইরাসটি ধীরে ধীরে তার প্রকৃতি পরিবর্তন করছে।
বর্তমানে মানুষের উপর ভাইরাসটির প্রভাব অত্যন্ত বিধ্বংসী। মানুষের সম্মিলিত অবহেলার কারণেই অবস্থা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। আর ভাইরাসটি আবারো তার বিবর্তনের চেষ্টায় আছে।
- সূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান
- অনুবাদ: রাফিয়া তামান্না