যে কারণে করোনায় আক্রান্ত হলে ভুগতে পারেন ব্যাক পেইনে
গত ১০ ডিসেম্বর আমেরিকান টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব এলেন ডিজেনারস ঘোষণা দেন, তিনি কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত। ৬২ বছর বয়সী এই টকশো উপস্থাপিকা টুইটারে পোস্ট করা একটি নতুন ভিডিওতে তার অনুভূতি নিয়ে তরতাজা এক সংবাদ দিয়েছেন।
ভিডিওতে এলেন বলেন, 'সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ। আমি আপনাদের শুভকামনার মর্ম খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। আমি এখন শতভাগ সুস্থ। আমার সত্যিই ভালো লাগছে।'
সুস্থ হতে পেরে খুশি হলেও এলেন বলেন, করোনাভাইরাসের 'বিশেষ করে একটি লক্ষণ খুবই অপ্রত্যাশিত। একটা বিষয় তারা (বিশেষজ্ঞরা) আপনাকে বলে না, যা আপনাকে ভোগাতে পারে; আমি ব্যাক পেইনের কথা বলছি।'
এলেন জানান, তিনি জানতেন না কীভাবে ব্যাক পেইন কোভিড-১৯-এর একটি লক্ষণ হতে পারে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ব্যাক পেইনকে করোনার একটি লক্ষণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে না, তবে পেশি ব্যথা ও শরীর ব্যথাকে এ হিসেবে দেখে। তাই আপনি যদি ব্যাক পেইন অনুভব করেন, তাহলে কি কোভিড-১৯ হয়েছে বলে ধরে নেবেন? সেটি অনিবার্য নয়।
করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে করা ফেসবুকের গ্রুপ সাইভাইভার কর্পস এবং ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের পিএইচডি নাটালি ল্যামবার্ট পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-১৯ থেকে উদ্ধার পাওয়া লোকেরা এখনো দীর্ঘমেয়াদী লক্ষণ বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন। রিপোর্ট পাওয়া গেছে, পিঠের নিচ, উপর এবং মধ্যভাগে ব্যথা অনুভব করেন তারা।
কোভিড-১৯-এর কারণে ব্যাক পেইনকে সাধারণ পেশীতে ব্যথার দলে রাখা হয়, যা এটিকে সিডিসি'র একটি লক্ষণ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে চীনে কোভিডের-১৯-এর প্রায় ৫৬ হাজার ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, প্রায় ১৫ শতাংশ রোগী পেশীতে ব্যথা অনুভব করেছেন।
আমেরিকান অর্থোপেডিক সার্জন এবং ভিভ ওয়্যারের প্রতিষ্ঠাতা মার্কাস ডুডা বলেন, 'অন্যান্য ভাইরাসের মতো কোভিড-১৯ও দেহে উপসর্গ সৃষ্টি করবে। ফ্লু হওয়ার মতো, কোভিড-১৯ সারা শরীর জুড়ে ব্যথার কারণ হতে পারে।'
ড. ডুডা আরও বলেন, 'যখন আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, আপনার শরীর একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নির্ধারণ করে- যা লড়াই করে সেইসবের বিরুদ্ধে, যা আপনার শরীরে থাকার কথা নয়, যেমন ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস।'
এই ভাইরাসের প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়ার কারণে পিঠ ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। এই ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে শরীরে কম্পন, ঠাণ্ডা লাগা, শরীরে ব্যথা এবং চলাফেরায় জড়তা তৈরি হয়।
সংক্রামক রোগ চিকিৎসক এবং উত্তর-পূর্ব ওহাইও মেডিকেল ইউনিভার্সিটির অভ্যন্তরীণ মেডিসিনের অধ্যাপক রিচার্ড ওয়াটকিন্স বলেন, পেশী ব্যথা হচ্ছে সেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কোষের ফলাফল, যেটি আক্রমণাত্মক জীবাণু বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সাহায্য করে।
ড. ডুডা বলেন, 'জ্বর, শুষ্ক কাশি, স্বাদ বা গন্ধহীনতা, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা বা অন্যান্য স্থানে ব্যথা কোভিড-১৯-এর লক্ষণ হতে পারে।'
এ ধরনের ব্যাকপেইন 'পিঠের পেশীতে ক্র্যাম্পিং বা ব্যথার মতো' বলে অভিহীত করে তিনি আরও বলেন, 'কোভিড-১৯ একটু আলাদা; কারণ এটি ফুসফুস এবং মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি করে। এই কারণে যারা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারা ভাইরাসটি থেকে মুক্তি পাবার পর, মাসের পর মাস মাথা ব্যথায় ভুগতে পারেন এবং এজন্য করোনা থেকে সুস্থ হওয়া কিছু মানুষের মাঝে অক্সিজেন বা ভেন্টিলেটরি সাপোর্টের প্রয়োজন হয়।'
ড. ওয়াটকিন্স বলেন, 'সাধারণত কোভিড-১৯-এর ফলে যে ব্যথা আপনি অনুভব করেন, তা অন্য ব্যথার চেয়ে অনেক আলাদা।'
কাজের চাপে যে ধরনের ব্যথা হয়, সেটি কয়েক ঘণ্টা পরে চলে যায়; কিন্তু কোভিড-১৯-এর ফলে সৃষ্ট ব্যথা দিনের পর দিন টিকে থাকতে পারে বলে অভিমত তার।
যদি আপনার ব্যাক পেইন কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী এবং সময়ের সঙ্গে আরও তীব্র হয়ে ওঠে, অথবা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যদি অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস পায় কিংবা অস্থিরতা বাড়তে থাকে, তাহলে সঠিক রোগ নির্ণয় করার জন্য ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন।
সূত্র: প্রিভেনশন ডটকম