২০ হাজার বগি আইসোলেশন ওয়ার্ডে রূপান্তর করছে ভারতীয় রেলওয়ে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ মার্চ প্রথম দেশজুড়ে টানা ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেন। এই সময় ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন এক ঘোষণায় আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাদের যাত্রী পরিবহন সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।
এই ঘোষণার ফলে ১৬৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম এশিয়ার প্রাচীনতম রেলওয়ে নেটওয়ার্কটি বন্ধ রয়েছে।
তবে করোনাভাইরাসের জাতীয় দুর্যোগে ভারতীয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে নেই, বন্ধের মাঝেই তারা ২০ হাজার পুরানো রেলওয়ে ক্যারেজ বা বগিকে ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার উদ্দেশ্যে 'আইসোলেশন' ওয়ার্ডে রূপান্তর করছে।
দেশটিতে ভাইরাসে সংক্রমিতদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই উদ্যোগের গতিও বেড়েছে।
ভারতীয় রেলওয়ে- বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ রেল সংযোগ পরিচালক এবং দেশটির সবচেয়ে বড় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি সমগ্র ভারতজুড়ে ১২৫টি নিজস্ব হাসপাতাল পরিচালনা করে। তাই ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল শয্যা পরিচালনার সক্ষমতা প্রতিষ্ঠানটির আছে নিঃসন্দেহে।
এই পদক্ষেপ এখন আরও বেশি জরুরি, কারণ গত পহেলা এপিলেই ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ২৮৮ জন ছাড়িয়ে যায়। এখন পর্যন্ত এতে মারা গেছেন ১১৭ জন, জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র এই সংখ্যা জানায়। ১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশে এই হার এখনও খুব কম।
হাসপাতালগুলোও রোগীর চাপে নাজেহাল অবস্থায় পড়েনি। এরপরও সাবধানতার মার নেই, এমন ভাবনা থেকেই দূরদর্শী এবং সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির রেল কর্তৃপক্ষ। আগামীদিনে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়লে এই ট্রেনগুলো হাসপাতালের ওপর বাড়তি চাপ কমাবে।
ভারতের রেলওয়ে মন্ত্রী পীযুষ গয়াল এক টুইট বার্তায় বলেন, এখন থেকে রেলওয়ে পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ হওয়ার মতো পরিবেশ দিয়ে সহায়তা করবে।
ভারতীয় রেল নেটওয়ার্কের বিশালতা :
বিশ্ব মহামারির আগে প্রতিদিন ২০ হাজার যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতো ভারতীয় রেলওয়ে। দূরপাল্লা থেকে শুরু করে নানা মহানগরের মাঝে প্রায় ৭ হাজার ৩৪৯টি স্টেশন থেকে এসব ট্রেন ছাড়ত।
লকডাউনের ফলে ভারত জুড়ে মোট ৬৭ হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার রেলপথ এখন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এটা একত্র করলে তা দিয়ে বিষুবরেখা বরাবর পুরো পৃথিবীকে দেড়বার ঘিরে ফেলা যাবে। বেকার পড়ে আছে হাজার হাজার যাত্রীবাহী ট্রেন, শুধুমাত্র মালবাহী ট্রেনগুলোই চলাচল করছে।
এই অবস্থায় ভারতের ১৬টি রেলওয়ে জোন প্রধানদের এক বিশেষ নির্দেশনায় এয়ারকন্ডিশন ব্যবস্থা নেই এবং অব্যবহৃত এমন রেলওয়ে ক্যারেজ (বগি) চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসব বগিকেই হাসপাতালে রুপ দেওয়ার কাজ এখন চলছে। জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষনিকভাবে ব্যবহার করা যায় এমন সকল প্রস্তুতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার ব্যবস্থা করাও হয়েছে।
'প্রথমদফায় ৫ হাজার বগিকে প্রায় রাতারাতি আইসোলেশন ওয়ার্ডে রুপ দেওয়া হচ্ছে। দরকার হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরও বহু বগিকে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।' জানিয়েছেন ভারতীয় রেলওয়ের তথ্য ও প্রচার বিষয়ক পরিচালক রাজেশ দত্ত বাজপাই।
প্রতিটি বগিতে ১৬ জন করে রোগী স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবেন। নার্সদের জন্য থাকবে স্বতন্ত্র থাকার জায়গা। এছাড়াও থাকবে চিকিৎসকের জন্য একটি কেবিন। প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র এবং যন্ত্রপাতি মজুদ থাকবে।
সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এই বিশেষ ট্রেনগুলো তৈরি হওয়ার পর সারা ভারতের যেখানে প্রয়োজন সেখানেই বা নিকটবর্তী রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে হাজির হতে পারবে। রেলওয়ের নিজস্ব ডাক্তারের পাশাপাশি যে অঞ্চল থেকে রোগী নেওয়া হবে, সেখানকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষও রোগীদের দেখভাল করার জন্য ট্রেনে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স বা স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে পারবেন।