জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে কি টিকে থাকতে পারবে ক্রিকেট?
ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, বলা হয়ে থাকে- এ অঞ্চলে গ্রীষ্মের প্রখর রোদের মধ্যে যদি বৃষ্টি চান, তাহলে ক্রিকেট ম্যাচ শুরু করে দিন! কিন্তু এই নির্জলা হাস্যরসের বাইরে বাস্তবেও রয়েছে এক কঠিন সত্য, যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। ২০১৮ সালের এক জলবায়ু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহিরাঙ্গণে খোলা মাঠে বা পিচের মধ্যে যত ধরনের খেলা হয়, তার মধ্যে ক্রিকেটই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ফুটবলের পর ক্রিকেটকে ধরা হয় বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা। এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ক্রিকেটের দুই থেকে তিন বিলিয়ন ভক্ত রয়েছে। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দেশগুলোতে ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব দেশেই প্রচণ্ড গরম, বন্যা, খরা, ঘুর্ণিঝড়, দাবানল এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার মতো দুর্যোগগুলো বেশি।
অন্যদিকে সম্প্রতি ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতেও প্রায়ই তাপপ্রবাহের কারণে উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে এবং দীর্ঘদিন রয়ে যাচ্ছে তার প্রভাব। উষ্ণ বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে, ফলে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এযাবতকালের ২১টি উষ্ণতম বছরের ২০টিই ২০০০ সালের পর থেকে রেকর্ড করা হয়েছে।
এবছর ভারতীয় উপমহাদেশে গত এক শতকের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বসন্ত এবং ব্রিটেনে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন পার করেছে ক্রিকেট। গত জুনে পাকিস্তানের মুলতানে তিনটি ম্যাচ খেলতে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেসময় দেশটিতে তাপমাত্রা ছিল ১১১ ডিগ্রি ফারেনহাইট, যা বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থানগুলোর একটির গড় তাপমাত্রার চেয়েও বেশি।
"সত্যি বলতে, ওখানে যাওয়ামাত্র আপনার মনে হবে একটা ওভেনের ভেতর ঢুকে গেছেন", বলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার আকিল হোসেন (২৯)। সেদিন খেলার মাঝে বিরতির সময় আকিল ও তার সতীর্থরা আইস ভেস্ট গায়ে দিয়ে বসে ছিলেন!
কিন্তু ক্রিকেটারদের জন্য গরমই একমাত্র উদ্বেগের কারণ নয়। বেসবলের মতো প্রায় একইভাবে ক্রিকেটেও পিচের মধ্যে খেলতে হয় এবং ব্যাটিং করতে হয়, তাই বৃষ্টি নামলে ক্রিকেট খেলা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। গত জুলাইয়েই বৃষ্টিপাত ও মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডমিনিকায় একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয়েছে এবং গায়ানা ও ত্রিনিদাদে অন্য ম্যাচগুলো সংক্ষিপ্ত করতে হয়েছে। ২০১৭ সালে পঞ্চম মাত্রার দুটি ঝড়ে (ইরমা ও মারিয়া) ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ক্রিকেট স্টেডিয়ামগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাধারণত টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচগুলো পাঁচ দিনব্যাপী চলে। এমনকি ওয়ানডে ম্যাচও সাত ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে চলে। জুলাইয়ের ২২ তারিখে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোতে সকাল সাড়ে নয়টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম ভারতের ম্যাচের শুরুতে বৃষ্টি হলেও, অন্যদিকে কুইন'স পার্ক ওভালে খেলোড়দের তখনো আট ঘণ্টা কড়া রোদের মধ্যে খেলা চালিয়ে নিতে যুদ্ধ করতে হয়েছে!
ক্রিকেট ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ২০১৯ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন পেশাদার ব্যাটসম্যান একদিন সারাদিন ক্রিকেট খেলার ফলে তার শরীরে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা একটি ম্যারাথন দৌড়ের সমান। একজন ম্যারাথন দৌড়বিদ যেখানে শর্টস-গেঞ্জি পরে দৌড়াতে পারে, সেখানে একজন ক্রিকেটারকে ট্রাউজার-জার্সির পাশাপাশি প্যাড, গ্লাভস এবং হেলমেটও পরতে হয়। ফলে উষ্ণ-আর্দ্র পরিবেশে তাদের শরীর থেকে সহজে ঘাম-তাপ বেরিয়ে যেতে পারে না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার ড্যারেন গঙ্গা (৪৩) খেলাধুলার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, "এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আবহাওয়াজনিত কারণে খেলোয়ারদের সফরের পরিকল্পনাগুলো বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সাথে বৃষ্টিপাত, ধোঁয়া, দূষণ, ধুলাবালি ও গরমের কারণে খেলার স্বাভাবিক সময়সূচিও ব্যহত হচ্ছে।"
গঙ্গা মনে করেন, "এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমার মনে হয় কিছু কিছু অঞ্চলে এই পরিস্থিতি চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। আমাদের এখন সুযোগ আছে অন্যান্য অঞ্চলে তা নিয়ন্ত্রণে আনার।"
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এখনো জাতিসংঘের ক্রীড়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো- ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ক্রীড়া সংস্থাগুলো তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্টের মাত্রা নেট-জিরোতে নামিয়ে আনবে এবং সাধারণ মানুষকে জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানাবে। অস্ট্রেলিয়া ইতোমধ্যেই কিছু হিট-গাইডলাইন তৈরি করেছে এবং খেলার মাঝে পানি পান করার জন্য বিরতির সংখ্যা বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ায় খেলার জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে এরকম কোনো নীতি নির্ধারণ করা হয়নি। এ বিষয়ে আইসিসিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
২০১৯ সালের একটি জলবায়ু প্রতিবেদনে পরামর্শ দেওয়া হয়- প্রচণ্ড গরমে খেলোয়াড়দের ট্রাউজারের বদলে শর্টস পরার অনুমতি দেওয়া উচিত, যা আসলে একটি সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার! কিন্তু এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের গতানুগতিক নীতির সঙ্গে ঠিক খাপ খায়নি। আবার কিছু খেলোয়াড় দাবি করেছেন, গরমে তাদের পা খোলা থাকলে তা রোদে পুড়ে যায় এবং মাঠে ব্যাট-বল নিয়ে দৌড়-ঝাঁপের সময় ঘষা লেগে আরো বেশি আহত হতে পারেন। ভারতের ৩২ বছর বয়সী ক্রিকেটার যুজবেন্দ্র চাহাল বলেন, "আমার দুই হাঁটুর অবস্থাই বেশ করুণ!"
কিন্তু ক্রিকেটের অন্দরে এবং বাইরে, সর্বত্রই আলোচনা হচ্ছে- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া এবং বিভিন্ন ফরম্যাটের খেলার টানা-ক্লান্তিকর সময়সূচির মধ্য দিয়ে ক্রিকেট টিকে থাকতে পারবে কি?
ইংরেজ ক্রিকেটার বেন স্টোকস গত ১৯ জুলাই ওয়ান-ডে ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তার ভাষ্য ছিল-"আমরা গাড়ি নই যে পেট্রোল ভরে দিলেন, আর চলতে শুরু করলাম।"
কাকতালীয়ভাবে, বেন স্টোকসের অবসরের ঘোষণা এমন একটি সময়ে এসেছে যখন ব্রিটেন তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম দিন পার করেছে। এবারই প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠেছে। জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরকম তাপমাত্রাই এখন 'নিউ নরমাল' বা স্বাভাবিক তাপমাত্রা হয়ে উঠতে পারে।
প্রচণ্ড গরমের কারণে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা অঞ্চল ডারহামে অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের ম্যাচ। তবুও খেলোয়াড়দের শীতল রাখতে পানি পান করার জন্য বাড়তি বিরতি, আইস প্যাক আর সমুদ্রসৈকতের ধাঁচে খোলা ছাতার বহর তো ছিলই। তা সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার ম্যাথিউ পটস ক্লান্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার এডেন মারক্রাম মাথায় ও ঘাড়ে আইসব্যাগ চেপে রাখা অবস্থায় ক্যামেরাবন্দী হয়েছেন খেলার দিন; তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো হেভিওয়েট লড়ে এসেছেন এইমাত্র! এমনকি স্টেডিয়ামে প্রচণ্ড গরমে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন কিছু দর্শকও।
গত ৯ জুন ভারত সফরে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও পড়তে হয়েছিল এক চ্যালেঞ্জের মুখে, আর তা হলো নয়াদিল্লীর তীব্র গরম, আর্দ্রতা ও দূষণ। নয়াদিল্লীতে সন্ধ্যার ম্যাচের সময় তাপমাত্রা ছিল ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। পর্দা, চেয়ার এবং মিস্টিং ফ্যানের সঙ্গে প্লাস্টিকের পানির টিউব যুক্ত করে স্টেডিয়ামের এক পাশ কৃত্রিমভাবে ঠান্ডা রাখা হয়েছিল দর্শকদের জন্য।
ভারতীয় দলের অধিনায়কদের একজন, শিখর ধাওয়ান বলেন, "আমরা ভারতে এই গরমের সঙ্গে অভ্যস্ত। আমি গরমের দিকে বেশি মনোযোগ না দেওয়ার চেষ্টা করি, কারণ এটা নিয়ে বেশি ভাবলেই আরো বেশি গরম লাগবে।"
আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেই, ভারতে ক্রিকেটাররা বলিউড তারকাদের মতোই জনপ্রিয়। তাই এই উত্তপ্ত কক্ষে বন্দী থাকার মতো অবস্থায়ও সেদিন নয়াদিল্লীতে ম্যাচে দর্শকের সংখ্যা ছিল ৩০ হাজার। কোভিড মহামারির পর প্রথমবারের মতো নিজের বাবাকে নিয়ে স্টেডিয়ামে আসা সাক্ষাম মেহন্দিরাত্তার (১৭) ভাষ্যে, "গরমকে কে পাত্তা দেয়? ম্যাচ দেখছি এটাই সবচেয়ে আনন্দের!" এদিকে কিছুক্ষণ দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখার পর তার বাবা নরেশ বলে উঠেন- "এই ব্যাটিংই তো আমাকে ঠান্ডা করে দিয়েছে!"
২০১৫ সালে ভারত সফরে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার ৮ ক্রিকেটার এবং কোচিং ও সহযোগী স্টাফদের দুজনকে অসুস্থ হয়ে চেন্নাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যে, ফুড পয়জনিং ও তীব্র গরমে পর্যুদস্ত হয়ে তাদের এই হাল হয়েছিল।
পূর্বের বাজে অভিজ্ঞতার কারণেই এবার আর কোনো ঝুঁকি নিতে চায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা দল। সাম্প্রতিক সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা টিমের ফিজিওথেরাপিস্ট ক্রেইগ গোভেন্ডার খেলোয়াড়দের পা ঠান্ডা রাখতে বাতাসভর্তি টিউব, ইলেকট্রোলাইট ক্যাপসুল, বরফ ও ম্যাগনেসিয়াম মেশানো ড্রিংক এবং কাঁধ-মুখ ও পিঠে ব্যবহারের জন্য আইস টাওয়েল নিয়ে এসেছেন সঙ্গে করে।
শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়দের ইউনিফর্মও এমনভাবে তৈরি ছিল যাতে হাঁটু, বগলের নিচে পোশাকের সেলাইয়ের ফাঁক দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে। অনুশীলনের আগে ও পরে খেলোয়াড়দের ওজন মাপা হয়েছে এবং পানিশূন্যতা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে ক্রিকেটারদের মূত্রের রঙ পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে নিয়মিত।
২০১৭ সালে নয়াদিল্লীতে একটি ম্যাচ খেলতে এসে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটারদের এত বেশি বায়ু দূষণের মধ্যে পড়তে হয়েছিল যে, তারা মাস্ক পরে ছিলেন এবং ড্রেসিংরুমে অক্সিজেন ক্যানিস্টার দেওয়া ছিল। কোনো কোনো খেলোয়াড় মাঠে বমিও করেছিলেন। ২০১৮ সালে সিডনিতে পাঁচদিনের অ্যাশেজ টেস্ট চলাকালীন এক ম্যাচে ইংলিশ ক্যাপ্টেন জো রুট পানিশূন্যতা ও প্রচণ্ড গরমের ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল।
জো রুটের এই ঘটনার পর ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটারস- এর প্রধান, টনি আইরিশ প্রশ্ন তুলেছিলেন, "একজন খেলোয়াড় অসুস্থ হয়ে মাঠে পড়ে গেছে... তার মানে কতটা ভয়াবহ অবস্থা ছিল সেখানে?"
২০১৮ সালে কেপটাউনে খেলার সময় ভারতের খেলোয়াড়রদের বলা হয়েছিল, দুই মিনিটের মধ্যে গোসল সারতে, কারণ সেসময় কেপটাউনে প্রচণ্ড খরা চলছিল। ২০১৯ সালে দাবানলের কারণে সিডনির বাতাস এত বেশি ধোঁয়ায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল যে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড় স্টিভ ও' কিফ বলেছিলেন, তার মনে হচ্ছিলো প্রতিদিন ৮০টি সিগারেটের ধোঁয়া নিচ্ছেন নিজের ভেতরে!
ব্যাটিং ও বোলিং কৌশল থেকে শুরু করে কীটপতঙ্গ, ছত্রাকজনিত রোগ-জীবাণুর আক্রমণ নিয়ে গ্রাউন্ডসকিপারদের উদ্বেগ- ক্রিকেটের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে। এমনকি ক্রিকেটের পরম পূজনীয় লর্ডসের মাঠেও ড্রেসকোডের গতানুগতিক নিয়ম ভাঙতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ের প্রচণ্ড গরমে ক্রিকেটারদের আর জ্যাকেট পরার নিয়ম নেই এখন।
সাসটেইনেবিলিটি ম্যানেজার রাসেল সিম্যুর গত বছর একটি জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন, "ক্রীড়াবিদদের এখন এমন পরিবেশ মোকাবিলা করতে বলা হচ্ছে যা মানুষের শরীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য অনেক বেশি প্রতিকূল হয়ে উঠেছে। খেলার প্রতি আমাদের ভালোবাসা এক অর্থে নিষ্ঠুরতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।"
তবে সত্যি বলতে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য কিছু কিছু পদক্ষেপ অবশ্য নেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো ম্যাচের সময়সূচি বদলে দেওয়া হচ্ছে ক্রিকেটারদের সুবিধার্থে। দেশে ক্রিকেট ক্লাবগুলোর ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর একটি উদ্যোগ নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলের অধিনায়ক কামিনস। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড পুরোটাই বায়ুশক্তিচালিত বিদ্যুতের ওপর চলে। ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করে এমন একটি রুল জারি করেছে যে, সুপেয় পানির বদলে বর্জ্য হিসেবে আসা পানি ক্রিকেট মাঠে সেচ দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হবে। আইপিএলের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জারস ব্যাঙ্গালোরের খেলোয়াড়রা পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে কয়েকটি ম্যাচে সবুজ ইউনিফর্ম পরে নেমেছিলেন।
তবে ক্রিকেট বিশ্বের কারো কারো মতে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেখানে মৌলিক চাহিদা পূরণ করতেই নিত্য সংগ্রাম করতে হয়, সেখানে জলবায়ু পরিবর্তনই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে না। ভারত-পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে- যেখানে ক্রিকেট সবচেয়ে জনপ্রিয়, এই দেশগুলো আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে কম দায়ী। যেহেতু ধনী দেশগুলো কার্বন নির্গমনে সবার চেয়ে এগিয়ে, তাই এই বিপদ কমাতেও তাদেরই সবার আগে এগিয়ে আসা উচিত।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের মুখপাত্র ডারিও বার্থলের ভাষ্যে, "যুক্তরাষ্ট্রে মানুষজন যেখানে ব্যক্তিগত বিমানে চলাচল করে, সেখানে আমাদেরকে তারা বলে প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার না করতে!"
- নিউইয়র্ক টাইমস থেকে ভাষান্তর: খুশনূর বাশার জয়া