ক্লাব ড্রাইভ ৩: মার্সিডিজ বেঞ্জের মাওয়া রান
গুলশানে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে মোটমাট ১৫টি মার্সিডিজ বেঞ্জ দাঁড় করানো। সকাল তখন সাড়ে আটটা। একটু আড্ডা আর ফটো তোলার পরে গাড়ির মালিকেরা গাড়ি নিয়ে মাওয়ার দিকে রওনা দিলেন।
বহরের সামনে খন্দকার মানদুদ আহমেদের ক্লাসিক মার্সিডিজ বেঞ্জ ডব্লিউ১২৩ ই ক্লাস গাড়িটি। এরপরে নতুন জেনারেশনের সেডান ও ক্যুপেগুলো। সবার পেছনে স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল (এসইউভি)-এর দল।
গত ৯ সেপ্টেম্বর মার্সিডিজ বেঞ্জ ক্লাব বাংলাদেশ তাদের তৃতীয় 'মাওয়া রান' উদযাপন করেছে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙা এক্সপ্রেসওয়েতে অনুষ্ঠিত এ রানের জন্য মুখিয়ে থাকেন দেশের মার্সিডিজ গাড়ির মালিকেরা।
শুক্রবার হলেও সেদিন রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি ছিল। প্রায় আধাঘণ্টা যানজট কাটিয়ে চলার পর বুড়িগঙ্গা পার হন সবাই। এরপর পোস্তগোলা টোল প্লাজার পরে সবগুলো গাড়ি আবার একত্রিত হয়। সেখান থেকে গাড়িগুলো সারি বেঁধে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাওয়ার পথে যাত্রা শুরু করে।
গাড়ির এ সারিটি কেবল স্রেফ একটা লাইন ছিল না। এটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয় বাংলাদেশে মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির টাইমলাইন। একদম শীর্ষে প্রাচীন ডব্লিউ১২৩ মডেলের গাড়িগুলো নেতৃত্ব দিয়েছিল ই এবং এস ক্লাস গাড়িগুলোর। আর শেষে ছিল ভবিষ্যতের গাড়ি, পুরোদস্তুর বৈদ্যুতিক এমবি ইকিউসি ৪০০।
মাওয়া থানার পরে গাড়ির মালিকেরা পদ্মা সেতুর নিচে অফরোডে চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কর্দমাক্ত, উঁচুনিচু ও অস্থায়ী সড়কটিতে ক্লাসিক ও এসইউভিগুলোর খুব একটা অসুবিধা হয়নি। কিন্তু অন্য প্রিমিয়াম মডেলগুলো নিয়মিত সড়ক ধরেই ফেরিঘাটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।
২০ মিনিট যাত্রার পর গাড়িগুলো শখের হাঁড়ি নামক একটি রেস্তোরাঁয় যাত্রাবিরতি করল। এখান থেকে কয়েকজন ফিরে গেলেন। যারা সকাল ৭টায় ঢাকায় একত্রিত হতে পারেননি, তারা অন্যদের সঙ্গে এখানে এসে একত্রিত হলেন।
শখের হাঁড়ি রেস্তোরাঁ'র খোলা পার্কিং লট আছে। যেকোনো গাড়ির মেলা বসানোর জন্য আদর্শ জায়গা।
এই মিলনমেলায় বেশকিছু দুর্দান্ত গাড়ির দেখা পাওয়া গেল। ডব্লিউ১২৩ মডেলের দুইটি গাড়িকে নতুন করে সাজিয়েছেন তাদের মালিকেরা। সেগুলোর ইঞ্জিনও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আরও ছিল একটি সি২০০ ক্যাব্রিওলে, একটি জি ভাগেন, একটি ২০১৮ মার্সিডিজ বেঞ্জ এস ক্লাস, ও একটি অত্যাধুনিক মার্সিডিজ বেঞ্জ ইকিইসি ৪০০।
প্রায় ১০০ বছরের বেশি পুরনো ব্র্যান্ড মার্সিডিজ বেঞ্জ। বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাণে বৈশ্বিক বাজারে বেঞ্চমার্ক স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করেছে এটি।
২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে মার্সিডিজ বেঞ্জ ক্লাব বাংলাদেশ। দেশের গাড়িবিষয়ক অল্পসংখ্যক সক্রিয় ক্লাবগুলোর একটি এটি। বাংলাদেশের মার্সিডিজ বেঞ্জ মালিক ও সমঝদারদের এক ছাতার তলে আনতে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও ড্রাইভের আয়োজন করে এটি। মার্সিডিজ বেঞ্জ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও আছে এ ক্লাবের।
'এটা আমাদের তৃতীয় বার্ষিক মাওয়া রান, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড়টা,' বলেন ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা খন্দকার মানদুদ আহমেদ। 'বাংলাদেশে গত এক দশকে প্রিমিয়াম গাড়ির দৃশ্যপট বহুলাংশে পরিবর্তিত হয়েছে। বছরের ব্যবধানে অনেক মালিক এ ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ২০১৯ সালে দেশে মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির সর্ববৃহৎ সম্মিলেনর আয়োজন করি আমরা। হেরিটেজ মিট নামক ওই অনুষ্ঠানে ৭৫টির বেশি গাড়ি অংশগ্রহণ করেছিল। জার্মান রাষ্ট্রদূত আমাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন।'
ইলিশ না খেলে মাওয়া ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই ক্লাবের সদস্যরা দিনের মাঝামাঝিতে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ইলিশ মাছ ও বেগুন ভাজা খাওয়ার পর সবাই পার্কিং লটে এসে নিজেদের একটি দলগত ছবি তুললেন। এরপর ফিরতি যাত্রা শুরু হলো।
একে অপরকে বিদায়ী সম্ভাষণ জানানোর পর গাড়িগুলো চিরচেনা শহরের পথে ফের যাত্রা শুরু করল।
যেসব চমৎকার গাড়ির দেখা পাওয়া গেল
মাওয়া রান-এ অংশ নেওয়া বিলাসবহুল গাড়িগুলোর মধ্যে কয়েকটি দুর্দান্ত মডেল ছিল। সেগুলো হলো মার্সিডিজ বেঞ্জ জি ভাগেন জি৬৩, মার্সিডিজ বেঞ্জ ইকিউসি ৪০০, মার্সিডিজ বেঞ্জ ডব্লিউ১২৩ ই ক্লাস, ও মার্সিডিজ বেঞ্জ সি২০০ ক্যাব্রিওলে।