সন্তান ও নাতিপুতিরাও পাবে আপনার ব্যায়ামের সুফল, বলছে গবেষণা
ব্যায়াম শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু আপনি ব্যায়াম করলে তার সুফল পাবে আপনার সন্তান ও নাতি-নাতনিরাও?
নতুন একটি গবেষণা এমন ইঙ্গিতই দিয়েছে। ইঁদুরের ওপর করা ওই গবেষণার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আমরা যদি বর্তমানে ব্যায়াম করি, তাহলে তার ইতিবাচক প্রভাব আমাদের শরীরের কোষে নিহিত হয়ে পরবর্তীসময়ে সন্তান ও তাদের সন্তানদের মধ্যেও প্রবাহিত হতে পারে।
গবেষণাটি দেখা গেছে, গর্ভকালীন সময়ে ও তার আগে স্ত্রী ইঁদুরের ব্যায়াম এগুলোর ছানা ও তাদের ছানাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব রেখেছে।
এটুকু পড়ে আপনার হয়তো মনে হচ্ছে ইঁদুরের ওপর করা গবেষণা মানুষের সঙ্গে মিলবে কীভাবে। তবে এক প্রজন্মের জীবনযাপনের রীতি পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রভাব ফেলে তা বৈজ্ঞানিকভাবে 'বেশ ভালোভাবেই স্বীকৃত' বলে জানিয়েছেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ও বর্তমান গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক লরি গুডিয়ার।
লরি বলেন, পশুপাখি ও মানুষের ওপর করা বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অপুষ্টিতে ভোগা মা-বাবা- যারা ডায়াবেটিস, স্থূলতা, ও অন্যান্য বিপাকসংক্রান্ত সমস্যায় ভোগেন- তারা প্রায়ই এ কন্ডিশনগুলো তাদের অপত্যদের মধ্যে পরিবহণ করেন।
তবে এর বিপরীত দৃশ্যপটটি সামনে এনেছেন গুডিয়ার ও অন্যান্য গবেষকেরা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ঠিক একইভাবে মা-বাবা ব্যায়াম করলে তার সুফলগুলো লাভ করেন তাদের সন্তান ও পরবর্তীসময়ে নাতিপুতিরা।
তাদের গবেষণা অনুযায়ী, যেসব স্ত্রী ইঁদুর গর্ভধারণের আগে ও পরে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছিল, সেগুলোর ছানাদের স্থূলতা ও ডায়াবেটিস হওয়ার মাত্রা কিছুটা কম ছিল। এমনকি এ ছানাগুলোকে উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খাওয়ানো হলে বা এগুলো কোনো ব্যায়াম না করলেও মা ইঁদুরের শারীরিক কসরতের সুফল পেয়েছিল এগুলো।
২০১৮ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, মা ব্যায়াম না করলেও শারীরিক মিলনের আগে কেবল বাবা ব্যায়াম করলে সন্তানদের বিপাকীয় ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।
গুডিয়ার ও তার সহকর্মীদের করা গবেষণাটি গত জুলাই মাসে 'মলিকিউলার মেটাবলিজম' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণায় ব্যায়ামের জন্য তারা স্ত্রী ইঁদুরকে চাকার ওপর দৌড়ানোর ব্যবস্থা করেন।
তবে এ ধরনের গবেষণা মানুষের ওপর করা সম্ভব নয়। কারণ এতে কয়েক দশক সময় লাগবে এবং মানুষের জীবনযাপনের ওপর নিষ্ঠুর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। এছাড়া বর্তমান গবেষণায় পুরো প্রক্রিয়াটির পেছনের জৈবিক কারণগুলোও অনুসন্ধান করা হয়নি।
লরি গুডিয়ারের তথ্যমতে, মানুষের বিপাকীয় ও শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়ার অনেকগুলো দিকের সঙ্গে ইঁদুরের ব্যায়ামের মিল রয়েছে। সেদিক থেকে এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল একইসঙ্গে বাস্তবিক ও মর্মভেদী।
তবে গুডিয়ার স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এ গবেষণায় কোনো সম্ভাব্য মা-বাবা, যারা ব্যায়াম করেন না বা করতে পারেন না, তাদের সমালোচসা করা হয়নি।
সূত্র: দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট